তামিম নিজে 'পান্তাভাত', মাশরাফি-মুশফিকরাও তাই

কাল ফেসবুকে দারুণ আড্ডা জমিয়েছেন জাতীয় দলের চার সিনিয়র ক্রিকেটার। ছবি: তামিম ইকবালের ফেসবুক পেজ
কাল ফেসবুকে দারুণ আড্ডা জমিয়েছেন জাতীয় দলের চার সিনিয়র ক্রিকেটার। ছবি: তামিম ইকবালের ফেসবুক পেজ

২২ গজে দুর্দান্ত ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে বিনোদিত করার সুযোগ এই মুহূর্তে তাঁদের নেই। তবে করোনার এই অবরুদ্ধ দিনে দারুণ বিনোদিত করেছেন বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটাররা। তামিম ইকবাল হাজির হয়েছেন অন্যরূপে। তাঁর সাবলীল, মুগ্ধ করা উপস্থাপনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে মানুষের জীবনে।

২ মে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম লাইভ আড্ডা দিয়ে তামিমের শুরু। কাল মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে আড্ডা দিয়ে জমজমাট এই 'সিরিজ'টা শেষ করলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক। মাঝে ওয়াসিম আকরাম, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ফাফ ডু প্লেসি, কেন উইলিয়ামসনের মতো বড় বড় ক্রিকেট তারকাকে এনেছেন তাঁর অনুষ্ঠানে। এনেছেন আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীন, হাবিবুল বাশার, খালেদ মাহমুদ, খালেদ মাসুদ, নাঈমুর রহমান, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, নাসির হোসেন, তাইজুল ইসলামের মতো সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদেরও।
মাঝে প্রায় টানা বিদেশি বড় ক্রিকেট তারকাদের সঙ্গে আড্ডা শেষে আবার নিজের প্রিয় সতীর্থদের কাছে ফিরেছেন তামিম। স্বভাবসুলভ রসিকতায় মাশরাফি তাই তামিমের কাছে জানতে চাইলেন, 'কদিন ধরে পোলাও-বিরিয়ান-কোরমা খেয়ে তোর কেন পান্তা ভাত খাওয়ার ইচ্ছে হলো বলতো ভাই?
তামিমের উত্তর, 'আমি পান্তাভাত নিয়েই খুশি। আমি নিজেও পান্তাভাত। আপনারাও পান্তাভাত। আমি এটি নিয়েই খুশি, আমার কোনো সমস্যা নেই।'

এই মাসে হওয়া তামিমের বেশিরভাগ লাইভ আড্ডা হয়েছে এক ঘণ্টা কিংবা আধঘণ্টার। কিন্তু কালকের সমাপণী অনুষ্ঠান হলো প্রায় দুই ঘণ্টা। লম্বা এই আড্ডায় নানা রসিকতা, মজায় জমিয়ে রাখলেন চার তারকা ক্রিকেটার। মুশফিক কেন শব্দ করে গায়ে ক্রিম মাখেন, পরিপাটি হয়ে থাকেন; কেন তাঁর প্রিয় রং গোলাপি, মাশরাফির কেন লাল রংয়ের প্রতি এত দুর্বলতা, নানা প্রসঙ্গ এল এ আড্ডায়।
আড্ডায় মাশরাফির দুটো অনুরোধ থাকল মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর কাছে। মুশফিককে মাশরাফির অনুরোধ, 'তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে। জীবনে অনেক অনুরোধই রেখেছ। যদি পারো এটাও রেখো। এবার তো হচ্ছে নিশ্চিত (সন্তান), ইনশাআল্লাহ। ভাতিজা আসছে, আশা করি। এর নামটা লকডাউন রাখতে হবে।' তিনজন যখন হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছেন তখন মাহমুদউল্লাহকে মাশরাফির অনুরোধ, 'আর রিয়াদ তোরটার নাম (কদিন আগে পৃথিবীতে আসা) রাখছি লকওপেন!'
গত ছয় বছরে বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা এসেছে ফিটনেসে। ফিটনেস ঠিক রাখতে খাদ্যাভ্যাস ভীষণ পরিবর্তন এনেছেন খেলোয়াড়েরা। ছুটির মধ্যে বাড়িতে থাকলেও তাঁরা কঠোরভাবে মানবেন খাদ্যাভাস। এড়িয়ে চলবেন প্রিয় খাবার। কাল তামিম যখন বললেন, ধরুন, সবাইকে বলা হলো এক দিন সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত যা ইচ্ছে খেতে পারবেন। কে কী খাবেন?

মুশফিক: খিচুড়ি খুব পছন্দ করি। ওটা খেতে চাইতাম। ডেজার্ট খুব বেশি না। আইসক্রিম অনেক পছন্দ। ইচ্ছেমতো আইসক্রিম খেতাম।
মাহমুদউল্লাহ: মিষ্টিজাতীয় যত খাবার আছে। গাজরের হালুয়া, আম্মা ও শ্বাশুড়ির হাতের পায়েস। মিষ্টিজাতীয় যেকোনো খাবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সব খাব, সব! তাইজুলের নাটোরের কাঁচাগোল্লাও খাব।

সবচেয়ে মজার অংশটা হলো মাশরাফির। তামিমকে উল্টো প্রশ্ন করলেন, 'এই বেটা আমি তো খাওয়ার মধ্যেই আছি। আমাকে প্রশ্ন কর, কী কী খাবেন না!'
পাশ থেকে মাহমুদউল্লাহ সাবধান করলেন, 'ম্যাশ, ডায়েটটা একটু ঠিক রাখেন।'
তামিমের প্রশ্ন, 'ভাত-গরুর মাংস চলছে?' মাহমুদউল্লাহর প্রশ্ন, 'ছোলা-ভাত-পিয়াজু এক সঙ্গে চলছে?' এবার মাশরাফির উত্তর, 'ঘোড়ার মতো চলছে!'

তামিমই জানালেন, বাংলাদেশ দল যখন বিদেশ সফরে যায়, সফরের একদিন খেলোয়াড়েরা নিজেদের মতো করে রান্না করে খান। এই রান্নার প্রধান শেপ একটা সময় ছিলেন ইমরুল কায়েস। এখন সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হন মুশফিক। ভালো রাধুনি হওয়ার রহস্যটা জানালেন মুশফিক, 'লম্বা সফর হলে অনেক সময় এক ঘেঁয়ে লাগে বাইরের খাবার খেতে খেতে। তবে তোকেও (তামিমকে) ধন্যবাদ দেব। একজন উদ্যোক্তা লাগে। তুই উদ্যোগ নিস। আয়োজন করিস। ...আমার স্ত্রী হোয়াটসআপে সব সব নির্দেশনা দেয়।'
অনুষ্ঠানটা এতটাই আনন্দময়, দুই ঘণ্টার পরও অনেক দর্শক আফসোস করেছেন, আরেকটু যদি লম্বা হতো! কিংবা তামিম যদি আরও কয়েকটা পর্ব করতেন! সামনে যদি এ ধরনের অনুষ্ঠান আবার করেনও, সেই অনুষ্ঠানের একটি নামও প্রস্তাব করেছেন মাহমুদউল্লাহ, 'জিলাপি উইথ তামিম।'