এত বছর পর সেসব বলতে চাই না

মহিন্দর অমরনাথ।
মহিন্দর অমরনাথ।

ভারতের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক তারকা মহিন্দর অমরনাথ ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে ছিলেন বাংলাদেশ দলের কোচ। কিন্তু সম্ভাবনা থাকলেও সেবার স্বপ্ন ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ফারুক–মিনহাজুলরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেই ব্যর্থতাকে এখনো বড় এক বিপর্যয় হিসেবেই ধরা হয়। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অমরনাথ কথা বলেছেন তাঁর বাংলাদেশ অধ্যায় নিয়ে—

প্রশ্ন: ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফিতে আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ ছিলেন। বলা হয়, সেবারই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করা উচিত ছিল। কেনিয়ার সেই আইসিসি ট্রফিতে কেন ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ দল?
মহিন্দর অমরনাথ: আসলে ক্রিকেটে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। ভাগ্য এখানে বড় ব্যাপার। ১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ দল যথেষ্ট ভালো ছিল। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলার যোগ্যতা ছিল। কেনিয়ার আইসিসি ট্রফিতে যেন বাংলাদেশ ভালো করে সে জন্য বাংলাদেশের তখনকার ক্রিকেট সংগঠকেরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দলের পারফরম্যান্স ভালো হয়নি। নির্দিষ্ট দিনে আমার দলের খেলোয়াড়েরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেনি। কোচ হিসেবে আমিও দায়িত্ব এড়াতে পারি না।

প্রশ্ন: আইসিসি ট্রফির পর আপনি দলের সঙ্গে দেশে ফেরেননি। ভারতে বসেই একটা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের কাছে। আপনি প্রতিবেদনে মিনহাজুল আবেদীনকে দেশের সেরা ব্যাটসম্যান বলেছিলেন। কিন্তু সেই মিনহাজুলকেই আইসিসি ট্রফির আগে অধিনায়কত্ব থেকে বাদ দিলেন। কারণটা কি ছিল?
অমরনাথ: অনেক বছর আগের কথা। আমার বিস্তারিত মনে নেই। মিনহাজুল দারুণ একজন ক্রিকেটার ছিল, সন্দেহ নেই। তাঁর সামর্থ্যের প্রতি আমার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাই ছিল। কিন্তু এত বছর পর আমি তাঁর অধিনায়কত্ব নিয়ে কী হয়েছিল সেসব বলতে চাই না। আমি কোনো বিতর্ক তৈরি করতে চাই না।

প্রশ্ন: আপনি যে সময় বাংলাদেশের কোচ ছিলেন, তখন তো বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্লাবে–ক্লাবে, খেলােয়াড়ে–খেলোয়াড়ে রেষারেষিটা প্রকট ছিল...
অমরনাথ: বাংলাদেশে কয়েকটি ক্লাব খুব জনপ্রিয় ছিল। ক্লাবে ক্লাবে বিভক্তি ছিল, সেটাও দেখেছি। কিন্তু আমি কোচ হিসেবে ক্লাব–রাজনীতি বা এরকম কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি। ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিল কেনিয়ার আইসিসি ট্রফির দিকে। সবাই চেয়েছিল বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফিতে ভালো করে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করুক। আমার দলে বিভিন্ন ক্লাবের ক্রিকেটাররা ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটে তারা প্রত্যেকেই ছিল প্রত্যেকের প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে জাতীয় দলের ক্যাম্পে তাদের মধ্যে ক্লাব নিয়ে রেষারেষি দেখিনি।

প্রশ্ন: ১৯৯৪ সালে আইসিসি ট্রফির বাংলাদেশ দলে যদি আপনি সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম বা তামিম ইকবালের মতো খেলোয়াড়দের পেতেন, তাহলে কি ফলাফলটা অন্যরকম হতে পারত?
অমরনাথ: দেখুন, কারও সঙ্গে কারও তুলনায় যাওয়াটা ঠিক নয়। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটাররাই আমার দলে ছিল। মিনহাজুল আবেদীন, ফারুক আহমেদ, আকরাম খান, এনামুল হক, গোলাম নওশেররা ছিল বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার। সুতরাং, ১৯৯৪–এর আইসিসি ট্রফির দল নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। সাকিব আল হাসান কিংবা মুশফিকুর রহিমরা বিশ্বমানের ক্রিকেটার। ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে জায়গায় পৌঁছতে চায়, সে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সাকিব, মুশফিকের মতো আরও খেলোয়াড় বের করতে হবে। আমি বাংলাদেশের যে দলটাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, সেটা খুবই ভালো ছিল। আগেও বলেছি, ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল না।

প্রশ্ন: পুরোনো ছাত্রদের মনে পড়ে? তাঁদের প্রতি আপনার কোনো কিছু বলার আছে?
অমরনাথ: আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। ২৬ বছর কেটে গেছে। ওদের সব সময়ই আমি মনে রেখেছি। আমার শুভকামনা সব সময়ই তাঁদের সঙ্গে আছে। তাঁরা যে এখন নানাভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে রেখেছে, এই খবর আমি জানি।

প্রশ্ন: বর্তমান বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
অমরনাথ: বাংলাদেশ দারুণ প্রতিভাবান একটি দল। নিজেদের দিনে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তারা পৃথিবীর যেকোনো দলকে হারাতে পারে। বিশ্বমানের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আছে দলে। তবে আমি মনে করি পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। বোলিং আরও শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশ দল যখন ভালো করে, এই দলটার সাবেক কোচ হিসেবে আমার গর্ব হয়।

প্রশ্ন: ভারতকে যখন বাংলাদেশ হারায় তখন অনুভূতিটা কেমন হয়?
অমরনাথ: আগেই বলেছি নির্দিষ্ট দিনে তারা যেকোনো দলকেই হারিয়ে দিতে পারে। ভারতই বা বাদ যায় কীভাবে! বাংলাদেশ তো কয়েকবারই ভারতকে হারিয়েছে। ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে ভারতের হারটার কথা মনে পড়ে বেশি। খুবই ভালো লাগে যখন দেখি ২৬ বছর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেখানে ছিল, তার থেকে অনেকটা পথই এগিয়ে গেছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ভালো টেস্ট দল হয়ে ওঠার লক্ষ্যটা এখনো পূরণ হয়নি। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ?
অমরনাথ: প্রতিভা বাংলাদেশে কোনো সমস্যা নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সরবরাহ সারি শক্তিশালী বলেই জানি। বাংলাদেশকে এখন বেশি করে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট খেলতে হবে। স্কুল পর্যায়ে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট চালু করতে হবে। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পরিধি বাড়াতে হবে। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে হবে। সে জন্য স্পোর্টিং উইকেট করতে হবে। উইকেটে পড়ে থাকাটা বা বলের মেধা অনুযায়ী শট খেলাটা অভ্যাস। নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মধ্যে এই অভ্যেস তৈরি করতে হবে।