যেদিন নিজেকে অমিতাভ বচ্চন মনে হয়েছিল কাইফের

ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি হাতে যুবরাজ সিং, সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে মোহাম্মদ কাইফ (ডানে)। ছবি: টুইটার
ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি হাতে যুবরাজ সিং, সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে মোহাম্মদ কাইফ (ডানে)। ছবি: টুইটার
১৮ বছর আগে ভারতকে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জিতিয়ে রাতারাতি তারকা হয়ে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ কাইফ

লর্ডসে ২০০২ সালের ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালের কথা কখনোই ভুলতে পারবে না ভারতীয়রা। ইংল্যান্ড-ভারতের সেই ফাইনালকে ধরা হয় ভারতীয় ক্রিকেটের বাঁক বদলের ম্যাচ। ১৮ বছর আগের আজকের দিনেই ইতিহাস লিখেছিল ভারত। টান টান উত্তেজনার ম্যাচে ভারতের জয়ের পর লর্ডসের ব্যালকনিতে জার্সি উড়িয়েছিলেন ওই সময়ের ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। ওই ম্যাচ জেতার অন্যতম কারিগর ছিলেন মোহাম্মদ কাইফ। দেশে ফিরে এলাকার মানুষের কাছ থেকে কাইফ পেয়েছিলেন প্রাণঢালা সংবর্ধনা। মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ কাইফের সেদিন নিজেকে অমিতাভ বচ্চন মনে হয়েছিল।

সেই ফাইনালের দেড় যুগ পূর্তিতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক কলামে সেই সোনালি দিনের স্মৃতিচারণা করেছেন কাইফ, ‘আমি দেশে ফেরার পর এলাহাবাদে যে উৎসব হয়েছিল, তা সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না। আমি এমনিতেই একটু লাজুক প্রকৃতির। কিন্তু মানুষ আমার বাড়িতে আসতেই থাকত। মা সারাক্ষণ সবাইকে চা-নাশতা দিতে ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি গণমাধ্যমের আগ্রহ ছিল অন্যরকম।’

ওই জয়ের পর কাইফ যেখানেই যেতেন লোকে পিছু ছাড়তো না। এমনকি ঘুড়ি ওড়াতে গেলেও সবাই তাকিয়ে থাকত, ‘তারা সবখানে আমাকে অনুসরণ করত। যমুনা নদীর তীরে ঘুড়ি ওড়াতে পছন্দ করতাম আমি। কিন্তু তারা সেখানেও আমার পিছু নিত এবং বলত, দেখো কাইফ আজ ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। আরে, আমি তো সেই ছোটবেলা থেকেই ঘুড়ি ওড়াই! তাদের এমন আচরণ বুঝতে বেশ সময় লেগেছিল।’

ন্যাটওয়েস্টের ওই ফাইনালে ইংল্যান্ডের ৩২৫ রানের জবাবে ২৪তম ওভারে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে যান শচীন টেন্ডুলকার। এর আগে সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দর শেবাগ, দীনেশ মঙ্গিয়া, রাহুল দ্রাবিড় সবাই আউট হয়ে গেছেন। বাকি ২৬ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ১৮০ রান। তখন ৩০০ টপকানো স্কোর তাড়া করতে যাওয়াটা বেশ কঠিনই ছিল। ওই সময় যুবরাজ সিং ও কাইফ মিলে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ১২১ রানের জুটি। এরপর যুবরাজ আউট হন ৬৯ রানে। ব্যাটসম্যান বলতে তখন উইকেটে শুধুই কাইফ। হরভজন সিং, জহির খানদের নিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠিকই জয় তুলে নেন। শেষ পর্যন্ত ৭৫ বলে ৬টি চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৮৭ রান করেন কাইফ। একটা ফাইনাল জিতেই যেন নায়ক হয়ে ওঠেন সবার।

এলাহাবাদে নিজের শহরে ফেরার দিনের কথা আজও ভোলেননি কাইফ, ‘সেদিন আমাকে একটা ছাদখোলা জিপে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মাত্র ৬-৭ কিলোমিটার পথ যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা লেগেছিল। কারণ রাস্তার দুই ধারে ছিল মানুষের ভিড়। সবাই হাসিমুখে, ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। যখন আমি ছোট ছিলাম, দেখেছি নির্বাচনে জেতার পর আমার শহরে এভাবেই ছাদখোলা জিপে অমিতাভ বচ্চনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেদিন আমারও নিজেকে অমিতাভ বচ্চনের মতো মনে হচ্ছিল।’

কাইফের মতে, ওই একটা টুর্নামেন্ট জয় ভারতীয় ক্রিকেট দলের আত্মবিশ্বাসই যেন বদলে দিয়েছিল, ‘ওই জয়টা ভারতীয় ক্রিকেটকে একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। আমরাও যে বড় রান তাড়া করতে পারি সেটা প্রমাণ হয়েছিল। লর্ডসে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল জেতার পর সেটা ছিল আরেকটা বড় জয়। তাই মানুষ এটাকে সব সময় মনে রাখে।’

এই টুর্নামেন্টের পরপরই ভারত গিয়েছিল পাকিস্তান সফরে। সেখানেও নতুন ভারতকেই দেখেছিল পাকিস্তান। কাইফ সেই প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার মনে আছে এরপর পাকিস্তানে গিয়েও আমরা টানা ৩০০ রান টপকেছি। কিন্তু ড্রেসিং রুমে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। সেখানে থাকত শান্ত ও আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জেতার পর আমার এমনটাই মনে হয়েছে।’