১১৫৮ কোটি টাকার খোঁজে রিয়াল

মাঠে-মাঠের বাইরে সুসময় চলছে রিয়াল মাদ্রিদের ছবি: এএফপি
মাঠে-মাঠের বাইরে সুসময় চলছে রিয়াল মাদ্রিদের ছবি: এএফপি

আর একটা জয়—ব্যস, রিয়াল মাদ্রিদ আর এবারের লা লিগার শিরোপার মধ্যে এতটুকুই শুধু ব্যবধান। বৃহস্পতিবার নিজেদের মাঠে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে জিতলেই এক ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপার আনন্দ হবে রিয়ালের সঙ্গী।

চ্যাম্পিয়নস লিগেও এখনো ক্ষীণ হলেও আশা বেঁচে আছে। করোনাভাইরাস সব থামিয়ে দেওয়ার আগে শেষ ষোলোতে প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল জিনেদিন জিদানের দল। করোনা-বিরতি কাটিয়ে আগস্টে আবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরু হচ্ছে। তা দলটা যখন রিয়াল মাদ্রিদ আর টুর্নামেন্টটা যখন চ্যাম্পিয়নস লিগ—রিয়ালের কোয়ার্টার ফাইনালের সম্ভাবনার শেষ দেখার দুঃসাহস কে করবে?

এই মৌসুমে এখনো দুই শিরোপার আনন্দের সম্ভাবনার মধ্যেই আগামী মৌসুম নিয়েই এখনই পরিকল্পনায় বসে যেতে হচ্ছে রিয়ালকে। তাতে দল নিয়ে তো চিন্তা আছেই, তার পাশাপাশি বেশি চিন্তা করতে হচ্ছে ক্লাবের আর্থিক অবস্থা নিয়েও। করোনা এসে যে সবারই আর্থিক অবস্থা সঙ্গিন করে দিয়ে গেছে! স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা জানাচ্ছে, করোনার ক্ষতি সামলাতে এই গ্রীষ্মকালীন দলবদলে খেলোয়াড় বিক্রি করে ১২ কোটি ইউরো আনার পরিকল্পনা রিয়ালের। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা দাঁড়ায় প্রায় ১১৫৮ কোটি টাকা!

'অপারেশন এক্সিট' বা 'প্রস্থান প্রকল্প'ও নাম পেয়ে গেছে রিয়ালের এই পরিকল্পনা। তবে রিয়ালভক্তদের অত ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। যাঁদের বিক্রি করার পরিকল্পনা রিয়ালের, তাঁরা কেউই ক্লাবের নিয়মিত খেলোয়াড়দের তালিকায় নেই। কেউ হয়তো একাডেমি থেকে উঠে এসে মূল দলে সুযোগ করে নিতে পারছেন না, কেউ বা জিদানের কৌশলে উপেক্ষিত।

এরই মধ্যে রিয়ালের একাডেমি থেকে দুবছর আগেই মূল দলে উঠে আসা ডিফেন্ডার হাভি সানচেজের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এই মৌসুমে রিয়াল ভায়াদোলিদে ধারে খেলা ২৩ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার আগামী মৌসুমে পাকাপাকিভাবে যোগ দেবেন ভায়াদোলিদে।

উঠতি তারকাদের মধ্যে রিয়ালভক্তদের মন খারাপ হতে পারে আশরাফ হাকিমির চলে যাওয়া দেখে। ১১ বছর রিয়ালের একাডেমিতে কাটানোর পর তিন বছর আগে মূল দলে অভিষেক হয় হাকিমির, ২০১৮ সাল থেকে ধারে খেলছিলেন জার্মানির ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে। কী দারুণই না খেলেছেন! যতটা রক্ষণে, তার চেয়েও বেশি যেন আক্রমণে পারদর্শী ২১ বছর মরোক্কান রাইটব্যাক। ভাবা হচ্ছিল, এই মৌসুম শেষে রিয়ালে ফিরে দানি কারভাহালের সঙ্গে মূল দলে জায়গার জন্য লড়বেন হাকিমি। কিন্তু একদিকে কারভাহালের দুর্দান্ত ফর্ম, অন্যদিকে হাকিমির এখনই মূল দলে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা থেকেই রিয়ালের তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া। বেশ চড়া দামই এসেছে! ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরোতে হাকিমিকে কিনে নিয়েছে ইন্টার মিলান। আন্তোনিও কন্তের ৩-৫-২ ছকে রাইট উইংব্যাক হিসেবে হাকিমি আলো ছড়াবেন, এমন সম্ভাবনাই বেশি দেখেন বিশ্লেষকরা।

এ দুজনের সঙ্গে রিয়ালের 'এক্সিট' লেখা গেট দিয়ে বের হয়ে যেতে পারেন মিডফিল্ডার দানি সেবায়োস ও ডিফেন্ডার হেসুস ভায়েহো। ২০১৫ সালে জারাগোজা থেকে আসা ভায়েহোকে অমিত সম্ভাবনাময়ই ভাবা হচ্ছিল, কিন্তু একের পর এক চোটের সঙ্গে লড়তে থাকা স্প্যানিশ ডিফেন্ডার রিয়ালের মূল দলে সেভাবে খেলতেই পারেননি। জারাগোজা, ফ্রাঙ্কফুর্ট, উলভারহ্যাম্পটনের পর এখন ধারে খেলছেন গ্রানাদায়। আর ২০১৭ সালে বেতিস থেকে আসা সেবায়োস ক্রুস-মদরিচ-ইসকোদের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে রিয়ালের মূল দলে তেমন জায়গা করে নিতে পারেননি। জিদানের কৌশলেও মানিয়ে নিতে পারেননি। এই মৌসুমে সেবায়োস ধারে খেলছেন আর্সেনালে। করোনা-বিরতির পর আর্সেনালের নতুন কোচ মিকেল আর্তেতার অধীনে তাঁর দারুণ ফর্ম দেখে আর্তেতার ইচ্ছা, সেবায়োসকে আর্সেনালেই রেখে দেবেন। ভ্যালেন্সিয়া আর বেতিসও তাঁকে পেতে আগ্রহী। আড়াই কোটি ইউরো রিয়াল পেতে পারে তাঁর দলবদল থেকে। ২৩ বছর বয়সী উইঙ্গার হোর্হে দে ফ্রুতোস এই মুহূর্তে ধারে আছেন রায়ো ভায়েকানোতে। তাঁকে বিক্রি করে ১ কোটি ইউরো পাওয়ার পরিকল্পনা রিয়ালের।

এঁদের সঙ্গে আরও বড় দুটি নাম তো রিয়ালের 'বিক্রির জন্য' তালিকায় আছেনই—গ্যারেথ বেল ও হামেস রদ্রিগেজ। বেলের সঙ্গে জিদানের যে বনছে না, সেটি তো কয়েক বছরের পুরোনো গুঞ্জন। রদ্রিগেজের সঙ্গেও জিদানের সম্পর্কটা তেমন ভালো নয় বলেই শোনা যায়। দুজনই একের পর এক ম্যাচ আপাতত কাটাচ্ছেন রিয়ালের বেঞ্চে।