চাঁদের হাটে আসছে 'পাগলাটে' এক চাঁদ

লিডস ইউনাইটেডের কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। প্রিমিয়ার লিগের ডাগ আউটে আসার অপেক্ষায় এই আর্জেন্টাইন কোচ। ছবি: টুইটার
লিডস ইউনাইটেডের কোচ মার্সেলো বিয়েলসা। প্রিমিয়ার লিগের ডাগ আউটে আসার অপেক্ষায় এই আর্জেন্টাইন কোচ। ছবি: টুইটার

খেলোয়াড় আসে খেলোয়াড় যায়। কোচ আসে কোচ যায়। শুধু ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে যায়। এই আসা যাওয়ার মাঝে ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় লিগের আকাশে কখনো তারকার অভাব পড়েনি। প্রায় সব সময় চাঁদের হাট! খেলোয়াড়দের কথা ধরলে ‘প্রায়’ শব্দটাও ছাঁটতে চাইবেন অনেকে। কোচদের ক্ষেত্রে? স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন, আর্সেন ওয়েঙ্গারদের সময়েও রাফায়েল বেনিতেজ, হোসে মরিনহো, ববি রবসনরা ছিলেন। এখন যেমন আছেন পেপ গার্দিওলা, ইয়ুর্গেন ক্লপ, মরিনহো, কার্লো আনচেলত্তি, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডরা। অর্থাৎ কোচদের আকাশেও আলোর ছটা।

চাইলে সেখানে যোগ করতে পারেন এক ‘পাগলাটে’ তারকাকে। ফুটবল তাঁর ধ্যান–জ্ঞান। কোচিং প্রজ্ঞায় এই আর্জেন্টাইনের সমকক্ষ মানুষ আছেন হাতেগোনা। তাঁর কাছ থেকেই কোচিং ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, দীক্ষা নিয়েছেন পেপ গার্দিওলা, মরিসিও পচেত্তিনো, হোর্হে সাম্পাওলি, এদুয়ার্দো বেরিজ্জো, জেরার্ডো মার্টিনোর মতো কোচ। তবে অতি প্রতিভাবান বলেই কি না, মার্সেলো বিয়েলসার স্বভাবটা বেশ পাগলাটে। যে কারণে তাঁর ডাকনামই হয়ে হয়ে গিয়েছে ‘এল লোকো’ বা ‘পাগল’! হ্যাঁ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের আকাশে তারকা কোচদের কাতারে এখন বিয়েলসাকে দেখার অপেক্ষা। তাতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ডাগ আউট হবে আরেকটু জমজমাট, ক্ষীর!

ইংল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় লিগ তিনবার জিতেছে লিডস। প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগের মৌসুমের চ্যাম্পিয়নও তারা। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন লড়ছে দ্বিতীয় বিভাগে (চ্যাম্পিয়নশিপ)। বিয়েলসা এসে তাদের লড়াইটা তুলে দিচ্ছেন আরও এক ধাপ ওপরে। কাল দ্বিতীয় বিভাগে ব্লাকবার্ন রোভার্সকে ৩–১ গোলে হারায় লিডস। টেবিলে দ্বিতীয় দলের সঙ্গে ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বিয়েলসার দল। তৃতীয় ব্রেন্টফোর্ডের চেয়ে ৬ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে লিডস। ‘দ্য মেইল’–এর প্রতিবেদক রিচার্ড গিবসন তাই লিখেছেন, লিডস ‘প্রিমিয়ার লিগে পা রাখা থেকে আর মাত্র এক ধাপ দূরে।’ সে হিসেবে গার্দিওলা, ক্লপ, মরিনহো, ল্যাম্পার্ডদের সঙ্গে যোগ হচ্ছেন আরও এক তারকা কোচ; বিয়েলসা।

