করোনায় ভালোই হলো সেরেনার

সেরেনাকে আরেকটা সুযোগ এনে দিল করোনা। ছবি: টুইটার
সেরেনাকে আরেকটা সুযোগ এনে দিল করোনা। ছবি: টুইটার

মঞ্চ ঘিরে আলোর রোশনাই। ট্রফি হাতে দাঁড়িয়ে সেরেনা উইলিয়ামস। হাজারো কনফেত্তির ওড়াউড়ি মুহূর্তটাকে আরও রঙিন করে তুলেছে। এক বুক বিস্ময় নিয়ে ধারাভাষ্যকার বলে চলেছেন, 'ফাইনালি শি হ্যাভ রিচড দ্য মার্ক অব মার্গারেট'স টোয়েন্টি ফোর গ্ল্যান্ড স্লাম। শি ইজ দ্য ওল্ডেস্ট উইমেন চ্যাম্পিয়ন।'

শেষের বাক্যটা আগেও শুনেছেন সেরেনা। ২০১৬ সালে উইম্বলডন জয়ের পর। ২০১৭ সালে ৩৫ বছর ১২৪ দিন বয়সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পরও। এখন আরও মধুর হয়ে 'বিশ্বের বয়োজ্যেষ্ঠ নারী চ্যাম্পিয়ন' কথাটা কানে বাজবে সেরেনার। এটা বারবার শোনার জন্যই যে বন্ধুর পথ মাড়িয়ে ক্যারিয়ারটাকে ধরে রাখা!

সেরেনার 'অভিষান ২৪' সফল হবে কি না, কে জানে। কিন্তু এই যে ছুঁই ছুঁই ৩৯ বছর বয়সেও খেলে চলেছেন, তা হয়তো মনের ভেতর এমন একটা ছবি এঁকেই। আলো-ঝলমলে মঞ্চ, হর্ষধ্বনি, কনফেত্তি কোন চ্যাম্পিয়নের না ভালো লাগে! ৩৮ পেরিয়ে সেটি আরও ভালো লাগার কথা সেরেনার। মার্গারেট কোর্ট তাঁর ২৪তম শিরোপাটি জিতেছিলেন ৩১ বছর বয়সে। আর ৩১ আগস্ট শুরু হতে যাওয়া ইউএস ওপেন জিতলে ২৪তম গ্র্যান্ড স্লাম জেতার দিন সেরেনার বয়স হবে ৩৮ বছর ১১ মাস ১৯ দিন! এই বয়সেও আরও একটা শিরোপা, রেকর্ড বইয়ের পাতায় আরও একবার আঁকিবুঁকি কাটা— এসবই তো তাঁর 'দুর্গম গিরি কান্তার মরু' মাড়িয়ে চলার প্রেরণা।

তবে শুধু রেকর্ডের জন্যই খেলছেন সেরেনা, ব্যাপারটা তা নয়। শরীর যেদিন সায় দেবে না, মিলবে না মনের সবুজ সংকেত, সেদিন আপনাআপনিই টেনিস ছেড়ে দেবেন। কিন্তু সেরেনার বিশ্বাস, তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি। তাই সমালোচকেরা যখন তাঁর 'শেষ' দেখে ফেলেন, তাঁদের ভুল প্রমাণ করার একটা দায় এসে যায় তাঁর। যেমনটা তিনি আগেও করেছেন। অসুস্থতার কারণে ২০১০ সালের ইউএস ওপেনে খেলা হয়নি। খেলতে পারেননি পরের বছর অস্ট্রেলিয়ান ও ফ্রেঞ্চ ওপেনেও। কোর্টে ফিরে এলেও পরের তিনটি গ্র্যান্ড স্লামে ব্যর্থ। এরপর ২০১২ ফ্রেঞ্চ ওপেনে তো বিদায় নিলেন প্রথম রাউন্ডেই। প্রথমবারের মতো কোনো গ্র্যান্ড স্লামের প্রথম রাউন্ড থেকে সেরেনার বিদায় নেওয়ার পর 'গেল', 'গেল' রব উঠল। অথচ সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করে সেই সেরেনাই জিতেছেন আরও ১০টি গ্র্যান্ড স্লাম। ১৩ থেকে নিজের শিরোপা সংখ্যাটাকে উন্নীত করেছেন ২৩-এ।এবারও সেরেনার 'শেষ' দেখে ফেলেছেন কেউ কেউ। বিয়ে, মাতৃত্বের বিরতিতে টানা চারটি গ্ল্যান্ড স্লামে অংশ নেননি। কোর্টে ফিরে টানা আটটি গ্র্যান্ড স্লামে খেলেও শিরোপাশূন্য। ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে এত প্রলম্বিত শিরোপা-খরা আগে দেখা যায়নি। সবশেষ এ বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে যখন বিদায় নিলেন সেরেনা, তাঁর আরও একটি গ্র্যান্ড স্লাম জেতা নিয়ে সন্দিহানদের দলে যোগ দিলেন খোদ মার্গারেট কোর্টও। তাঁকে ছুঁয়ে ফেলা কিংবা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্নে বললেন, 'আমি জানি না।'

কিন্তু সেরেনা যেন জানেন তিনি পারবেন। এটা ঠিক যে টানা আটটি গ্র্যান্ড স্লামে তাঁর শিরোপা নেই। কিন্তু ওই আটটি টুর্নামেন্টের চারটিতেই তো ফাইনাল খেলেছেন! বর্তমানে মেয়েদের টেনিসে চারটি গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনাল খেলা প্রতিযোগীই খুঁজে পাওয়া ভার। সেরেনার বড় বোন ভেনাসকে বাদ দিলে এখনো খেলেছেন, এমন তারকাদের মধ্যে এই অভিজ্ঞতা আছে শুধু বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার।গড়ে দুটো গ্র্যান্ড স্লাম খেলে যিনি একটিতে ফাইনালে উঠতে পারেন, তাঁর আরেকটি শিরোপা জয়ের আশা খুব দূরের ছবি কি! মোটেও তা নয়। এমনকি করোনার লম্বা বিরতিও সেরেনার খেলাটাকে প্রভাবিত করবে বলে মনে করেন না তাঁর কোচ প্যাট্রিক মুরাতোগলু। ২০১২ সালে যাঁর সান্নিধ্যে এসে সেরেনা ক্যারিয়ারকে নতুন বাঁকে নিতে পেরেছিলেন, সেই মুরাতোগলু বলছেন, সেরেনার যে বিশ্রামের দরকার ছিল, তার সুযোগ করে দিয়েছে করোনা। তাই ইউএস ওপেনে দেখা যাবে চাঙা সেরেনাকেই। আর সেরেনা বলছেন, 'ইউএস ওপেনে খেলার জন্য সত্যিই আমার তর সইছে না।'

তর সইছে না টেনিসপ্রেমীদেরও। সেরেনার ক্যারিয়ারের গতিপথটা যে নির্ধারণ করে দেবে এবারের ইউএস ওপেনই!