সুশি খাইয়ে, দ্য লাস্ট ডান্স দেখিয়ে রোবনেকে পেয়েছে যে দল

অবসর ভেঙে রোবেন ফিরেছেন তাঁর প্রথম ক্লাব গ্রোনিয়া। ফাইল ছবি
অবসর ভেঙে রোবেন ফিরেছেন তাঁর প্রথম ক্লাব গ্রোনিয়া। ফাইল ছবি
>রোবেনকে পেতে বেশ কাঠখড়ই পোড়াতে হয়েছে গ্রোনিয়ার ক্রীড়া পরিচালন মার্ক-ইয়ান ফ্লেডেরুস ও মহাপরিচালক ভল্টার গুডেকে। রোবেন অবসর নেওয়ার পরপরই তাঁরা দুজন জার্মানি চলে গিয়েছিলেন। রোবেনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে গ্রোনিয়া‍য় আসার প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রোবেন সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছিলেন

বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে গত মৌসুমটা শেষ করেই বুট জোড়া ঝুলিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন আরিয়েন রোবেন। বিদায় বলে দিয়েছেন খেলোয়াড়ি জীবনকে। সেই রোবেনই আবার এ বছর নাম লিখিয়েছেন ফুটবলে, হল্যান্ডের ছোট্ট ক্লাব গ্রোনিয়ার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাবেক ডাচ তারকা।

অবসর ভেঙে যখন ফিরলেনই, তাহলে এমন অখ্যাত একটা ক্লাবে কেন? গ্রোনিয়া যে তাঁর সাবেক দল। এই ক্লাবেই ফুটবলের হাতেখড়ি রোবেনের, পেশাদার ফুটবলে প্রথম পা রাখাও এখানেই। গ্রোনিয়া‍য় খেলতে খেলতেই নিজেকে উঠতি তারকা হিসেবে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে প্রথম কিনে নিয়েছিল হল্যান্ডেরই আরেক ক্লাব পিএসভি। এরপর তো সবকিছু স্বপ্নের মতো কেটেছে—পিএসভি থেকে চেলসি, সেখান থেকে রিয়াল মাদ্রিদ হয়ে বায়ার্ন মিউনিখ।

কিন্তু অবসর ভেঙে এসব বড় ক্লাবে কখনোই খেলতেন না রোবেন। গ্রোনিয়া‍র ঋণ শোধার তাড়না থেকেই ক্লাবটিতে নাম লিখিয়েছেন তিনি, ‘এটা অসাধারণ এক ব্যাপার। এই ক্লাবের একাডেমি থেকে আমি উঠে এসেছি। এখানেই বেড়ে উঠেছি। নিজেকে আমি প্রশ্ন করেছে এটা (অবসর ভেঙে ফেরা) কেন করছি আমি? উত্তরটা সহজ—আমি ক্লাবটিকে ভালোবাসি এবং এই ফেরাটা আনুগত্য থেকে। আমি হয়তো অন্য কোনো ক্লাবের জন্যই অবসর ভাঙতাম না। এমনকি বায়ার্নের জন্যও না।’

তবে রোবেনকে পেতে বেশ কাঠখড়ই পোড়াতে হয়েছে গ্রোনিয়া‍র ক্রীড়া পরিচালন মার্ক-ইয়ান ফ্লেডেরুস ও মহাপরিচালক ভল্টার গুডেকে। রোবেন অবসর নেওয়ার পরপরই তাঁরা দুজন জার্মানি চলে গিয়েছিলেন। রোবেনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে গ্রোনিয়া‍য় আসার প্রস্তাব দেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রোবেন সরাসরি ‘না’ বলে দিয়েছিলেন। মন খারাপ করে হল্যান্ডে চলে এলেও হাল ছাড়েননি ফ্লেডেরুস ও গুডে। আবার তাঁরা জার্মানিতে যান, এবার অবশ্য আটঘাট বেঁধেই।

জার্মানি যাওয়ার আগে রোবেনের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন গ্রোনিয়া‍র দুই কর্মকর্তা। এরপর হঠাৎ একদিন গিয়ে রোবেনের সঙ্গে দেখা করেন। ফ্লেডেরুস বলেন, ‘(এ বছরের ) ২১ মে (রোবেনের স্ত্রী) বেরনাডিয়েনের নিমন্ত্রনে আমরা মিউনিখ যাই। রোবেনকে বিস্ময় উপহার দিয়েছি আমরা। এই সাক্ষাৎপর্বটা ছিল অসাধারণ।’

রোবেন ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে একটি রেস্তোরাঁয় চলে যান ফ্লেডেরুস ও গুডে। সেখানেই কথাবার্তা পাকা করেন। তবে রোবনকে আবেগী করে তুলতে একটু মাথা খাটাতে হয়েছে তাঁদের। সেটা কীভাবে তাও বলেছেন ফ্লেডেরুস, ‘তাদের পছন্দের রেস্তোরাঁয় আমরা সুশি (জাপানি একটি খাবার) অর্ডার দিই। আমরা “ দ্য লাস্ট ডান্স” (এনবিএ তারকা মাইকেল জর্ডানের শেষ মৌসুম নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র) ও রোবেনের খেলার কিছু ফুটেজ সংকলন করে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেগুলো দেখানোর পর আমরা বলেছি, ক্লাবটিকে সাহায্য করার সেরা উপায় হচ্ছে আমাদের হয়ে তার খেলা।’

৩৬ বছর বয়সী রোবেন প্রস্তাবটিতে এবার রাজি হয়ে যান। রোবেন গ্রোনিয়া‍র হয়ে খেললে যে অর্থ-সংকটে পড়া তাঁর সাবেক ক্লাবটিকে বেশ সাহায্য করা হবে তা এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে। রোবেন ক্লাবটির সঙ্গে চুক্তি করার সঙ্গে সঙ্গেই ২০২০-২১ মৌসুমের আড়াই হাজার সিজন টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। বিক্রির ধুম পড়েছে রোবেনের ১০ নম্বর জার্সিরও! এখন বাস্কেটবল কিংবদন্তি মাইকেল জর্ডানের মতো রোবেনের ‘লাস্ট ডান্স’টা সুন্দর হলেই হয়। সেটা হওয়াটা যদিও একটু কঠিনই। কারণ, গ্রোনিয়া‍র আগামী মৌসুমের ডাচ শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা দেখার লোকের সংখ্যা খুব বেশি নেই!