জেসুস যখন গান্ধীবাদী

ক্যারিয়ারে কয়েকবারই বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ফাইল ছবি
ক্যারিয়ারে কয়েকবারই বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ফাইল ছবি
>বর্ণাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে জেসুস মহাত্মা গান্ধীর মতো অহিংস নীতিতেই বিশ্বাসী

গ্যালারি থেকে মানুষ তাঁকে কলা দেখিয়েছে, কখনো আবার তাঁকে উদ্দেশ করে বানরের ডাক ডেকেছে। কিন্তু গ্যাব্রিয়েল জেসুস এসবে পাত্তা দেননি। নিজের খেলাটা তিনি খেলে গেছেন। পাত্তা দেবেনই বা কেন, এসব বর্ণবাদী লোকেদের যে নির্বোধ মনে করেন ম্যানচেস্টার সিটির ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার। আর নির্বোধদের কোনো কথা বা আচরণে কি পাত্তা দিতে আছে! এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে তিনি অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী। সেদিক তাঁকে গান্ধীবাদী বলতে পারেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন আফ্রো-আমেরিকানরা। নিজেদের দাবি আদায়ে সোচ্চার তাঁরা। প্রতিবাদের এই ঝড় যুক্তরাষ্ট্রের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বেই। যে যেভাবে পারছে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ফ্লয়েডের এমন মৃত্যুর।

কালো মানুষের এমন দাবি আদায়ের লড়াইয়ে সমর্থন জানিয়ে গ্যাব্রিয়েল জেসুস বলেছেন, ‌‘কালো মানুষের জীবনেরও মূল্য আছে। এমন নয় যে বর্ণবাদের শুরুটা সাম্প্রতিক সময়ে হয়েছে। এটা স্বাভাবিক কোনো ব্যাপারও নয়। অনেক অত্যাচার সয়েছে তারা (কালো মানুষেরা)। এবার তারা (প্রতিবাদে) ফেটে পড়েছে।’

বর্ণাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে জেসুস মহাত্মা গান্ধীর মতো অহিংস নীতিতেই বিশ্বাসী, ‌‘আমি সহিংসতা বা সহিংস প্রতিবাদের বিরুদ্ধে। বর্ণবাদকে না বলার ক্ষেত্রে আমি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পক্ষে। আমরা যখন বলি ‌“কালো মানুষের জীবনেরও মূল্য আছে”, সেটার সঠিক অর্থটা সবার বুঝতে হবে। বুঝতে হবে এই কথার গূঢ় অর্থটাও।’

‌‘কালো মানুলের জীবনেরও মূল্য আছে’ কথাটা কী বোঝায় সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সিটির স্ট্রাইকার, ‌‘আমরা এটা বলতে চাইছি না যে অন্য মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। যে সব কালো মানুষেরা বর্ণবাদের শিকার, আমরা আসলে তাদের মনের অবস্থাটাই বোঝাতে চাই। বিষয়টিকে সাধারায়ন করে ফেললে চলবে না। সবাই বর্ণবাদী নয়, আসলে বেশির ভাগ মানুষই বর্ণবাদী নয়। তবে হ্যাঁ, বিশ্বে বর্ণবাদী লোকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আমার কাছে তো মনে হয় এই সব মানুষের মাথায় কোনো বুদ্ধিশুদ্ধি নেই, এরা আসলে নির্বোধ।’

এরপর জেসুস নিজের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হওয়ার গল্পও শুনিয়েছেন, ‌‘আমি কয়েকবার ভুগেছি। তবে আমি নিজেকে এসবের ঊর্ধ্বে তুলতে পেরেছি। আমি কালো এবং বস্তি থেকে উঠে এসেছি। সেই সব অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছি। কিন্তু একেকজন একেকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। আমারও প্রতিক্রিয়া দেখানো বা প্রতিবাদ করার নিজস্ব ধরন আছে।’