কাল থেকে 'কল্পবিজ্ঞান' ক্রিকেট দেখবেন তো?

স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোণে থাকবে হাত জীবাণুমুক্ত করার স্যানিটাইজার। করোনাকালের ক্রিকেটে কি এটাই হবে সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য? ছবি: টুইটার
স্টেডিয়ামের প্রতিটি কোণে থাকবে হাত জীবাণুমুক্ত করার স্যানিটাইজার। করোনাকালের ক্রিকেটে কি এটাই হবে সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য? ছবি: টুইটার

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কথাটা মুখে মুখে ঘুরেছে। করোনাকাল কেটে গেলে পৃথিবী আর আগের মতো থাকবে না। তাহলে ক্রিকেট আগের মতো থাকে কীভাবে?

না, ব্যাট–বলের খেলাটা থাকছে ঠিকই। ক্রিকেটের মৌলিক কোনোকিছু সেভাবে পাল্টাচ্ছে না। শুধু স্বাস্থ্যবিধি মানতে সাবধানতার অংশ হিসেবে যোগ করা হয়েছে কিছু বিধিনিষেধ। তাতে খেলাটার বাহ্যিক পরিবর্তন তো কিছু হবেই। কাল থেকেই দেখা যাবে ক্রিকেটের এই পাল্টে যাওয়া। দীর্ঘ ১১৭ দিন পর ফিরছে ছেলেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। করোনাকালের মধ্যেই বিধিনিষেধ মেনে সাউদাম্পটনে কাল টেস্ট খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড।

ক্রিকেটপ্রেমীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ভাবতে পারেন, যাক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তাহলে ফিরল! তবে গত ১৪৩ বছর ধরে সবাই টেস্ট ক্রিকেটের যে চিরায়ত রুপ দেখে অভ্যস্ত তার সঙ্গে এ টেস্টের কিছু ফারাক থাকায় মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হতেই পারে। করোনাভাইরাসের কারণে ক্রিকেটের পাল্টে যাওয়ার প্রমাণ হয়ে থাকবে সেই 'ফারাক'টুকু, আর তা চালু থাকবে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। তাই এটা নিশ্চিত যে খেলাটা আর আগের মতো থাকছে না।

মূল ভয়টা করোনার সংক্রমণ নিয়ে। তা যতটুকু সম্ভব সেই বিপদ এড়াতে কিছু নিয়ম বেঁধে দিয়েছে আইসিসি। প্রথম কাজটা হলো 'জীবাণুমুক্ত মাঠ'। সেজন্য দর্শকহীন গ্যালারি, বলে লালা মাখানোয় নিষেধাজ্ঞা তো আছেই। ক্রিকেটারদের থাকতে হবে স্টেডিয়াম লাগোয়া হোটেলে। টেস্ট চলাকালীন প্রতিদিনই তাদের শারীরিক অবস্থার (দৈনন্দিন স্বাস্থ্য প্রতিবেদন) খেয়াল রাখা হবে এবং কোভিড–১৯ পরীক্ষা করানো হবে। মাঠের সব জায়গাতেই চলাচল সংরক্ষিত থাকছে। সংবাদমাধ্যমের চলাচল ও খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগও থাকছে সীমিত। এমনকি প্রতিদিনের খেলা শেষে 'প্লেয়ার্স জোন'–এ ক্রিকেটাররা আগে যেভাবে কথা বলতেন সেটিও সাজানো হবে আইসিসির বিধিনিষেধের অধীনে। মোট কথা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে চেষ্টার কমতি রাখছে না ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)।

