পেসারদের অপেক্ষায় সবুজ মাঠ

মাঠ আবারও পুরোনো সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
মাঠ আবারও পুরোনো সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
>করোনার অপ্রত্যাশিত বিশ্রাম যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে মাঠ আর উইকেটের জন্য।

'মাঠটা দেখতে তো দারুণ হয়েছে!'—হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো সবুজ ঘাসে ঢাকা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ছবি দেখে বিস্ময় লুকাতে পারেননি রাসেল ডোমিঙ্গো। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের এমন সবুজ রূপ দেখেননি এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। শুধু ডোমিঙ্গো কেন! এ মাঠে বছরের পর বছর কাজ করে যাওয়া মাঠকর্মীরাও মিরপুরের ঘাসে এত প্রাণ দেখেননি আগে।

করোনা অতিমারিতে খেলা বন্ধ থাকায় ক্রিকেটারেরা 'গৃহবন্দী'। অনেকের জীবিকায়ও পড়েছে টান। তবে মুদ্রার উল্টো পিঠে করোনার একটা ভালো দিকও দেখা যাচ্ছে। চার মাস যাবৎ খেলা, অনুশীলন না হওয়ায় লম্বা একটা বিশ্রামই যে পেয়ে গেল ক্রিকেট ভেন্যুগুলোর মাঠ-উইকেট! এই সুযোগে মাঠ হয়ে উঠেছে গাঢ় সবুজ, কিউরেটররা পেরেছেন উইকেটগুলোর যথার্থ পরিচর্যা করতে।

শেরেবাংলা স্টেডিয়াম বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত স্টেডিয়ামগুলোর তালিকায় ওপরের দিকেই থাকার কথা। করোনা না থাকলে এই কয় দিন প্রিমিয়ার লিগের ১০-১২টি ম্যাচ হতো এখানে, হতো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প তো হতোই। মিরপুরের একাডেমি মাঠে চলত প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব, হাইপারফরম্যান্স ইউনিট ও বয়সভিত্তিক দলের অনুশীলন কার্যক্রম।

এত এত খেলা আর অনুশীলনের ব্যস্ততার মধ্যে ভালো উইকেট তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। মাঠের ওপরও পড়ে বাড়তি চাপ। সঠিক যত্ন নেওয়া হয়ে পড়ে কঠিন। করোনাভাইরাসের কারণে খেলা, অনুশীলন থেকে অপ্রত্যাশিত বিরতি সেই কঠিন কাজগুলোই সহজ করে দিয়েছে। বিসিবির গ্রাউন্ডস বিভাগের ব্যবস্থাপক সৈয়দ আবদুল বাতেন বলছিলেন, 'আমাদের বেশি কিছু করতে হয়নি। নিয়মিত যেসব কাজ করা হয়, সেগুলোই হয়েছে। খেলা না থাকায় মাঠ বাড়তি বিশ্রাম পেয়েছে। কাজ করতে সুবিধা হয়েছে।'

উইকেট পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেলে ঘাসের শিকড় উইকেটের চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি মাটির নিচে যাওয়ার সময় পায়। ঘাসের গোড়া যত মাটির নিচে যাবে, ততই সুবিধা। উইকেটের ওপরের ঘাস মরে গেলেও তখন গোড়া থেকে আবার ঘাস গজায়। মাটির গভীর থেকে পানি শোষণ করাটাও তখন সুবিধাজনক হয় ঘাসের জন্য। সূর্যের আলোয় উইকেটের ওপরের দিকের এক-দুই ইঞ্চি মাটি শুকিয়ে গেলেও লম্বা শিকড় মাটির গভীর থেকে পানি টেনে নেয়। যেকোনো উইকেটের ঘাসের গোড়া শক্ত হয়ে এই পর্যায়ে আসতে মাস তিনেক সময় লাগেই।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সহকারী কিউরেটর জাহিদ রেজা গত চার মাসের বিশ্রাম কাজে লাগিয়ে এই কাজটা ভালোই করতে পেরেছেন। এ মাঠের ভারতীয় কিউরেটর প্রবীণ হিগনিকর করোনার শুরুতে বাংলাদেশে থাকলেও পরে ফিরে গেছেন দেশে। মাঠ দেখাশোনা করছেন জাহিদ রেজা। মুঠোফোনে তিনি বলছিলেন, 'ঘাসই উইকেটের সব। এই বিশ্রামে ঘাসের গোড়াটা শক্ত হয়েছে।'

বছরের শুরুতে বিকেএসপির কিউরেটর নুরুজ্জামান ক্লান্ত উইকেটের কারণ দেখিয়ে প্রিমিয়ার লিগের খেলা বিকেএসপিতে খেলাতে চাননি। পরে তো করোনায় লিগই স্থগিত হয়ে যায়। তাতে বিকেএসপির উইকেটগুলোও পেয়েছে যথেষ্ট বিশ্রাম। ক্লান্ত উইকেটে ফিরে এসেছে প্রাণ। নুরুজ্জামান বলছিলেন, বিকেএসপির ব্যাটিং উইকেটে নাকি এখন পেসাররাও সাহায্য পাবেন, 'এবার লিগের খেলা শুরু হলে প্রথম ৫-৬ ম্যাচে পেসাররা অনেক সাহায্য পাবে। বিশ্রাম পাওয়ায় ঘাসের ভালো যত্ন নেওয়া গেছে।'

গত মৌসুমে ব্যস্ত ছিল ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামও। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের প্রায় ১০০টি ম্যাচ হয়েছে এ মাঠে। বিসিএল আর জাতীয় লিগের ম্যাচ তো আছেই। ব্যস্ত সূচির পর করোনার 'ছুটি' পেয়ে ফতুল্লা স্টেডিয়াম যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। স্টেডিয়ামের কিউরেটর শফিউল আলম বলছিলেন, 'খেলার সময় হওয়া মাঠের ক্ষতিগুলো ঠিক করেছি। বেশি খেলা হলে উইকেটের ঘাস মরে যায়। নতুন করে ঘাস লাগিয়ে সব প্রস্তুত করেছি। আমরা এখন সাতটা উইকেটই সবুজ করে ফেলেছি। কোনো বাজে ঘাস নেই।'

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও করোনা-বিরতিতে কাজ করেছেন মাঠকর্মীরা। সিলেটের ভারতীয় কিউরেটর সঞ্জীব আগারওয়াল এখন ভারতে থাকলেও করোনার শুরুতে সরাসরি মাঠ দেখাশোনা করেছেন। স্টেডিয়ামের ভেন্যু ব্যবস্থাপক জয়দ্বীপ দাস জানিয়েছেন, সঞ্জীবের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন মাঠকর্মীরা কাজ করছেন।

এখন শুধু খেলা শুরুর অপেক্ষা। কিউরেটর-মাঠকর্মীদের কাজ কতটা সার্থক হলো, সেটি বোঝা যাবে খেলা শুরু হলে।