লালা নিয়ে যত কথা

এ অভ্যাস ভুলতে পারবেন বোলাররা? ফাইল ছবি
এ অভ্যাস ভুলতে পারবেন বোলাররা? ফাইল ছবি

গত কিছুদিনে ক্রিকেট দুনিয়ায় একটি শব্দ বেশ শোনা যাচ্ছে-লালা। ক্রিকেট ফেরানোর চিন্তায় সবার আলোচনার বিষয়বস্তু এখন এই মুখনিসৃত তরল। ক্রিকেটে বলের ঔজ্জ্বল্য ও চাকচিক্য ধরে রাখার সবচেয়ে ভালো স্বীকৃত উপায় এই লালা। কিন্তু করোনাকালে এই লালাই যে এখন সবার চোখের বিষ হয়ে উঠেছে।


করোনাভাইরাসের সংক্রমনের ফলে প্রায় সব ধরণের খেলাধুলাই বন্ধ হয়ে আছে। আর্থিক ক্ষতি এড়াতে আবার যখন খেলা ফেরানোর চিন্তা হচ্ছে, তখন স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর নানা উপায় বের করে নিচ্ছে আইসিসি। এর মধ্যে খেলায় সবচেয়ে বড় প্রভাব রাখতে যাচ্ছে বলে লালা না লাগানোর নিয়মটি। ক্রিকেটের শুরু থেকে বলের চকচকে ভাব ধরে রাখার জন্য এবং সুইংয়ের কারিশমা দেখানোর জন্য লালার ব্যবহার করে আসছেন বোলাররা। অনেক দল তো শুধুমাত্র এই কাজটা ভালো পারেন বলে কিছু কিছু ফিল্ডারকে আনুষ্ঠানিকভাবে লালা মাখানোর দায়িত্বটি দিয়ে রেখেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবে লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্রিকেটে বোলারদের কী হবে, এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। প্রতিদিনই ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা নানা মতামত দিচ্ছেন। দেখে নেওয়া যাক তাঁদের সে মন্তব্যগুলো-

সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন সহজাত বিষয়টি ঠেকানোর উপায় খুঁজতে বলেছেন, ' কিছু কিছু কাজ ক্রিকেটাররা তাদের ক্যারিয়ারের ১০ বছর ধরে করে আসছে। বল উজ্জ্বল করা, উদযাপন করা, এই কাজ গুলো কঠিন হবে সবার জন্য। বলে লালা মাখতে সবাই অভ্যস্ত। এখন সেটা ওরা করতে পারবে না। ওদের মস্তিস্ককে আবার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।'

টেস্ট ও ওয়ানডের শীর্ষ দশে থাকা যশপ্রীত বুমরা চাইছেন বিকল্প কিছু, 'আমাকে লালার ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে। যখন ফিরে আসব তখন কী নিয়ম থাকবে আমার ধারণা নেই। কিন্তু আমার ধারণা বিকল্প ব্যবস্থা থাকা উচিত। বল যদি পরিচর্যা করা না যায়, বোলারদের জন্য কাজটা কঠিন। বোলারদের এমন কিছু দরকার যাতে বলের যত্ন নেওয়া যায়। পরের দিকে রিভার্স সুইং বা সাধারণ সুইং পাওয়ার মতো কিছু।'

বুমরার সতীর্থ মোহাম্মদ শামির অবশ্য এসব দরকার হবে না, ‌'কাজটা কঠিন হবে। ছোটবেলা থেকে লালা ব্যবহার করে অভ্যস্ত আমরা। ফাস্ট বোলাররা অভ্যাসবশতই বল উজ্জ্বল করতে লালা ব্যবহার করে। তবে হ্যাঁ, শুকনো বলের উজ্জ্বলতা ঠিক রাখতে পারলে রিভার্স সুইংও পাওয়া সম্ভব।'

ওদিকে লালা নিষিদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অনিল কুম্বলে স্পিনারদের গুরুত্ব বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন। তবে লালা ব্যবহার আটকানোর কাজটা কঠিন মানছেন তিনিও, 'এখন পর্যন্ত চিকিৎসকরা যা বলেছেন, তাতে করোনা ছড়াণোর পেছনে লালার ভূমিকা বেশি দেখা যাচ্ছে। এ কারণেই আমরা এটা নিষিদ্ধ করেছি। যদিও ক্রিকেটে এটা সহজাত। খেলোয়াড়দের এটা মেনে চলা যদিও খুব কঠিন হবে।'

