'ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে'র প্রধান যখন বড় জুয়াড়ি

ম্যাচ পাতানোর অনেক ঘটনাতেই ভারতীয় জুয়াড়িদের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে এসেছে। ফাইল ছবি
ম্যাচ পাতানোর অনেক ঘটনাতেই ভারতীয় জুয়াড়িদের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে এসেছে। ফাইল ছবি

‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ জিনিসটা কী? এই সংস্থার প্রধান রাভিন্দর ডান্ডিওয়ালই-বা কে? লোকটা একজন জুয়াড়ি আর তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে পরিচয় হিসেবে দেওয়া আছে তিনি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান। ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ জানিয়েছে, অস্ট্রেলীয় পুলিশ সম্প্রতি এই ডান্ডিওয়ালের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে। ‘ভদ্রলোক’ শুধু ক্রিকেটেই নয়, তাঁর জুয়ার কালো থাবা প্রসারিত করেছেন টেনিসেও।

আইসিসির এক কর্মকর্তা কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, তাঁরা সাম্প্রতিককালে যে ৫০টি ম্যাচ পাতানোর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছেন, তার বেশির ভাগই ভারত-সংশ্লিষ্ট। অস্ট্রেলীয় পুলিশের ভাষ্যমতে, মোহালিভিত্তিক জুয়াড়ি ডান্ডিওয়াল আছেন আইসিসির সন্দেহের তালিকাতেও। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিসিআই) তাঁকে সন্দেহ করে।

বিসিসিআইয়ের দুর্নীতি দমন ইউনিটের প্রধান অজিত সিং জানিয়েছেন, ডান্ডিওয়ালের ওপর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সব সময়ই কড়া নজরদারি করে চলেছে। বিসিসিআই দেখছে, এই লোক কোনো ভারতীয় ক্রিকেটারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কি না।

এদিকে ডান্ডিওয়ালের ‘ক্রিকেট কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ নামে সংস্থাটি যে প্রতারণার জন্যই বানানো হয়েছে, সেটি জানেন অজিত সিং, ‘এই সংস্থার লোগোর সঙ্গে বিসিসিআইয়ের লোগোর মিল আছে। এমন কাজ অনেক প্রতারকই করে থাকেন। আমাদের কাছে এ বিষয়ে অনেক অভিযোগও আসে। তাঁরা বিসিসিআইয়ের মতো লোগো বানিয়ে ভিজিটিং কার্ডও ছাপায়। এটা পুরোপুরিই প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।’

ডান্ডিওয়ালের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও তথ্য আছে বিসিসিআইয়ের দুর্নীতি দমন ইউনিটের কাছে, ‘তিনি ভারতের বাইরে ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট আয়োজনের সঙ্গে জড়িত। আফগান প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে দুই বছর আগে জড়িত ছিলেন। নেপালেও ক্রিকেট আয়োজন করেছেন তিনি। ব্যাংককেও একটি লিগ আয়োজনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি অস্ট্রেলিয়াতে ক্রিকেট আয়োজনের নামে আদম ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। ক্রিকেটার সাজিয়ে তিনি অনেককে অস্ট্রেলিয়াতে নিয়ে গেছেন, তাঁরা সেখান থেকে আর ফেরেননি। মোহালি পুলিশের কাছেও এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ ফাইল করা হয়েছে।’

ভারতের মাটিতে যেকোনো ক্রিকেট লিগ আয়োজনই যে বিসিসিআইয়ের নজরদারিতে থাকে, সেটাও জানিয়েছেন বোর্ডের দুর্নীতি দমন প্রধান, ‘অননুমোদিত ক্রিকেট লিগ আয়োজন ভারতের মাটিতে বেশ কঠিনই। কিছুদিন আগে রাজপুতানা প্রিমিয়ার লিগ নামে একটি অননুমোদিত টি-টোয়েন্টি লিগ বন্ধ করা হয়েছে। খেলোয়াড়েরাও এ ব্যাপারে অনেক সাবধান। এসব লিগ টেলিভিশনে সম্প্রচার করার ব্যাপারেও অনেক নিয়মকানুন আছে। কোনো লিগ আয়োজিত হলেও বিসিসিআই যদি মনে করে, সেটার মধ্যে সমস্যা আছে, তাহলে বিভিন্ন রাজ্য ইউনিটকে বলে দেওয়া হয়, সেসব লিগে যেন কোনো খেলোয়াড় অংশ না নেন।’

ভারতে আইনত জুয়া নিষিদ্ধ (ঘোড়দৌড় অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে)। কিন্তু তারপরও সেখানে খেলাধুলাসংক্রান্ত নিষিদ্ধ জুয়া যথেষ্ট রমরমা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিভিন্ন ক্রিকেটারকে ম্যাচ পাতানোয় প্রলোভিত ও প্রভাবিত করার যেসব ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে, তার অনেকগুলোর সঙ্গেই ভারতীয় জুয়াড়িদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।