সে জন্য স্বাগতিকদের আম্পায়ারই থাকছে টেস্টে। কাল মাঠের আম্পায়ার থাকবেন ইংল্যান্ডের মাইকেল গফ ও রিচার্ড কেটেলবরো। টিভি আম্পায়ার, রিজার্ভ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারিও ইংল্যান্ডের। আয়োজক দেশের বাইরের কোনো আম্পায়ার টেনে এনে তাঁকে ঝুঁকিতে না ফেলাই লক্ষ্য আইসিসির। এ নিয়ে একটা সমস্যাও আছে। যেহেতু স্বাগতিক আম্পায়ার ব্যবহার করতে হবে তাই সব আম্পায়ার যে অভিজ্ঞ হবে তা নয়। এ কারণে টেস্টে প্রতি ইনিংসে তিনবার ডিআরএসের সাহায্য নিতে পারবে দলগুলো। টেস্ট চলাকালীন কোনো ক্রিকেটার কোভিড–১৯ পরীক্ষায় 'পজিটিভ' হলে ম্যাচ রেফারির অনুমতি নিয়ে থাকছে 'লাইক ফর লাইক' (প্রায় একই রকম) বদলি ক্রিকেটার মাঠে নামানোর সুযোগ। ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টিতে অবশ্য এই নিয়ম নেই।

ক্রিকেটারদের জন্য বড় সমস্যা হতে পারে বলে লালা মাখানোর নিষেধাজ্ঞা। এ তো বোলারদের আবহমানকালের সংস্কৃতি। বল উজ্জ্বল রেখে সুইং আদায় করতে এ কৌশলটা খাটানো হয়। যেহেতু বোলাররা এই কৌশলে অভ্যস্ত তাই কাল টেস্টের প্রথম দিন থেকেই সমস্যাটা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দেখা যাবে মনের ভুলে কেউ বলে লালা মাখাচ্ছেন। আইসিসি এখানে খানিকটা ছাড় দিয়েছে। এমনকিছু ঘটলে প্রতি ইনিংসে দুবার সতর্ক করবেন মাঠের আম্পায়ার।

কিন্তু এরপরও কেউ ভুল করে বলে লালা মাখালে ৫ রান 'পেনাল্টি'—অর্থাৎ এ কয়টি রান যোগ হবে ব্যাটিং করা দলের খাতায়। এখানেই শেষ নয়, বলে কেউ লালা মাখালে তা জীবাণুমুক্ত করে তবেই খেলা শুরু করবেন আম্পায়াররা। ইংলিশ পেসার মার্ক উড এভাবে ক্রিকেট খেলা আর কল্পবিজ্ঞান সিনেমার সঙ্গে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন না,' মনে হচ্ছে কোনো কল্পবিজ্ঞানের সিনেমা। সব জায়গায় হাত ধোয়ার জীবাণুনাশক থাকছে। সিড়িতে তির চিহৃ, কোথায় কোনদিক দিয়ে যেতে হবে সেটিও বলে দেওয়া।' সতীর্থদের নিয়ে একসঙ্গে খাবারও খেতে পারবে না কেউ। খাওয়ার জন্য প্রতিটি ক্রিকেটার আলাদা ডেস্ক পাবেন। উডের ভাষায়, 'স্কুলের দিনগুলো মনে পড়ছে। সবাই মাস্ক পড়ে থাকবে। কে শত্রু কে বন্ধু বোঝার উপায় নেই। বিষয়টি অদ্ভুত হলেও মানিয়ে নিতে হবে।'

তা তো নিতেই হবে। ইউরোপে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ব্রিটেনে, ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর তাই খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের জন্য 'বায়ো বাবল' পরিবেশের মধ্যে রাখবে ইসিবি। এর মধ্যে নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক মানুষ চলাচল করতে পারবেন। প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ বর্গফুটের মতো জায়গা 'বায়ো বাবল' বা জীবাণুমুক্ত পরিবেশের অধীনে থাকবে। এর আগে ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি জার্সিতে বুকের ওপর স্পনসরদের লোগো ব্যবহার করা যেত। করোনার মধ্যে আগামী ১২ মাস টেস্টে নিজেদের জার্সি ও সোয়েটারে স্পনসরদের লোগো ব্যবহার করা যাবে।

এই যে এত পরিবর্তন তা দেখার জন্যও তো লোক লাগবে। ভাবনা কী! কাল টিভির সামনে বসে যান। দেখুন, করোনাকালে কল্পবিজ্ঞানের ক্রিকেট। এ ছাড়া আর উপায় কী!