ভিলিয়ার্স জানালেন হঠাৎ কেন অবসর নিয়েছিলেন

২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিতে হার বড় প্রভাব রেখেছিল ডি ভিলিয়ার্সের অবসর ঘোষণায়। ফাইল ছবি
২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিতে হার বড় প্রভাব রেখেছিল ডি ভিলিয়ার্সের অবসর ঘোষণায়। ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এ বি ডি ভিলিয়ার্সের অবসরের ঘোষণাটা অবাক করেছিল বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমীকেই। দুই বছর আগে হুট করে এক ভিডিও বার্তায় সব সংস্করণের ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। কিন্তু কেন সেদিন এই হৃদয়ভাঙা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তাকে? কতটা বেদনায় হৃদয়টা ক্ষত হয়েছিল বলে এই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স? ক্রিকবাজের একটি অনুষ্ঠানে সেই রহস্যটা খোলাসা করেছেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলেকে।

ডি ভিলিয়ার্সের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কাজ করেছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের দুঃখটা। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ওই বিশ্বকাপে অধরা শিরোপার দিকে একটু একটু করে এগিয়েও যাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। অকল্যান্ডে সেদিন স্নায়ুক্ষয়ী লড়াইয়ে ৪ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টিবিঘ্নিত রোমাঞ্চকর ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতে জিতে যায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ওই ম্যাচে হারের দুঃখটা কিছুতেই মানতে পারেননি ডি ভিলিয়ার্স। তাঁর কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্য এখনো নাড়া দেয় ক্রিকেটপ্রেমীদের। আরেকটি বিশ্বকাপ যখন দুয়ারে এর ঠিক আগে দেন অবসরের ঘোষণা।

ওই সিদ্ধান্তটা নিতে অনেক কষ্ট হয়েছিল ডি ভিলিয়ার্সের, ‘সমালোচনার দৃষ্টিকোণ থেকে বলব না যে প্রভাব ছিল। তবে, ব্যক্তিগত দিক থেকে বললে এটা অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল। আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতেই হতো এবং করেছিলামও। কিন্তু আমার মনে হলো, না, আমি এই বিশ্বকাপ খেলতে পারব না। এটা খুব বেদনাদায়ক ব্যাপার ছিল। এই ধরনের ব্যাপারগুলো আমার অনুভূতি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অন্যান্য বিষয়েও বড় প্রভাব ফেলে।'

২০১৫ বিশ্বকাপে দলটির অধিনায়কত্ব করছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। দলকে চ্যাম্পিয়ন করার আশায় গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে। কিন্তু সেমি-ফাইনালে হারের পর নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না। ওই সেমিফাইনাল নিয়ে বলছিলেন, ‘আমরা জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে যেভাবে খেলেছি, তাতে গর্বিত। ইডেন পার্কে সেদিনের সন্ধ্যায় বারবার ম্যাচের গতি বদলাচ্ছিল। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ম্যাচ হয়েছিল সেদিন। আমরা খুব কাছে ছিলাম। পেছনে ফিরে তাকালে আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে এখনো আমি গর্ববোধ করি।’

তবে ওই ম্যাচ হারের পর প্রচুর সমালোচনা শুনতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১১৪ টেস্ট, ২২৮ ওয়ানডে ও ৭৮ টি-টোয়েন্টি খেলা ডি ভিলিয়ার্সের, ‘কিন্তু পরের ১২ মাস আমার জন্য খুবই কঠিন সময় ছিল। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে আমার আরও খোলামেলা কথা বলা উচিত ছিল। ওই সময় মনে হয়েছিল, আমি যেন একা। সাহায্য না চেয়ে কিংবা এটা নিয়ে কথা না বলে নিজেকে একা বলাটা নির্বোধের মতো শোনায়।’

এমন অবস্থায় আর কখনোই নিজেকে নিয়ে যেতে চান না ডি ভিলিয়ার্স, ‘যদি এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আবার যেতে হয়, সম্ভবত কোচ, প্রশাসকদের সঙ্গে খোলা মনে আলোচনা করব। সঙ্গে নিজের আগামীর পথচলা নিয়ে আলোচনা করব। আমার উচিত ছিল, তাদের সঙ্গে আমার আবেগ ভাগাভাগি করা। যা কিছু আমাকে বিব্রত করছে সেগুলি নিয়ে কথা বলা। কিন্তু আমি করিনি।'

গত বছর ইংল্যান্ডে হওয়া সর্বশেষ বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্সের অনুপস্থিতি যে কতটা ভুগিয়েছে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১০ দলের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে সপ্তম হয়ে দেশে ফেরার বিমান ধরে প্রোটিয়ারা।