মুরুব্বিদের জন্য 'স্পেশাল' হোক এই ঈদ

মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: মাশরাফির ফেসবুক পেজ
মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে মাশরাফি বিন মুর্তজা। ছবি: মাশরাফির ফেসবুক পেজ

এবার ঈদটা অন্যবারের মতো নয়। করোনায় সব আনন্দ যেন কর্পূরের মতো উবে গেছে আগেই। খুশির আমেজ নেই, মানুষের মধ্যে বরং চাপা আতঙ্ক। বেশিরভাগ মানুষের লক্ষ্য, কোনোভাবে ঈদটা কাটিয়ে দেওয়া! এমন ঈদ আগে কি কখনো দেখা গেছে?

এই দুর্যোগে আনন্দ নেই ক্রিকেটারদেরও। খেলোয়াড়েরা যাঁরা ঢাকায় অবরুদ্ধ জীবন পার করছেন, তাঁরা ঢাকাতেই থাকছেন। কেউ কেউ লকডাউনের শুরুতেই চলে গেছেন নিজ নিজ বাড়ি। মাশরাফি বিন মুতর্জা যেহেতু সাংসদ, এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে মাঝে নড়াইলে তাঁকে যেতে হয়েছে। তবে তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকাতে অবরুদ্ধ থেকেছেন।


কাল তামিম ইকবালের ফেসবুক আড্ডায় মাশরাফি সবাইকে ঘরে থেকেই ঈদ করতে অনুরোধ করলেন, 'ঘরে থেকে ঈদ করার এটা একটা বড় সুযোগ। বাসায় যাঁরা মুরব্বি আছেন, ঈদের দিন সাধারণত তাঁদের সময় দেয় না তরুণ সমাজ। এবার তাদের ঈদ স্পেশাল করে তোলার দারুণ সুযোগ। তাঁরা যেন নিজেদের ছেলেবেলায় ফিরে যেতে পারে। বাইরে গেলে আমার মাধ্যমে পরিবারের অন্যদের (করোনা) হতে পারে। অনুরোধ করব, সবাই ঘরে থাকুন, এক সঙ্গে ঈদ করুন। বেঁচে থাকলে সামনের ঈদ আরও ভালো হবে।'

গতবার বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা ঈদ করেছিল লন্ডনে, এবার যাঁর যাঁর বাড়িতে করলেও সেই আনন্দটা ঠিক নেই। ফাইল ছবি
গতবার বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা ঈদ করেছিল লন্ডনে, এবার যাঁর যাঁর বাড়িতে করলেও সেই আনন্দটা ঠিক নেই। ফাইল ছবি

একই আড্ডায় মুশফিকুর রহিমও একই অনুরোধ করলেন ভক্তদের, 'এবার ঈদটা একটু অন্যরকম। যদিও আমরা এভাবে চাইনি। আমরা সবাই খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন ঈদটা পালন করতে পারি। বাসার সবাইকে সময় দেই, বাসাতেই থাকি।'


মুশফিক-মাহমুদউল্লাহদের ব্যক্তিগত গাড়ি থাকার পরও নিজ এলাকায় যাচ্ছেন না। স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা ঈদ করছেন ঢাকাতেই। মোস্তাফিজুর রহমান অবশ্য লকডাউন শুরুর আগেই চলে গেছেন সাতক্ষীরায়। করোনা তো আছেই, তাঁর মনটা বেশি খারাপ হয়ে গেছে 'আম্পানে'র কারণে। প্রলংয়কারী ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরায়। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা! ঈদের আনন্দ কিছুতেই তাই স্পর্শ করছে না মোস্তাফিজকে, 'এমনিতে করোনা আতঙ্ক। এর মধ্যে আম্পান লন্ডভন্ড করে দিয়েছে পুরো এলাকা। এর মধ্যে কি আর ঈদের আনন্দ থাকে? কোনোভাবে দিনটা কাটিয়ে দিলেই হয়।'


ঈদের আনন্দ নেই আবু জায়েদের মধ্যেও। করোনা আতঙ্কে সিলেটের এই পেসার বাসায় ছোট ভাতিজির জন্য ঈদের জামা-কাপড় পর্যন্ত কেনেননি। বিষন্ন মনে আবু জায়েদ বললেন, 'ঈদগাহ ময়দানে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে সেখানে যাব না। এলাকার একটা মসজিদে হয়তো নামাজ আদায় করব। মনে সেভাবে আনন্দ নেই। সবার মধ্যে আতঙ্ক, ভয় কাজ করছে। আমরা বাসার কেউ ঈদের নতুন জামা-কাপড় পর্যন্ত কিনিনি। বুঝতেই পারছেন, এই ঈদ সেভাবে স্পর্শ করছে না।'


তবে ব্যতিক্রম আল আমিন হোসেন। তিনি জানালেন, করোনা আতঙ্ক ছাপিয়ে তাঁর শহর ঝিনাইদহে ঈদের আনন্দটা বেশ কাজ করছে। 'এলাকার ছেলেপুলেরা দেখলাম বাজি-পটকা কিনেছে। সন্ধ্যায় ফোটাবে। করোনা খুব একটা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। সবাই মোটামুটি সচেতন। সরকারের বেধে দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। আমাদের এখানে ঈদের স্বাভাবিক আনন্দই হয়তো হবে'—বেশ উচ্ছ্বসিত আল আমিন।