বড়দের পথ দেখাবে ছোটরা

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট নিয়ে সভার পর গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। কাল মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে। ছবি: বিসিবির সৌজন্যে
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট নিয়ে সভার পর গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। কাল মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে। ছবি: বিসিবির সৌজন্যে
>সব ঠিক থাকলে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে বিকেএসপিতে শুরু হবে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্প। ক্যাম্পের আগে কোভিড টেস্ট হবে ক্রিকেটারদের। রাখা হবে আইসোলেশনে।

চার মাস হতে চলল নিস্তরঙ্গ পড়ে আছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়। মাঠ থেকে আসা ঘাসকাটা যন্ত্রের শব্দে কখনো কখনো নীরবতা ভাঙে বটে, কিন্তু তাতেও নিয়মিত কর্মব্যস্ততার ছবিটা ফুটে ওঠে না। কোভিডের কাঁটা না আবার গায়ে লেগে যায়, এ আতঙ্কে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া 'হোম অফিস'–এর নিরাপদ ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে কেউই আপাতত স্টেডিয়ামমুখী হচ্ছেন না।


কাল ব্যতিক্রম ঘটল। দুপুরের দিকে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে গোটাকয় গাড়ি। বিসিবির করিডরে সীমিত পরিসরে হলেও ফিরল ব্যস্ততা। এই ব্যস্ততা গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের এক সভাকে কেন্দ্র করে। সে সভায় অংশ নিতেই কাল বিসিবি কার্যালয়ে হাজির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান খালেদ মাহমুদ, চার জুনিয়র নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ, হাসিবুল হোসেন, এহসানুল হক ও হান্নান সরকার এবং বিভাগের ব্যবস্থাপক আবু ইমাম মোহাম্মদ কায়সার। সভার উদ্দেশ্য, আগামী এক বছরের জন্য বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা এবং খেলোয়াড়দের মাঠে নামানো।


না, বড়দের মতো ছোটদের ক্রিকেটও সহসাই মাঠে ফিরছে না। তবে গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের যা পরিকল্পনা, তাতে হয়তো বড়দের মাঠে নামার পথটা দেখিয়ে দেবে ছোটরাই। করোনা–পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এলে যেন বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রিকেটাররা অনুশীলন শুরু করে দিতে পারেন, সেই পরিকল্পনাই হয়েছে গতকালের সভায়। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ব্যবস্থাপক আবু ইমাম মোহাম্মদ কায়সার সভার পর জানালেন অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা, '২০২২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটকে সামনে রেখে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে আমরা ৪৫ জনের মতো ক্রিকেটার নিয়ে চার সপ্তাহের ক্যাম্প শুরু করব। কোভিড পরীক্ষা করার পর প্রথম ৮-১০ দিন খেলোয়াড়দের আইসোলেশনে রাখা হবে। ক্যাম্পের জন্য বিকেএসপির আন্তর্জাতিক হোস্টেল চাওয়া হয়েছে।'


শুরুতে ফিটনেস ট্রেনিংয়ের ওপর জোর দেওয়া হবে। এরপর হবে স্কিল ট্রেনিং ও ট্রায়াল ম্যাচ। ট্রায়াল ম্যাচ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন ক্রিকেটারের প্রাথমিক দল করা হবে।


গত যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে যুবাদের নিয়ে এখন থেকেই পরিকল্পনা করাটা জরুরি। বিসিবি সে পথেই আছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ জিতে আসা গতবারের দলটিকে নিয়ে যে রকম পরিকল্পনা ছিল, সেটি বাস্তবায়ন হতে পারেনি করোনার বাধায়। পরিকল্পনা ছিল আকবর আলীদের নিয়ে অনূর্ধ্ব-২১ দল গঠন করে গেল মে-জুনে বিশেষ ক্যাম্পের জন্য তাঁদের ইংল্যান্ডে পাঠানোর। এখন পরিকল্পনা বদলেছে। প্রিমিয়ার লিগ যখনই শুরু হোক, তার আগে এই ক্রিকেটারদের গেম ডেভেলপমেন্টের অধীন কিছুদিন ফিটনেস ও স্কিল ট্রেনিং করানো হবে।


ক্রিকেটারদের মধ্যে যাঁরা লিগে খেলবেন, লিগের পাশাপাশি তাঁরা এ অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারবেন। এ ছাড়া আগামী বছর মে-জুন বা জুলাইয়ের দিকে মাস দুয়েকের জন্য তাঁদের ইংল্যান্ডে রেখে অনুশীলন ক্যাম্প করানো হবে। নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, 'আমাদের পরিকল্পনা আছে অনূর্ধ্ব-২১ দলটাকে ইংল্যান্ডে বিশেষ ক্যাম্প করতে পাঠানোর। এ ছাড়া প্রিমিয়ার লিগের আগে এবং লিগের সময়ও তাদের অনুশীলনের মধ্যে রাখা হবে।' সভায় আলোচনা হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের কার্যক্রম নিয়েও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেপ্টেম্বরে শুরু হবে তাদের ক্যাম্প। স্কুল ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়ন দলগুলোকে নিয়ে দীর্ঘ পরিসরের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

আগামী সেপ্টেম্বরে বিসিবির হাইপারফরম্যান্স দলের শ্রীলঙ্কা সফর আছে। তবে এই পরিস্থিতিতে সফরটি আদৌ হবে কি না, সেই সংশয় থাকছে। শ্রীলঙ্কার করোনা–পরিস্থিতি উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো হলেও সর্বশেষ খবর, কোনো কোনো এলাকায় সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সরকার দেশটির সব বিদ্যালয় এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। কাজেই জাতীয় দলের মতো হাইপারফরম্যান্স দল পাঠানোর আগেও শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে বিসিবিকে।
এশিয়া কাপ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় জাতীয় দলের অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো লক্ষ্য নেই, যেটাকে সামনে রেখে হতে পারে অনুশীলন ক্যাম্প। অনিশ্চিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। অনুশীলন, ফিটনেস ট্রেনিং—এসব তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগেই চালিয়ে নিচ্ছেন মুশফিক-তামিমরা। বিসিবিও মাঠে এসে অনুশীলন করাটাকে নিরুৎসাহিত করছে। তবে কেউ চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁর জন্য অনুশীলনের সুবিধা করে দেবে ক্রিকেট বোর্ড।