আতঙ্কে ক্রিকেটাররা

মনে ভয় নিয়ে খেলতে চান না ক্রিকেটাররা। ছবি: প্রথম আলো
মনে ভয় নিয়ে খেলতে চান না ক্রিকেটাররা। ছবি: প্রথম আলো

করোনা মহামারির মধ্যে আগামী মাসে বাংলাদেশ দল পূর্বনির্ধারিত শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ক্রিকেটারদের মতও জানার চেষ্টা করছে বিসিবি। যত দূর জানা গেছে, সফরটি নিয়ে দুই রকম মতই আছে ক্রিকেটারদের। অর্থাৎ কেউ বলছেন এই মুহূর্তের খেলা হবে ভয়ংকর সিদ্ধান্ত। আবার কেউ চ্যালেঞ্জটা নিতে চাচ্ছেন। তবে দ্বিতীয় পক্ষ খুব বেশি ভারী নয়। বেশির ভাগ ক্রিকেটারের মত না যাওয়ার পক্ষেই।

দেশে করোনা পরিস্থিতিতে দিনে দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে, তাতে সবার মতো ক্রিকেটাররাও আতঙ্কিত। এখন যদি শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার ব্যাপারে বিসিবি ‘হ্যাঁ’ বলে দেয়, দ্রুত প্রস্তুতি শুরু করতে হবে ক্রিকেটারদের। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে অনুশীলন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় দলের এক সিনিয়র ক্রিকেটার, ‘এই পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচানোটাই গুরুত্বপূর্ণ। এত তাড়াহুড়ো করে বিপদে পড়ার তো দরকার নেই! এভাবে ক্রিকেট খেলা যায় না। সবাই দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকবে। মনে ভয় নিয়ে খেলতে হবে। আতঙ্ক নিয়ে খেললে আত্মবিশ্বাস থাকে না।’

বেশির ভাগ তরুণ খেলোয়াড়ের চিন্তা আবার ভিন্ন। দলের দুজন তরুণ পেসার ও ব্যাটসম্যানের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, সব নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে ক্রিকেট শুরু করতে তাঁদের আপত্তি নেই। এক পেসারের মন্তব্য, ‘আমরা বোর্ডের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারব না। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে হবে। যদি ব্যক্তিগত মতামত শুনতে চান, আমার কোনো সমস্যা নেই। শ্রীলঙ্কায় যেহেতু করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো, আর আমাদেরও তো কোথাও না কোথাও থেকে শুরু করতেই হবে।’

শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ‘সফরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে আমার কিছু বলা ঠিক হবে না’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন তিনি। টেস্ট দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মুশফিকুর রহিম থাকতে চাইলেন মাঝামাঝি অবস্থানে। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বিসিবি শুরুতে বলেছিল, পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে তারা খেলোয়াড়দের জোরাজুরি করবে না। অথচ না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মুশফিককে কতই না হ্যাপা পোহাতে হলো! সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই কি না এবার শ্রীলঙ্কা সফরের আগে সরাসরি কোনো মতামত জানাতে চাইলেন না মুশফিক। শুধু এটুকুই বললেন, ‘দলের অধিনায়ক, কোচ কিংবা বিসিবির নীতিনির্ধারকেরা এটার ভালো উত্তর দিতে পারবেন। বিসিবি যদি যেতে বলে, যাব। বিসিবি যদি সফরটা না করে, তাহলে তো যাওয়ার প্রশ্নই নেই।’

কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এ প্রসঙ্গে এখনো মুখে তালা মেরে আছেন। তবে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও মুশফিকের মতো বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছেন বোর্ডের ওপর, ‘বোর্ডের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। এটা পুরোপুরি বোর্ডের ব্যাপার।’ অধিনায়কের কূটনৈতিক উত্তরে ‘হ্যাঁ’, ‘না’ দুটিই লুকিয়ে। তবে সফরের ব্যাপারে দলের আরেক সিনিয়র খেলোয়াড় মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্তই ক্রিকেটারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না, ‘এমন তো নয় যে এবার না হলে সফরটা আর কোনোদিন হবে না। এ বছর না হোক, আগামী বছর হতে পারে। এক-দুই মাস পর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতেও পারে। তখন না হয় খেলব। জোর করা উচিত হবে না।’

খেলোয়াড়েরা আশ্বস্ত হতে পারেন, এই পরিস্থিতিতে বিসিবিও তাঁদের ওপর জোরাজুরি না করার সিদ্ধান্তই নিয়ে রেখেছে। শ্রীলঙ্কা সফর ও খেলোয়াড়দের অনুশীলনের সুযোগ করে দেওয়ার ব্যাপারে ১৫ জুন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিসিবি।