২ পয়েন্ট, ৬ ম্যাচ - রিয়ালকে টপকানোর আশা আছে বার্সার?

লিগের শেষেও মেসিদের হতাশ করে উচ্ছ্বাস সঙ্গী হতে পারে রামোসদের। ছবি: এএফপি
লিগের শেষেও মেসিদের হতাশ করে উচ্ছ্বাস সঙ্গী হতে পারে রামোসদের। ছবি: এএফপি
স্প্যানিশ লিগের শিরোপা দৌড়ে বার্সার সঙ্গে রিয়ালের লড়াইটা মৌসুমের শেষ দিন পর্যন্ত গড়াতে পারে

নিজের খেলোয়াড়েরা যাতে কোনোভাবেই গা এলিয়ে না দেয় তা নিশ্চিত করতে জিনেদিন জিদানের চেষ্টার কমতি নেই। 

এসপানিওলের মাঠে ১-০ গোলে হারিয়ে স্প্যানিশ লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে আরও জাঁকিয়ে বসেছে জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনার সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসেবে এগিয়ে থেকে এমনিতেই শীর্ষে ছিল রিয়াল, যদিও পয়েন্টে সমতা ছিল। শনিবার সেল্টা ভিগোর মাঠে বার্সেলোনার ২-২ গোলে ড্র আর কাল রাতে এসপানিওলের বিপক্ষে রিয়ালের জয় মিলিয়ে শীর্ষে এখন রিয়ালের একাধিপত্য। লিগে আর ম্যাচ বাকি আছে ৬টি, বার্সার চেয়ে ২ পয়েন্ট এগিয়ে রিয়াল। রিয়ালের পয়েন্ট ৭১, বার্সার ৬৯।
দুই দলের ফর্মের যা অবস্থা, মাঠের বাইরেও দুই দলের যে বিপরীতমুখী অবস্থার কথা শোনা যায় স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে, তাতে রিয়ালের ঘরেই এবার স্প্যানিশ লিগের শিরোপা যাচ্ছে বলে রায় দিয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু এখানেই জিদানের আপত্তি। কোচ তিনি, অন্য যে কারও মতো তো আর এই ভাবনাটা খেলোয়াড়দের মনে ঢুকতে দিতে পারেন না! পইপই করে তাই রিয়াল কোচ বলে যান, লিগের লড়াই শেষ দিন পর্যন্তই চলবে। বাকি সব ম্যাচই 'ফাইনাল' – হ্যাজার্ড-বেনজেমাদের কানে এই মন্ত্রটাই ছড়িয়ে দিচ্ছেন 'জিজু'।
শেষ দিন পর্যন্তই লিগের শিরোপা লড়াই চলবে কি না, তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে শেষ দিন পর্যন্ত সূচির যে অবস্থা, তাতে কার জন্য রাস্তাটা কেমন? রিয়াল না বার্সা – কার রাস্তাটা সহজ? প্রতিপক্ষ কে কেমন ফর্মে আছে, কতটা কঠিন বা সহজ হতে পারে ম্যাচগুলো?
বাকি ছয় ম্যাচের প্রতিপক্ষের নামগুলো আগে দেখে নেওয়া যাক -
বার্সার প্রতিপক্ষ   রিয়ালের প্রতিপক্ষ
অ্যাটলেটিকো     গেতাফে
ভিয়ারিয়াল         বিলবাও
এসপানিওল       আলাভেস
ভায়াদোলিদ        গ্রানাদা
ওসাসুনা            ভিয়ারিয়াল
আলাভেস          লেগানেস

করোনাভাইরাসের কারণে এখন ম্যাচগুলো দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হয় বলে এক ভ্রমণক্লান্তি ছাড়া হোম বা অ্যাওয়ে ম্যাচে হয়তো তেমন পার্থক্য নেই। তবু ঘরের না পরের – কোন মাঠে খেলা, সেই হিসেবে রিয়াল-বার্সা দুই দলই আছে সমতায়। দুই দলেরই তিনটি ম্যাচ নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। বার্সার ঘরের মাঠে ম্যাচ তিনটি অ্যাটলেটিকো, এসপানিওল ও ওসাসুনার বিপক্ষে। যেতে হবে ভিয়ারিয়াল, ভায়াদোলিদ ও আলাভেসের মাঠে। আর রিয়াল ঘরের মাঠে আতিথ্য দেবে গেতাফে, আলাভেস ও ভিয়ারিয়ালকে। প্রতিপক্ষের মাঠে ম্যাচ তিনটি – বিলবাও, গ্রানাদা ও লেগানেস।

কাগজে-কলমে হয়তো বার্সেলোনার পরের তিনটি ম্যাচই বেশি কঠিন মনে হবে। কাল রাতে অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে খেলবে বার্সা। পয়েন্ট তালিকার ৩ নম্বরে থাকা ডিয়েগো সিমিওনের দলের বিপক্ষে ম্যাচটাই লিখে দিতে পারে বার্সার শিরোপাভাগ্যের উপসংহার। বাকি ছয় ম্যাচের মধ্যে কাগজে-কলমে এই ম্যাচেই যে বার্সার পয়েন্ট হারানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এরপর মেসিরা যাবেন পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে থাকা ভিয়ারিয়ালের মাঠে। তারপর প্রতিপক্ষ হয়ে আসবে এসপানিওল – লিগের পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকলেও যারা বার্সেলোনার নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ডার্বির একটা উত্তেজনা থাকবেই! ভায়াদোলিদ (১৪তম), ওসাসুনা (১১) ও আলাভেস (১৬) – বার্সার বাকি তিন প্রতিপক্ষই অবশ্য পয়েন্ট তালিকার দশের নিচে।
রিয়ালের জন্য কাজটাও অবশ্য মোটেও সহজ নয়। বাকি ছয় ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই যে প্রতিপক্ষ এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকার দশের মধ্যে। বৃহস্পতিবার রিয়াল খেলবে এই মৌসুমে চমক দেখানো গেতাফের (পয়েন্ট তালিকায় ৬-এ) বিপক্ষে, এরপর জিদানের দল যাবে ৯-এ থাকা বিলবাওয়ের মাঠে। কঠিন এই দুই পরীক্ষা পার হওয়ার পর রিয়ালের অপেক্ষায় বাকি চার দলের মধ্যে ভিয়ারিয়াল আছে পয়েন্ট তালিকার ৫-এ, গ্রানাদা ১০-এ। আলাভেস (১৬) ও লেগানেসই (১৯) শুধু নিচের দশ দলের মধ্যে।
ফর্মের বিচারে রিয়াল-বার্সা দুই দলেরই পরীক্ষা নিতে পারে ভিয়ারিয়াল। করোনা বিরতি কাটিয়ে ফেরার পর ৫ ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে ইয়োলো সাবমেরিনরা, ড্র করেছে শুধু সেভিয়ার সঙ্গে। ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে মুখোমুখি লড়াইয়ে অতীত পরিসংখ্যান অবশ্য রিয়ালকে ঘিরেই শঙ্কা জাগাবে বেশি। ইয়োলো সাবমেরিনদের বিপক্ষে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে রিয়ালের জয় শুধু ১ ম্যাচে, হেরেছে ১ ম্যাচে, বাকি ৩টি ড্র। মজার ব্যাপার, ৩টি ড্র-ই ২-২ গোলে। ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে বার্সার পরিসংখ্যান? ৪ জয়, ১ ড্র! জিদানের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে ভিয়ারিয়াল।
বার্সার জন্য অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ যে বড় পরীক্ষা তা তো আর বলার দরকার হয় না, ডিয়েগো সিমিওনের দলের ফর্মও দারুণ। এই মৌসুমে অনেকটা সময় ফর্মে উত্থান-পতন দেখা অ্যাটলেটিকো করোনার বিরতি থেকে ফেরার পর প্রথম ম্যাচে বিলবাওয়ের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করলেও পরের চারটি ম্যাচেই জিতেছে। বার্সার সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য অ্যাটলেটিকোর রেকর্ড রিয়ালকে খুব একটা আশা দেখাবে না। গত ডিসেম্বরে এই অ্যাটলেটিকোর কাছেই হেরে বার্সা সুপারকাপ থেকে বাদ পড়েছে বটে, যা শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে বার্সার সে সময়কার কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের চাকরি। তবে লিগে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে বার্সার বিপক্ষে ৩ বারই হেরেছে সিমিওনের দল, বাকি ২ ম্যাচ ড্র।
অন্যদিকে রিয়ালের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে রিয়াল-বার্সার পাশাপাশি স্প্যানিশ লিগের ঐতিহ্যবাহী আরেক দল অ্যাথলেটিক বিলবাও। লিগে দুই দলের মুখোমুখি সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের রেকর্ড তা-ই বলে। এই ৫ ম্যাচে রিয়ালের জয় কেবল ১টি, বাকি ৪টি ম্যাচই ড্র! বিলবাওয়ের ফর্মও খুব একটা মন্দ নয়। করোনা বিরতির পর ৫ ম্যাচের মধ্যে বাস্ক অঞ্চলের ক্লাবটি হেরেছে শুধু বার্সেলোনার কাছে (১-০), বাকি চার ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ২টি, ড্র ২টি।
তবে খেলাটা তো মাঠের ৯০ মিনিটেই হবে। রেফারির বাঁশির পর অতীতের এসব হিসেব-নিকেশ, ফর্মের বিশ্লেষণ খুব একটা প্রভাব হয়তো ফেলে না। সেখানে জিদানের একটা সন্তুষ্টি থাকবে। করোনার বিরতির পর রিয়াল যেখানে সব ম্যাচই জিতেছে, বার্সেলোনা ধুঁকছে। কোচের সঙ্গেও বার্সার খেলোয়াড়দের বনছে না বলে গুঞ্জন ভাসছে বাতাসে।
সব মিলিয়ে দুই মৌসুম পর লিগ শিরোপাটা আবার মাদ্রিদের কূলীন ক্লাবটিতে দেখার আশা করতেই পারেন রিয়াল ভক্তরা।