লালা নিষিদ্ধে ভূমিকা ছিল শ্রীলঙ্কা দলের কোচ মিকি আর্থারেরও। এখন তাঁর বোলাররাই বলছেন এর নেতিবাচক দিকটা, 'বোলারদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ভালো কিছু জানা গেল। তারা বলছে লালার পরিবর্তে ঘাম ব্যবহার করায় বল বেশি ভারী হয়ে যাচ্ছে। লালাই বল চকচকে করায় ওদের প্রথম পছন্দ। কিন্তু এখন যে নিয়ম, তাতে মানিয়ে নিতে হবে।'

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ধারণা, এ অভ্যাস বদলাতে সময় লাগবে, 'বোলার হিসেবে বলে লালা লাগানো একদম স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা বন্ধ করতে অনেক কাজ করতে হবে।'


ইংলিশ পেসার ক্রিস ওকস এ নিয়ে ভাবতে রাজি নন, 'নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হবে এখন আর এটা ব্যবহার করা যাবে না। ঘাম-থুতু ছাড়াও বল চকচকে করা যায়, তবে আগের মতো প্রভাব ফেলবে না। ট্রাউজারে আরেকটু বেশি ঘষতে হবে।'


সাবেক ফাস্ট বোলার ব্রেট লি বলছেন কাজটা কঠিন, 'আট, নয়, দশ বছর বয়স থেকে বলে থুতু লাগানোর অভ্যাস। একদিনে সেটা বদলানো কঠিন। এটা ভালো উদ্যোগ কিন্তু প্রয়োগ করা কঠিন হবে।'


দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি ফিল্ডারদের আচরণের কথাও বলেছেন, 'ফিল্ডারদের জন্যও কাজটা কঠিন। আমি স্লিপে দাঁড়ানোর সময় ক্যাচ ধরার জন্য হাতে থুতু ফেলতাম। রিকি পন্টিংও বল ধরার আগে এ কাজ করতেন।'


টেস্ট ক্রিকেটে রিভার্স সুইং হারানোর শঙ্কা করছেন ইরফান পাঠান, 'লাল বলে পেসার হোন বা স্পিনার, বল চকচকে করা লাগবেই। স্পিনাররা বল ড্রিফট করার জন্য চকচকে দিকের ওপর নির্ভর করে। ব্যাটসম্যানদের অনেক সুবিধা হবে। খেলাটা আরও ব্যাটসম্যানবান্ধব হয়ে যাবে।'


পাকিস্তান কোচ মিসবাহ-উল-হক তো বোলারদের মাস্কই পরিয়ে দিতে চান, 'কাজটা কঠিন। কেউ নিয়ম মনে রাখলেও অন্যমনস্ক হয়েও মুখে হাত দিতে পারে। আমাদের এটা আটকাতে হবে। বোলারদের মাস্ক বা অমন কিছু পরালে এটা করা সম্ভব।'


খেলাটা একঘেয়ে হয়ে যাবে বলে ধারণা মিচেল স্টার্কের, 'বল সুইং করানোর মতো কিছু একটা দরকার। না হলে মানুষ আর খেলা দেখবে না। বাচ্চারা আর বোলার হতে চাইবে না। এমনিতেই অস্ট্রেলিয়ায় উইকেটগুলো ব্যাটিং সহায়ক হয়ে গেছে। এখন বলও যদি সোজা যায়, তাহলে খেলাটা বিরক্তিকর হয়ে যাবে।'


ব্যাটসম্যান হয়েও এমন কিছু চান না স্মিথ, 'আমি সব সময় ব্যাটবলের সমান লড়াই চাই। এটা কেড়ে নেওয়া হলে ভালো হবে না। ওরা এর বিকল্প কিছু খুঁজে পাবে কিনা, কাজটা কঠিন। আমি নিজেই নিজের হাতে থুতু ফেলি, এভাবেই আমি গ্রিপ পাই।'


অবশ্য ইংলিশ অধিনায়ক জো রুট এর মধ্যে ভালো দিক পাচ্ছেন, 'এটা আমাদের বোলারদের অন্য দক্ষতা বাড়াবে।'


কদিন পরেই তাঁর বিপক্ষে মাঠে নামতে যাওয়া জ্যাসন হোল্ডার শঙ্কা করছেন অন্য কিছুর, 'আশা করি এতে দলগুলো সিরিশ কাগজ নিয়ে নামা শুরু করবে না (বল বিকৃত করে সুবিধা পাওয়ার জন্য)।'