গর্ভে সন্তান, এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত

রুগানি ও তাঁর বান্ধবী পেরসিকো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
রুগানি ও তাঁর বান্ধবী পেরসিকো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কবে ভ্যাকসিন আসবে, আবিষ্কার হবে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক – সে প্রতীক্ষায় ক্ষণ গুনছে বিশ্ব। দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দেওয়া এই মহামারি থেকে মুক্তি খুঁজছে সবাই। লাখো প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা যে দুঃসহ। শারীরিক কষ্ট তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয় মানসিক দুশ্চিন্তা। 

এর মধ্যে যদি সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়, তাহলে দুশ্চিন্তাটা কতগুণ বেড়ে যাবে, তা তো সহজেই কল্পনা করে নেওয়া যায়! জুভেন্টাসের ডিফেন্ডার দানিয়েলে রুগানির বান্ধবীর সে অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যে সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল, তাঁর মস্তিষ্কে শর্ট সার্কিট হচ্ছে!
নামডাক আছে, ইউরোপে এমন ফুটবলারদের মধ্যে সবার আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন রুগানি। সে সময় আক্রান্ত হন তাঁর বান্ধবী মিশেলা পেরসিকোও। যাঁর গর্ভে অনাগত সন্তান। মার্চের শুরুর দিকে করোনার মৃদু লক্ষণ দেখা দেয় রুগানি-পেরসিকো দুজনেরই।
ইতালিয়ান দৈনিক তুত্তোস্পোর্তে সে সময়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে পেরসিকো বললেন, ‌'একে তো সন্তান গর্ভে, তারওপর করোনা নিয়ে অনেক কিছু অজানা থাকায়ই তাঁর ভয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি এখন ঠিক আছি, সৌভাগ্যবশত আমার শুধু মৃদু কিছু লক্ষণ দেখা দিয়েছে। ঘ্রাণ ও স্বাদ হারিয়ে ফেলেছিলাম, জ্বর ছিল, ক্লান্তি ছিল। অন্য অনেকের তুলনায় দানিয়েলে আর আমি অনেক সৌভাগ্যবান।' ভয়ের কথাও বললেন, 'সবচেয়ে বড় ভয়টা ছিল এই যে, আমার গর্ভে সন্তান আছে। দানিয়েলেও অসুস্থ ছিল, আইসোলেশনে ছিল, সে কারণে আমি একা ছিলাম। তারওপর পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তা তো ছিলই। বেরগামো থেকে আমার বাবা-মা বলতেন তাঁরা সব সময় রাস্তায় শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনই শুনতে পান, আর কিছু না। অথচ তখন মাত্র মার্চের শুরু।'
রুগানির করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রথম শুনে ফুটবলবিশ্ব যেমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল, পেরসিকোর চিন্তা তো আরও বেশিই হওয়ার কথা। সেটি রুগানিকে নিয়ে যেমন, তেমনি নিজেকে আর গর্ভের সন্তানকে নিয়েও। 'যেদিন শুনলাম দানিয়েলের টেস্টে পজিটিভ এসেছে, আমি ধরেই নিয়েছি আমারও তা-ই আসবে। এটাতে আমার সন্তানের ওপর কী প্রভাব পড়বে, সেটা ভেবে সে সময় মনে হচ্ছিল আমার মস্তিষ্কে শর্ট সার্কিট হচ্ছে। ভাইরাসটাই এত নতুন, গর্ভাবস্থায় এতে আক্রান্ত হলে কী প্রভাব পড়ে তা তো জানি না। সে কারণে প্রথম কয়েকদিন অনেক ভয়ের ছিল। পরামর্শের জন্য কতজনকেই না ফোন করেছি!'- বললেন পেরসিকো।
ভয়টা কেটেছে ডাক্তারদের কাছ থেকে এই নিশ্চয়তা পাওয়ার পর যে, গর্ভের সন্তানকে নিয়ে ভয় নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও রুগানি আর তাঁর জন্য সমবেদনা-প্রার্থনা জানিয়েছেন অনেকে। পেরসিকোর তা মন ছুঁয়ে গেছে, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে সমর্থন পেয়েছি, তাতে মুগ্ধ আমি। সমর্থনটা শুধু জুভেন্টাস সমর্থকরাই করেননি। রুগানিও ভালোবাসাটা টের পাচ্ছিল। যে ভালোবাসাটা একটা ফুটবল দল ছাপিয়েও অনেক বড় কিছু।'