কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে বঞ্চিত শুটাররা

দুঃসময়ে মালিঙ্গার সাহায্য পাচ্ছেন মাদুশংকা। ফাইল ছবি
দুঃসময়ে মালিঙ্গার সাহায্য পাচ্ছেন মাদুশংকা। ফাইল ছবি
>শুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দুস্থ খেলোয়াড়দের তালিকা পাঠান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ফেডারেশনের সভাপতির আপত্তির কারণে টাকা পাননি শুটাররা।

করোনাকালে সংকটে থাকা খেলোয়াড়দের ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে কিছু অর্থ বিতরণও হয়েছে। প্রথম ধাপে ৩৩টি ফেডারেশনের কাছে খেলোয়াড়দের নামের তালিকা চেয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। আগে-পরে তালিকা দিয়েছে প্রায় সবাই। বাকি আছে সাইক্লিং ও শুটিং।

সাইক্লিং সহসাই তালিকা দিয়ে দেবে। তবে শুটিং ফেডারেশনে এ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন দ্বন্দ্ব, যার কেন্দ্রে শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দন চৌধুরী ও মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ। ফেডারেশনের এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই সবার জানা। এখন সেই দ্বন্দ্ব এতই তীব্র হয়ে উঠেছে যে এর জন্য ভুগতে হচ্ছে শুটারদের। দুই শীর্ষ কর্তার দ্বন্দ্বের কারণে করোনাকালে সংকটে থাকা শুটাররা সরকারের আর্থিক অনুদান থেকে পর্যন্ত বঞ্চিত হচ্ছেন।

শুটিং ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ গতকাল এর ব্যাখা দিতে গিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, 'জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রথমে আমাদের ১০ জন খেলোয়াড়ের নাম পাঠাতে বলে। আমরা অনুরোধ করে আরও ১০ জন বাড়াই। দেশের বিভিন্ন ক্লাবের কাছ থেকে দুস্থ শুটারদের নাম নিয়ে আমি মহাসচিব হিসেবে একটি তালিকা তৈরি করি। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফোন করে তাড়াতাড়ি নাম পাঠাতে বলেন। তালিকাটা আমি পাঠিয়ে দিই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর অফিসে। তবে খেলোয়াড়ের তালিকার সঙ্গে ফেডারেশন থেকে একটা ফরোয়ার্ডিং বা চিঠি লাগে। ওই চিঠিই আমাকে দিতে দেওয়া হয়নি।'

কে সেটা দিতে দেননি? ইন্তেখাবুল হামিদ বলেন, 'আমরা ২০ জন খেলোয়াড়ের নাম পাঠাই। যখন ফরোয়ার্ডিং দিতে চাইলাম, তখন আমাকে বলা হলো এটা ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির (ইসি) মিটিং ছাড়া দেওয়া যাবে না। নইলে নাকি আইন লঙ্ঘন হবে। ফেডারেশনের জিএমের (মহাব্যবস্থাপক) মাধ্যমে জানতে পারলাম, কথাটা বলেছেন ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট। আট বছর শুটিং ফেডারেশনের মহাসচিব হিসেবে এমন অনেক ভূরি ভূরি ফরোয়ার্ডিং দিয়েছি, তখন তো ইসি মিটিং লাগেনি! নিয়মও ভঙ্গ হয়নি। যেহেতু প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে ফেডারেশনের জিএম বলছে, আমি তো ফরোয়ার্ডিং দিতে পারি না।' সঙ্গে যোগ করেছেন, 'এটা খুবই দুঃখের বিষয়, এই দুঃসময়েও সরকারি অনুদান থেকে শুটাররা বঞ্চিত হলো।'

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শুটিং ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর সাড়া পাওয়া যায়নি। ফোন এবং খুদে বার্তা, কোনোটারই জবাব দেননি তিনি। ফেডারেশনের জিএম সাইফুল ইসলামের কাছে দুস্থ শুটারদের কোনো তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নাকি তাঁর জানা নেই। মুঠোফোনে মহাব্যবস্থাপক বলেন, 'আমরা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি পাইনি।'

পাওয়ার কথাও নয় অবশ্য। কারণ, খেলোয়াড়দের তালিকা চেয়ে মন্ত্রণালয় কোনো ফেডারেশনকেই চিঠি দেয়নি। করোনাভাইরাসের জরুরি পরিস্থিতিতে তালিকা চাওয়া হয়েছে মৌখিকভাবে। যারা তালিকা দিয়েছে, সেটির ভিত্তিতেই দিয়েছে। দুস্থ শুটারদের কোনো তালিকা করা হয়েছে কি না, প্রশ্নে তাঁর কথা, 'আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তালিকা করা হয়নি।' এরপর এসব নিয়ে মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে ফোনই কেটে দেন মহাব্যস্থাপক।

ফেডারেশনের কর্তাদের এমন দ্বন্দ্বে ক্ষুব্ধ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান। কাল প্রথম আলোকে তিনি বলেন, 'শুটিং ফেডারেশন একটা তালিকা দিয়েছে। তবে ফেডারেশনের সভাপতি আপত্তি জানান যেন টাকা দেওয়া না হয়। যেহেতু শুটিংয়ে দ্বন্দ্ব আছে, তাই আমরা ব্যাপারটা দেখব। তবে এটুকু বলব, আমাদের ঝুলিয়ে রাখা ঠিক হচ্ছে না।'

ওদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এক হাজার ক্রীড়াবিদকে আর্থিক সহায়তা দেবে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কতজনকে অনুদান দেওয়া হয়েছে, সেই হিসাব পাওয়া যায়নি। ঈদের আগে বিসিবি থেকে খেলোয়াড়দের সাহায্যের জন্য সরকারকে অনুদান দেওয়া হয় ৫০ লাখ ১০ হাজার টাকা। এনএসসি তার সঙ্গে আরও ১০ লাখ টাকা যোগ করে মোট ৬০ লাখ টাকা সহায়তা দেয়। কাল ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া শিবির, ক্রীড়া পরিদপ্তর এবং ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও তাঁরা আর্থিক সহায়তা করছেন। নতুন আরও ৫০ থেকে ৬০ জন খেলোয়াড়কে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি ফেডারেশনের আবেদনের ভিত্তিতে তাদের অনুদান বাড়ানোও হয়েছে। ভারোত্তোলনে যেমন ৫ জন বেড়ে সাহায্য পেয়েছেন ২০ জন খেলোয়াড়। ব্যাডমিন্টনে বেড়েছে পাঁচজন।