সত্যি বলতে ১৯৯২–৯২ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ চালুর পর ডাগ আউটে কখনো তারকা কোচের অভাব পড়েনি। সব দলে না হলেও প্রায় অর্ধেক দলেই দেখা গেছে তারকা কোচ, এমনকি ইংল্যান্ডের বাইরে তারকাখ্যাতি সেভাবে না থাকলেও ঘরোয়ায় হ্যারি রেডন্যাপ, স্যাম অ্যালারডাইস, ডেভিড ময়েসরা শ্রদ্ধা কুড়িয়েছেন। এখন তো চাঁদের হাট বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না। ক্লপ, গার্দিওলা কিংবা মরিনহো, আনচেলত্তিদের মতো হেভিওয়েট কোচদের আলাদা কাতারে রাখলেও কাজ ফুরোবে না। আর্সেনালে ৩৮ বছর বয়সী মিশেল আরেততা যেমন আছেন তেমনি ক্রিস্টাল প্যালেসের দায়িত্বে আছেন ৭২ বছর বয়সী রয় হজসন। বয়স ও অভিজ্ঞতায় দুজন উত্তর–দক্ষিণ মেরুতে থাকলেও ডাগ আউটে কিন্তু তারকাই। আরতেতা বয়সে তরুণ হলেও তাঁর খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে এ ক্ষেত্রে বড় সুবিধা করে দিয়েছে।

কিংবা ওলে গুনার সুলশারের কথাই ধরুন। ২০১৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ হওয়ার আগে তাঁকে সবাই ‘শিশু চাহনির আততায়ী’ হিসেবে চিনেছে। সেটি ইউনাইটেডের জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানোর জন্য। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের কোচ হয়ে আসার পর একেবারে খারাপও করছেন না সুলশার। যদিও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নামের ভারের সঙ্গে টেবিলে পঞ্চমস্থান ভক্তদের জন্য মেনে নেওয়া কঠিন। তবু ডাগ আউটে সুলশার তারকা কোচের মর্যাদাই পেয়ে থাকেন। ডেভিড ময়েসের ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড অবনমন অঞ্চল থেকে ৩ পয়েন্ট দূরে থাকলেও ইংলিশ ফুটবলে নামটা কিন্তু এভারটনের ময়েস। এখন অবশ্য সেই এভারটনের দায়িত্বে আছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলেরই অন্যতম প্রজ্ঞাবান কোচ আনচেলত্তি। প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা আনচেলত্তির কাতারে রাখা হয় গার্দিওলা, মরিনহো, ক্লপদের।

ক্লপের অবশ্য এখন বৃহষ্পতি তুঙ্গে। লিভারপুলকে ৩০ বছর পর এবার লিগ জিতিয়েছেন। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে থাকতেই তারকা বনে গিয়েছিলেন ক্লপ। খেলানোর কৌশল, ফুটবলের প্রতি আবেগ আর সোজা কথাটা সোজা করেই বলার অভ্যাস তাঁকে বাকিদের চেয়ে কিছুটা আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। যেমন মরিনহোও। ইউনাইটেড থেকে টটেনহাম হটস্পারের দায়িত্ব নিয়ে তেমন ভালো করতে পারছেন না তিনি। প্রায় মাঝ টেবিলে তাঁর দল। তবু লোকটার নাম যেহেতু মরিনহো আর তাঁর ঝুলিতে যেহেত প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পদক; তাই সমীহটুকু আপনাই জাগে।

যেমন জাগছে বিয়েলসার ক্ষেত্রেও। দ্বিতীয় বিভাগ থেকে কোনো দল প্রথম বিভাগে উঠে আসছে, এটা নতুন কিছু না। প্রতি মৌসুমের ব্যাপার। কিন্তু উঠে আসার পথে থাকা তেমন একটি দলের কোচ বিয়েলসা হওয়ায় কথাটা উঠছে, প্রিমিয়ার লিগের ডাগ আউটে তো তারকা দিয়ে ভরে যাচ্ছে!