যে দিনে সৌরভ-রাহুল, সেই দিনেই কোহলি!

লর্ডসে অভিষেকেই সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সৌরভ। ছবি: টুইটার
লর্ডসে অভিষেকেই সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সৌরভ। ছবি: টুইটার

২০১৮ সালে অফিসের এক ছবি টুইট করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। তাঁর টেস্ট অভিষেকের ম্যাচ দেখাচ্ছিল টিভিতে। সেই ম্যাচ দেখার ছবি টুইট করে সৌরভ লিখেছিলেন, ‘এর চেয়ে ভালো স্মৃতি আর হয় না!’

দুই বছর পর সেই ছবির সঙ্গে আরও কিছু ছবিজুড়ে আজ টুইট করেন তাঁর স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলী, ‘২৪ বছর আগে সৌরভের অভিষেক ঘটেছিল। তোমাকে নিয়ে আমি ভীষণ গর্বিত।’
২৪ বছর! অথচ নব্বইয়ের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে মনে হবে সেদিনের স্মৃতি। লর্ডসে অভিষেকেই অফ সাইডে স্ট্রোকের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন এক বাঙালি। ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ওপেনার, অধিনায়ক সামলে সেই বাঙালিবাবু সৌরভ এখন বিসিসিআই সভাপতি। দাঁড়ান, দাঁড়ান, সে ম্যাচে আরেকজনেরও অভিষেক ঘটেছিল!

লর্ডসে অভিষেকে সেঞ্চুরি না পাওয়ার দুঃখ থাকবে রাহুল দ্রাবিড়ের। ছবি: টুইটার
লর্ডসে অভিষেকে সেঞ্চুরি না পাওয়ার দুঃখ থাকবে রাহুল দ্রাবিড়ের। ছবি: টুইটার

সেই লোকটি ইয়ান চ্যাপেলের ভাষায় ‘দল বিপদে? রাহুল দ্রাবিড়কে খবর দাও।’ তিনি সাধারণত্বে তৈরি অসাধারণ এক ‘দেয়াল’। ভারতীয় ক্রিকেটে কিংবদন্তিদের সংখ্যা কম নেই। রাহুল এসব কিংবদন্তির মধ্যেও কিছুটা আলাদা। ব্যাটিংয়ে, ভাবনায়, চিন্তাচেতনায় নিপাট ভদ্রলোক। সোজা কাজটা সোজা করেই করেন সোজা কথাটা সোজা করেই বলেন।


২৪ বছর আগে ১৯৯৬ সালে লর্ডসে সেদিন অভিষেকেও সোজা ব্যাটে খেলছিলেন রাহুল। ক্রিকেট সব সময় সবাইকে পুর্ণতা দেয় না। আর তাই সাতে নামা রাহুলের মনঃসংযোগ ভেঙে গিয়েছিল নিজের খেলা ২৬৭তম বলে গিয়ে। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সেঞ্চুরিবঞ্চিত মাত্র ৫ রানের জন্য। ওদিকে সৌরভ ৩০১ বলে খেলেছিলেন ১৩১ রানের ইনিংস। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার ও সুনীল যোশীর জায়গায় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁরা।


খ্যাতনামা ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষক অ্যালান উইলকিনস আজ সে স্মৃতি স্মরণ করেই টুইট করেন, ‘হোম অব ক্রিকেট লর্ডসে ১৯৯৬ সালে ভারতের হয়ে অভিষেক সৌরভ গাঙ্গুলী ও রাহুল দ্রাবিড়ের। ভীষণ ঠান্ডা পড়েছিল। ধারাভাষ্যে আমার সঙ্গে ছিলেন হর্শা ভোগলে ও পিটার রোবাক (প্রয়াত)।’


ইউটিউবে সে ম্যাচের ভিডিও দেখলে ক্রিকেটারদের গায়ে সোয়েটারও দেখবেন। ইংলিশ পেসবান্ধব কন্ডিশনে সেদিন রাহুলের সঙ্গে ৯৪ রানের জুটি গড়েন তিনে নামা সৌরভ। ধৈর্য ও স্ট্রোকের সৌরভ ছড়িয়ে তিনি আউট হওয়ার পর বাকি পথ পাড়ি দেওয়ার দায়িত্ব ছিল রাহুলের। কাজটা ছিল আরও কঠিন। কারণ, অন্য প্রান্তে বোলাররা। তাঁদের নিয়ে দলীয় ইনিংস চার শ পার করিয়ে দেন রাহুল। সেদিন তিনিও তিন অঙ্কে পৌঁছাতে পারলে টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একই ম্যাচে অভিষিক্ত দুজনের সেঞ্চুরি দেখত ক্রিকেট। পরে সে রেকর্ডটি গড়েন আজহার মেহমুদ ও আলী নকভি।

সেদিন অভিষেকে রাহুল যেমন ব্যাটিং করেছিলেন কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পথে, তা কখনো বদলাননি। আজ শেন ওয়াটসনের একটি টুইট তাঁর ব্যাটিং বোঝানোর রূপক হতে পারে, ‘রাহুল দ্রাবিড়ের মতো নিখাদ এবং মিষ্টভাষী মানুষ দেখা যায় না।’

কিংস্টন টেস্টে কোহলির অভিষেক ভালো না হলেও বিশ্বসেরাদের একজন তিনি। ছবি: টুইটার
কিংস্টন টেস্টে কোহলির অভিষেক ভালো না হলেও বিশ্বসেরাদের একজন তিনি। ছবি: টুইটার

কী কাকতাল তাই না! একই দিনে, একই ম্যাচে টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল ভারতের ক্রিকেটে নতুন যুগসূচনা করা দুই কিংবদন্তির। দুজনে পরে আবারও অধিনায়কও হন। দাঁড়ান, দাঁড়ান, কাকতালের এখানেই শেষ নয়। একটু দম নিয়ে ২০১১ সালে কিংস্টনে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টে চোখ ফেরান।


লর্ডসের সেই টেস্টে ভারতের ২০৬ ও ২০৭ নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে অভিষিক্ত হন সৌরভ ও রাহুল। মাঝের ১৫ বছরে আরও ৬১ জন ক্রিকেটারের অভিষেক ঘটে ভারতের হয়ে। এরপর কিংস্টন টেস্টে ২৬৮ নম্বর অভিষিক্ত হিসেবে অভিষেক ঘটল ‘চিকু’র। বিরাট কোহলি!

ভারতের দুই ইনিংস মিলিয়ে অভিষেক টেস্টে মোট ১৯ রান করেছিলেন কোহলি। সৌরভ-রাহুলদের মতো সাদা পোশাকে তাঁর ক্ষেত্রে ‘মনিং শোজ দ্য ডে’ কথাটা খাটেনি। সকাল গড়িয়ে চলার সঙ্গে তেজ বেড়েছে বিরাটের ব্যাটের। এখন তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ভেঙে চলছেন একের পর এক রেকর্ড।

আর হ্যাঁ, অধিনায়কও। অর্থাৎ ভারতের তিন অধিনায়কের টেস্ট অভিষেক আজ একই দিনে! এর মধ্যে সৌরভ-রাহুল একই ম্যাচে, কোহলি তার ১৫ বছর পর আজ এই দিনে। তবে অধিনায়কের বাইরে হিসাব করলে ২০১১ কিংস্টন টেস্টে ভারতের হয়ে অভিষিক্ত হয়েছিলেন আরও দুজন, প্রবীণ কুমার ও অভিনব মুুকুন্দ।

কাকতাল বটে!