ক্রিকেটআনন্দ এবং আক্ষেপ

বহুদিন পর ক্রিকেট উপভোগ করতে পেরে আনন্দিত বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। ছবি: রয়টার্স
বহুদিন পর ক্রিকেট উপভোগ করতে পেরে আনন্দিত বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। ছবি: রয়টার্স
>সাউদাম্পটন টেস্টের সৌজন্যে টিভিতে 'লাইভ' লেখাটা কত দিন পর দেখলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা! করোনা–বিরতি কাটিয়ে ক্রিকেটের ফেরাটাও হয়েছে দুর্দান্ত। রোজ বোলে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংহতি জানিয়ে শুরু এ টেস্টের টানা পাঁচ দিন ক্রিকেটানন্দে ডুবে থাকার সব উপাদানই মিলেছে। টেস্টটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ৪ উইকেটে। নতুন স্বাভাবিকতায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন উপভোগ করেছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও। পাশাপাশি ছিল নিজেরা না খেলতে পারার আফসোস।

সব আম্পায়ার ইংল্যান্ডের!
টেস্ট শুরুর প্রথম দিনে মুমিনুল হক অবাক হয়েছেন স্কোরবার্ডে আম্পায়ারদের তালিকা দেখে! মাঠের আম্পায়ার, টিভি আম্পায়ার, রিজার্ভ আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি—সবাই ইংল্যান্ডের। 'স্কোরকার্ড দেখে ভাবলাম, ঘটনা কী সব দেখি স্থানীয় আম্পায়ার! পরে মনে পড়ল, আরে এ তো কোভিড পরিস্থিতিতে নতুন নিয়ম', কাল মুঠোফোনে বলছিলেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক। সাউদাম্পটন টেস্টের প্রথম দুই দিনে একটু ভুগতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। পরে তাঁরা যত মানিয়ে নিতে পেরেছেন, ততই হতাশা বেড়েছে বোলারদের। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে দৃশ্যটা বেশ উপভোগই করেছেন মুমিনুল, 'কন্ডিশনের কারণে শুরুর দিকে ব্যাটসম্যানরা ভুগেছে। পরে রোদ ওঠার পর দেখি উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যান হিসেবে পেসারদের অসহায় চেহারাটা দেখে ভালোই লেগেছে।'

অফ স্টাম্প কোথায়?

সাউদাম্পটন টেস্টের আগে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য পরিবর্তিত নিয়মগুলো নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার মনে করেন, পরিবর্তনগুলো খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি খেলায়। তবে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ভুগেছেন, সেটির কারণ হিসেবে লম্বা বিরতিকে বড় করে দেখছেন তিনি, 'লম্বা সময় ম্যাচের বাইরে থাকলে ব্যাটসম্যানদের সব সময়ই হাত-চোখের সমন্বয়ে সমস্যা হয়। অনুশীলন করেও তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন। সেটিরই প্রভাব পড়েছে। অনেক ব্যাটসম্যান সোজা বলে আউট হয়েছে। লাইন বুঝতে পারেনি। অফ স্টাম্প কোথায় বুঝতে অসুবিধা হয়েছে।' তবে হাবিবুল মনে করেন, উইকেট বোলিংবান্ধব হলে খেলা আরও জমবে, 'দ্বিতীয় ইনিংসে খুব বেশি রিভার্স সুইং হয়নি। দুই দলের বোলাররা নতুন বলেই যা করার করেছে। রোদ উঠলে আর ব্যাটসম্যানরা উইকেটে থিতু হয়ে গেলে পুরোনো বলে রানের খেলাই হবে। উইকেট বোলিংবান্ধব হলে খেলাটা আরও ভালো হতে পারে।'

'বল ঘষা যাচ্ছে'
আইসিসির নতুন নিয়মে ভীষণ চিন্তায় পড়েছিলেন আবু জায়েদ। বাংলাদেশ টেস্ট দলের একমাত্র পেসার, যাঁর বোলিংয়ের মূল শক্তিই সুইং। লালা বা থুতুর ব্যবহার না করতে পারলে কীভাবে সুইং সম্ভব, সাউদাম্পটনে এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে খুশি ৯ টেস্ট খেলা ২৬ বছর বয়সী পেসার, 'ওরা তো ঘাম দিয়ে বল উজ্জ্বল করেছে। এখন অন্তত স্বস্তি পাচ্ছি যে বল ঘষা যাবে। ভেবেছিলাম ঘষাই যাবে না! তবে দ্বিধায় পড়েছি, ইংল্যান্ডের বোলাররা তেমন সুইং পায়নি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা বেশ পেয়েছে। (জেমি) অ্যান্ডারসন ধারাবাহিক সুইং পায়নি, আবার (বেন) স্টোকস মাঝেমধ্যে পেয়েছে। কন্ডিশনের কারণে হতে পারে।' বাংলাদেশ দলের আরেক পেসার আল আমিন হোসেন অবশ্য বোলিংয়ের পুরো কৃতিত্ব ক্যারিবীয়দেরই দিচ্ছেন, 'ওরা কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছে, ওদের চেষ্টা, অ্যাকুরেসি সব মনোযোগ দিয়ে দেখেছি। ইংল্যান্ডের চেয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের অ্যাকুরেসি আর আগ্রাসন বেশি ছিল। জফরা আর্চারের ধারটা তেমন দেখলাম না। উইন্ডিজের জেতার ক্ষুধাটা ছিল বেশি।'

এবং আফসোস...

করোনা–পরবর্তী নতুন স্বাভাবিকতায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা যে সম্ভব, সেটি প্রমাণ হয়েছে সাউদাম্পটনে। ব্যাটে-বলের লড়াইয়ের চেয়ে এটিই বড় তৃপ্তির মনে হচ্ছে হাবিবুল বাশারের, 'টেস্ট খুব ভালোভাবে শেষ হয়েছে। ফল দেখেছে, কেউ অসুস্থ হয়নি। নতুন স্বাভাবিকতায় ক্রিকেট যে সম্ভব, সেটা দেখলাম।' আবু জায়েদের দাবি, সাউদাম্পটনের যে পরিবেশ আর সুযোগ–সুবিধায় দুই দল খেলেছে, একই পরিবেশ আছে বাংলাদেশের সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামেও। তবু কবে যে করোনার ধাক্কা সামলে দেশের ক্রিকেট শুরু হবে, সেটি অনিশ্চিত। সাউদাম্পটন টেস্ট দেখে মুশফিকুর রহিমের বুক চিরে তাই বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস, 'টেস্টটা দেখে খুব ভালো লেগেছে। আর আফসোস হয়েছে...অপেক্ষা করতে করতে কত সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি যে মিস হয়ে গেল! যাহোক, আল্লাহ চাইলে সামনে হবে নিশ্চয়ই।'