এই দুই ঈদের আনন্দ ভুলতে পারেন না ফুটবলাররা

লাওসের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন ছিল ঈদ। সেদিন নামাজ পড়ে সেলফিতে ‍ফুটবলাররা। ছবি: ফেসবুক
লাওসের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন ছিল ঈদ। সেদিন নামাজ পড়ে সেলফিতে ‍ফুটবলাররা। ছবি: ফেসবুক

ছয় বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ আশরাফুল ইসলাম রানা। শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের এ গোলরক্ষক তাঁর ক্যারিয়ারে দু বার ঈদ করেছেন দেশের বাইরে। এই দুই বারই জিতেছে বাংলাদেশ দল।

ফুটবলাররা প্রবাস থেকে পাঠিয়েছেন ঈদের সেরা উপহার। গত বছর ঈদ উল ফিতরের একদিন পর ভিয়েনতিয়েনে বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ে লাওসকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর ঈদ উল আজহার দুই দিন আগে জাকার্তা এশিয়ান গেমস ফুটবলে কাতারকে হারিয়ে চমকে দেন জামাল ভূঁইয়ারা।

গত বছর বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা ঈদ উল ফিতরের নামাজ পড়েন লাওসে। ঈদের দুই সপ্তাহ আগে আশরাফুল, মামুনুল ইসলামরা ঢাকা ছাড়েন বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে। দশ দিন থাইল্যান্ডে কন্ডিশনিং ক্যাম্প শেষে লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে গিয়ে বাংলাদেশ খেলতে নামে গুরুত্বপূর্ণ ওই ম্যাচ। এই একটি ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করছিল বাংলাদেশের পরবর্তী চার বছরের ফুটবল-সূচী।

৬ জুন লাওসের বিপক্ষে জিততে না পারলে পরের চার বছর ফিফা ও এএফসির কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেত না বাংলাদেশ। দেশের ফুটবলে ওই ক্রান্তিকালে গুরুত্বপূর্ণ জয়টি আসে ঈদের একদিন পর। লাওসকে হারানোর ম্যাচে একমাত্র গোল করেন ফরোয়ার্ড রবিউল হাসান।

সে ম্যাচের স্মৃতি এখনও মনকে দারুণভাবে দোলা দেয় রবিউলের, 'আমরা দেশের বাইরে ঈদ করেছিলাম তখন। দল জেতায় ঈদের আনন্দ স্বার্থক হয়েছিল। আমরা খুশির দিনে দেশবাসীকে আনন্দ উপহার দিয়েছিলাম, ওই ম্যাচটার কথা কখনোই ভুলব না।'

লাওসের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন স্থানীয় একটি মসজিদে ফুটবলাররা ঈদের নামাজ পড়েন। সেখানকার ঐতিহ্য অনুসারে মসজিদেই খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সবার জন্য। মেন্যুতে ছিল গরুর মাংস ভুনা এবং রুটি। সময়টা যে বেশ উপভোগ করেছিলেন সেটাই বললেন জাতীয় দলের মিডফিল্ডার সোহেল রানা, 'আমরা এক প্লেটে তিন চার জন বসে খেয়েছিলাম। তবে ঈদের আনন্দ ভুলে বেশিরভাগ সময় পরের দিনের ম্যাচ নিয়েই কথা বলেছি। এই ম্যাচটা জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ছিলাম। কারণ হারলে হয়তো চার বছর ফুটবলই খেলতে পারতাম না জাতীয় দলের জার্সিতে। তাই ম্যাচ জেতার পর অনেকে ড্রেসিংরুমে আনন্দে কেঁদেছিলাম।'

দেশের বাইরে ঈদের সময় যেন এক পরিবারের সদস্য হয়ে পড়েন ফুটবলাররা। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম লাওসে ওই জয়ের আগে ঈদের দিনটিকে সেভাবেই দেখেছিলেন, 'দেশে ঈদের দিন বন্ধু- বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাই। কিন্তু দেশের বাইরে ঈদের দিনে তাদের কথা খুব মনে পড়ে। ওই সময় বেশি আপন মনে হয় টিমমেটদের। দেশের জন্য তখন আরও ভালো খেলতে নিজেদের অনুপ্রাণিত করি।'

গত ঈদ উল ফিতরের জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ। সেটা গত বছরই ঈদ উল আজহার দুই দিন আগে। ১৯ আগস্ট এশিয়াডে ফুটবলে কাতারের বিপক্ষে জেতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দল। আর ওই জয়ে প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বে ওঠে বাংলাদেশ। অথচ সেবার বাংলাদেশের ফুটবলাররা ধরেই নিয়েছিল দেশে এসে ঈদ করতে পারবেন।

গ্রুপ পর্বে আগের ম্যাচে উজবেকিস্তানের কাছে হারে বাংলাদেশ, থাইল্যান্ডের সঙ্গে করে ড্র। শক্তিশালী কাতারকে বাংলাদেশ হারাতে পারবে না এটা অনুমিতই ছিল। সেই ভাবনাতেই কিনা সম্ভাব্য বিদায় ধরে নিয়ে বাফুফে কর্মকর্তারা দেশে ফেরার জন্য ম্যাচের পরের দিনের বিমানের অগ্রিম টিকিট কাটেন! কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বাংলাদেশ জেতে ম্যাচের শেষ মিনিটে দেওয়া জামাল ভূঁইয়ার গোলে। এরপর সেই ঈদটা ফুটবলারদের জন্য হয়ে ওঠে আরও রঙিন। সেই ঈদের বর্ণনা দিচ্ছিলেন আশরাফুল, 'যেহেতু কাতারের সঙ্গে শেষ ম্যাচ, হারলেই বিদায়। তাই আগেই ঢাকা আসার টিকিট কাটা হয়েছিল। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম ম্যাচটি জিততে। ইন্দোনেশিয়া আসার আগে কোরিয়ায় কন্ডিশনিং ক্যাম্প করি। ওটা আমাদের অনেক কাজে দেয়। দলের মধ্যে বোঝাপড়াটা বেড়েছিল বহুগুণ। আর নিজেদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। শেষ পর্যন্ত জিতে ঈদটা ইন্দোনেশিয়ায় করতে পেরেছিলাম। পরিবার ছাড়া ঈদ করলেও সেবার যে আনন্দ পেয়েছিলাম তা কোনোদিন ভুলব না।'