মোস্তাফিজকে মহিষখামারি বানিয়েছে করোনা

মোস্তাফিজ দিন গুণছেন কবে যাবে করোনাকাল। ছবি: প্রথম আলো
মোস্তাফিজ দিন গুণছেন কবে যাবে করোনাকাল। ছবি: প্রথম আলো
>বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ তারকা ক্রিকেটারই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। এ করোনাদিনে কখনো তাঁরা আসছেন অনলাইন আড্ডায়, কখনোবা তাঁরা নিজেই জানিয়ে দিচ্ছেন নিজের সর্বশেষ খবর। কিন্তু মোস্তাফিজ সক্রিয় নেই কোথাও। সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে ডুব দিয়ে থাকা বাঁহাতি পেসার জানালেন তাঁর বর্তমান দিনকালের কথা

মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করলেই তাঁর অবধারিত দুটি প্রশ্ন: দেশের করোনাপরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? এর সমাধান কবে হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর যে এই মুহূর্তে নেই, তিনি নিজেও সেটা জানেন। তবুও আশার খবর শুনতে চান। জানতে চান, কবে টিকা আসবে, কবে স্থায়ী সমাধান আসবে। করোনায় বন্দী জীবনটা যে আর ভালো লাগছে না তাঁর!

কবুতরের 'ডাবল সেঞ্চুরি'
করোনায় দেশের সব খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই সাতক্ষীরায় নিজের বাড়ি চলে গেছেন মোস্তাফিজ। শুরুর দিকে ফিটনেস, হালকা অনুশীলন করলেও পরে তাতে ছেদ পড়েছে। টানা চার মাস ক্রিকেটহীন জীবনে অবশ্য যোগ হয়েছে নতুন কিছু অনুষঙ্গ। কবুতর পোষা তাঁর পুরোনো শখ। এবার ক্রিকেটীয় ব্যস্ততা না থাকায় পুরো মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ হয়েছে সেটিতে। এপ্রিলে তাঁর পোষা কবুতর সংখ্যা ছিল ১৮১টি। তিন মাসে পূর্ণ হয়েছে 'ডাবল সেঞ্চুরি', এখন তাঁর কবুতর সংখ্যা ২২০টি। কবুতর পালনে সাফল্য নিয়ে মোস্তাফিজও খুশি, 'বাড়িতে আসার পর বাচ্চা রেখেছিলাম ২৮টা। কিছু কিনেছিলাম। কদিনের মধ্যে দেখি ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টিতে কবুতরের ক্ষতি হয় বলে এটি কমিয়ে ফেলার চিন্তা করছি।'

খামারেরএ মহিষ নিয়ে সময় কাটছে মোস্তাফিজের। ছবি: সংগৃহীত
খামারেরএ মহিষ নিয়ে সময় কাটছে মোস্তাফিজের। ছবি: সংগৃহীত

মনোযোগ এখন মহিষে
অনির্দিষ্ট সময়ের ছুটি পেয়ে মোস্তাফিজ মনোযোগ দিয়েছেন মহিষ পালনে। তাঁর পরিকল্পনা ছিল গরুর খামার করার। সেই চিন্তা থেকে পরে সরে এসেছেন। পরশু বিকেলে ঘেরের পানিতে গা ডুবিয়ে থাকা মহিষের ছবি পাঠিয়ে মোস্তাফিজ জানালেন তাঁর মহিষখামারি হওয়ার গল্প, 'যেহেতু কিছু করার নেই, ভাবলাম কিছু একটা করি। দুটো গাভী মহিষ কিনে ফেললাম। মহিষের দুধ খুব ভালো লাগে। আগের ঈদে তিনটি কিনেছিলাম। এবার যোগ হয়েছে দুটো। সামনে আরও তিন-চারটা কিনব। গরুর খামার করতে চেয়েছিলাম। অনেকে পরামর্শ দিল, গরু নয় মহিষে ঝুঁকতে। আমাদের এলাকায় গরুর চেয়ে কিন্তু মহিষের চাহিদাই বেশি।'

তবুও লাগে না ভালো
বাড়ির ছাদে কবুতর পোষা, সুনসান মাছের ঘের কিংবা মহিষ পালন—সময় হয়তো ভালোই কেটে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁর আসল যে কাজ, সেই ক্রিকেটটা যে খেলা হচ্ছে না। ক্রিকেটের কথা ভেবেই মনটা তাই ভীষণ খারাপ হয়ে যায় মোস্তাফিজের, 'বাড়িতে সর্বোচ্চ ৮-১০দিন থাকতে ভালো লাগে। পেশাদার ক্রিকেট শুরুর পর এত বিরতি আগে কখনো পাইনি। ২০১৬ সালে কাঁধের চোটে ছয় মাস দলের বাইরে থাকলেও দুই সপ্তাহের বেশি ছুটি পাইনি। এবারের বিরতিটা তাই বেশি বিরক্তিকর লাগছে। কিন্তু কী করার আছে!'

আবার শুরু কাজ
কবে আবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরু হবে, সেটির কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে মোস্তাফিজ নিজের মতো শুরু করেছেন ফিটনেস অনুশীলন। বিসিবির দেওয়া নির্দেশনা তো আছেই। নিয়মিত করোনা অ্যাপের মাধ্যমে স্বাস্থ্যের সব খবরাদি জানাচ্ছেন বিসিবির মেডিকেল বিভাগকে। মাঝেমাঝে কোচদের ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর আফসোস, করোনাধাক্কায় ক্যারিয়ার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় একটা বছর, 'একবারে শূন্য থেকে এত দূর এসেছি। অনেকে আমার শুরুর ফর্মের সঙ্গে এখনকার ফর্ম তুলনা করে। কে কী বলল সেটা নিয়ে খুব বেশি ভাবি না। আমার চাহিদাও কম। পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি। আরও পাঁচ বছর খেলতে পারলে আমার বড় একটা লক্ষ্য পূরণ হয়। আফসোস মাঝ থেকে একটা বছর খেয়ে দিল করোনা!'