স্টোকসের বিশ্বকাপ জেতানো ধুলো আর ধোঁয়ার গল্প

ভাগ্য , দৃঢ়তা আর চেষ্টা –সবকিছুর মেলবন্ধনেই বিশ্বকাপটা নিজের করে নিয়েছেন স্টোকস। ফাইল ছবি
ভাগ্য , দৃঢ়তা আর চেষ্টা –সবকিছুর মেলবন্ধনেই বিশ্বকাপটা নিজের করে নিয়েছেন স্টোকস। ফাইল ছবি

ক্যারিয়ারে এর চেয়ে বড় ইনিংস অনেক খেলেছেন বেন স্টোকস। আরও বড় বড় ইনিংস নিশ্চয়ই খেলবেন। গত অ্যাশেজের মতো অবিশ্বাস্য পরিস্থিতি থেকে দলকে জেতাবেনও। কিন্তু ৯৮ বলে ৮৪ রানের অপরাজিত ওই ইনিংসটির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো ইনিংস হয়তো আর খেলা হবে না। একটা দেশের আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরণ করা ইনিংস এক জীবনে মানুষ কয়বারই বা খেলার সুযোগ পায়!

২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ড ও বিশ্বকাপ ট্রফির মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন শুধু স্টোকস। এই অলরাউন্ডারের হাল না ছাড়া মানসিকতাই শেষ বল পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছে ম্যাচ। কিন্তু বহু চেষ্টাতেও দলকে জেতাতে পারেননি নির্ধারিত ওভারে। শেষ বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়েছেন তাঁর সঙ্গী। অমন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেও তাই সুপার ওভারে ব্যাট করার জন্য নামতে হয়েছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত সে চাপও জয় করে ইংল্যান্ডকে এনে দেন বিশ্বজয়ের উৎসব করার সুযোগ।

কিন্তু স্টোকস কি সেদিন একটুও চাপ অনুভব করেননি? হ্যাঁ, চাপ ঠিকই অনুভব করছিলেন এই অলরাউন্ডার। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয় নিয়ে প্রকাশিত বই 'মরগানস ম্যান: দ্য ইনসাইড স্টোরি অব ইংল্যান্ডস রাইজ ফ্রম ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ হিউমিলেশন টু গ্লোরি'তে জানানো হয়েছে চাপ কাটাতে সেদিন কী করেছিলেন স্টোকস।

বইয়ের লেখক নিক হোল্ট ও স্টিভ জেমস লিখেছেন, 'সুপার ওভারের উন্মাদনার মাঝে ২৭ হাজার দর্শক ভর্তি স্টেডিয়ামে কোনো শুনশান জায়গা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ছিল। বিশেষ করে দর্শকের চোখ, টিভি ক্যামেরা তখন মাঠ, লংরুম (লর্ডসের বিখ্যাত সে রুম যেখান দিয়ে খেলোয়ারোরা সদস্যদের সামনে দিয়ে মাঠে ঢোকেন) এবং ড্রেসিং রুমে সবার ওপর নজর রাখছে। কিন্তু বেন স্টোকসের লর্ডসের অলি–গলি ভালোই চেনা। এউইন মরগান যখন ড্রেসিংরুমে সবাইকে শান্ত করতে ব্যস্ত, কী করা যায় সে পরিকল্পনা করছেন; তখন স্টোকস আস্তে করে বেরিয়ে গেলেন দুদন্ড শান্তির খোঁজে।'

'পুরো শরীরে ঘাম আর ধুলো। দুই ঘন্টা ২৭ মিনিট ধরে অবিশ্বাস্য চাপে ব্যাট করেছেন। স্টোকস কী করলেন তখন? ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমের পেছনে চলে গেলেন। অ্যাটেন্ডেটদের অফিস আর গোসলের জায়গা পার হয়ে চলে গেলেন এক কোনায়। সেখানেই একটি সিগারেট ধরিয়ে নিজেকে শান্ত করলেন।'

এর পরই আবার ব্যাট করতে নেমেছিলেন স্টোকস। সুপার ওভারে তাঁর ৩ বলে ৮ রান ও অন্য প্রান্তে বাটলারের ৭ রানের ১৫ রানের পুঁজি পায় ইংলিশরা। নিউজিল্যান্ড সে রান টপকাতে পারেনি তাদের ৬ বলের কোটায়। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের।

এখন এ জয়ের পেছনে স্টোকসের ইস্পাতদৃঢ় মানসিকতাকেই দেখবেন, নাকি দেখবেন অস্বাস্থ্যকর কিছু ধোঁয়ার অদৃশ্য প্রভাব—সেটা পাঠকের বিবেচনা।