অথচ সেই বিশ্বকাপে পেলের খেলার কথা ছিল না

১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে হেডে গোলের পর সতীর্থের কোলে পেলে। ছবি: টুইটার
১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে হেডে গোলের পর সতীর্থের কোলে পেলে। ছবি: টুইটার

১৯৭০ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতা কিংবা সেরা খেলোয়াড় হতে পারেননি পেলে। তবু ৫০ বছর আগের সেই বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ উঠলে ভেসে ওঠে পেলের মুখ। এই ছবিটা চিরন্তন হয়ে উঠেছে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। অথচ ’৭০ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলেই জায়গা পাওয়ার কথা ছিল না পেলের!

সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ফুটবলারের শেষ বিশ্বকাপ ছিল সেটি। জর্জিনহো, টোষ্টাও, রিভেলিনো, কার্লোস আলবার্তোদের নিয়ে স্মরণীয় এক দলই গড়েছিল ব্রাজিল। অনেকের মতেই, ’৭০ বিশ্বকাপের ব্রাজিল বিশ্বকাপের ইতিহাসেই সেরা দল। আর ত্রিশে পা রাখা পেলে ছিলেন সেই দলটার সবচেয়ে পরিচিত মুখ।

’৫৮ ও ’৬২ বিশ্বকাপজয়ী পেলে তত দিনে বৈশ্বিক তারকা। মেক্সিকো বিশ্বকাপ জিতে তিনি জন্ম দেন রুপকথার। মাঠের পারফরম্যান্সও ছিল মনে রাখার মতো। মাধ্যাকর্ষণকে ভুল প্রমাণ করে ফাইনালে গোল করেছিলেন অবিষ্মরণীয় হেডে। এমনকি পেলের গোল মিসও ছিল মনে রাখার মতো। গোলপোস্টের সামনে বল ছেড়ে উরুগুয়ে গোলরক্ষককে তিনি যেভাবে বোকা বানিয়েছিলেন, তাতে গোল না হলেও চোখ জুড়িয়ে গিয়েছিল সমর্থকদের।

কিন্তু এই পেলেই সেই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সন্তুষ্ট করতে পারেননি কোচকে। বেশির ভাগের মতামত ছিল পেলে ‘ফুরিয়ে গেছেন’। লাতিন আমেরিকান ফুটবল নিয়ে বিশেষজ্ঞ সংবাদকর্মী টিম ভিকেরি এত দিন পর জানিয়েছেন সে কথা।

জোয়াও সালদানা ছিলেন বাছাইপর্বে ব্রাজিলের কোচ। তিনি যতটা না কোচ ছিলেন সংবাদকর্মী হিসেবে খ্যাতি কুড়োন তার বেশি। আদর্শগত জায়গা থেকে বামপন্থী ছিলেন সালদানা। আর ব্রাজিল তখন ডানপন্থী সামরিক শাসনের অধীনে। আর তাই বিশ্বকাপ শুরুর তিন মাস আগে সালদানার দায়িত্ব হারানোর পেছনে এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। তবে ভিকেরি জানিয়েছেন, আরও একটি কারণ আছে। পেলের সঙ্গে মোটেও বনিবনা হচ্ছিল না সালদানার।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে লেখা প্রতিবেদনে সেসব তথ্যই জানিয়েছেন ভিকেরি। ছাঁটাই হওয়ার পর সংবাদকর্মীদের সালদানা বলেছিলেন, ‘আমি বরখাস্ত হয়েছি, কারণ আমার দলে পেলের খেলার সুযোগ ছিল না। আমার অধীনে তার খেলা ১৭ ম্যাচের একটিতেও ভালো খেলতে পারেনি।’ বিশ্বকাপ শুরুর তিন মাস আগে ছাঁটাই হন তিনি।

পরে এ নিয়ে কিছুদিন পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্ক চলেছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে। সালদানাও অটল ছিলেন নিজের অবস্থানে, ‘মেক্সিকো বিশ্বকাপে খেলার মতো অবস্থায় ছিল না পেলে। তার মাঝমাঠে নামতে না পারার অক্ষমতা দলকে ক্ষতির সম্মুখীন করছে।’ লক্ষণীয় বিষয় হলো ১৯৬২ বিশ্বকাপ যে কোচের হাত ধরে জিতেছিলেন পেলে, সেই আইমোর মোরেইরা পর্যন্ত তখন সমর্থন দিয়েছিলেন সালদানাকে।

এক কলামে মোরেইরা লিখেছিলেন, ‘আমিও (কোচ হলে) বাদ দিতাম পেলেকে। তার অবশিষ্ট বলতে শুধু পেলে নামটাই আছে। মাঝমাঠে সে সাহায্য করতে পারছিল না। কারণ, দুদিকেই দৌড়ানোর মতো সামর্থ্য সে হারিয়ে ফেলেছিল।’

কিন্তু শেষ হাসিটা পেলেই হেসেছিলেন। কোচ মারিও জাগালোর হাত ধরে মেক্সিকোয় জেতেন তৃতীয় বিশ্বকাপ।