খরচের খাতায় ৮ ফোঁটা শুকনো অশ্রু

ধোনি, গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, মালিঙ্গা, মালিক, হাফিজ, ব্রাভোদের বিশ্বকাপ ভাগ্য ঝুলে গেছে। ছবি: সংগৃহীত।
ধোনি, গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, মালিঙ্গা, মালিক, হাফিজ, ব্রাভোদের বিশ্বকাপ ভাগ্য ঝুলে গেছে। ছবি: সংগৃহীত।
>টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পিছিয়ে গেল এক বছর। বুড়িয়ে যাওয়া তারকাদের আগামী বিশ্বকাপে দেখা যাবে তো?

২০১৬ সাল পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়ে এসেছে দুই বছর পর পর। এবার হতে যাচ্ছিল চার বছর পর। এদিক থেকে ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতোই সমান মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালের বিশ্বকাপ পিছিয়ে গেল ২০২২ সালে। মাঝে ২০২১ সালে ভারতে অবশ্য আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হওয়ার কথা। 

তা হোক, তবে করোনা এবারের বিশ্বকাপ কেড়ে নেওয়ায় শঙ্কা জেগেছে বুড়িয়ে যাওয়া অনেক তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে। ভক্তদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে, আরও এক বছর তাঁদের ক্যারিয়ার দীর্ঘ হতে তো? বৃদ্ধের অশ্রু যেমন সময়ের সঙ্গে শুকিয়ে আসে, সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপের দিকে চেয়ে থেকে হয়তো শুকিয়ে যাবে ক্রিস গেইল-এম এস ধোনিদের চোখের জলও।
এমএস ধোনি
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচের কথা। পুরো ভারত অপেক্ষা আরেকটি 'ধোনি ম্যাজিকের'। লকি ফার্গুসনের বাউন্সারটি স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে ধোনি ভোঁ দৌড়! দুই রানের জন্য আরেকবার দৌড় দেবেন, ধোনির শরীরী ভাষাই বলে দিচ্ছিল। কিন্তু বাউন্ডারি থেকে দৌড়ে আসা মারটিন গাপটিলের ভূতুড়ে থ্রো যে আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে দ্রুততম ব্যাটসম্যানকে এক ইঞ্চির জন্য রান আউট করবে, সেটা কে জানত! নিউজিল্যান্ডের ধারাভাষ্যকার ইয়ান স্মিথ তখন বলছিলেন, 'আমরা কী শেষবারের মতো ধোনিকে বিশ্বকাপের মঞ্চ ত্যাগ করতে দেখছি?'
সেই সেমিফাইনালের পর এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্রিকেট ম্যাচ খেলেননি ধোনি। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বাইরের দুনিয়ায় টুঁ শব্দও করেননি। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টও অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত। তাই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে কেএল রাহুলকে ৫ নম্বরে খেলানো শুরু করেছে ভারত।
বয়সের খাতায় ৩৮ ছুঁয়ে ফেলা ধোনির আইপিএল খেলার কথা ছিল। চেন্নাই সুপার কিংসের হলুদ জার্সিতে গত মার্চে অনুশীলনও করেছিলেন। আইপিএলে ভালো খেলে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির দলে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেন ধোনি - এমন সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় সেই সম্ভাবনায় এখন ধোঁয়াশা।
৩৯ বছরের ধোনি কি খেলবেন ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ? ভারত কি চাইবে ঘরের মাঠেই ধোনিকে বিদায় দিতে? প্রশ্ন গুলোর জবাব ধোনিই দিতে পারবেন। কিন্তু এক বছর বিশ্বকাপ পিছিয়ে যাওয়ায় ধোনির বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণই মনে হচ্ছে।
লাসিথ মালিঙ্গা
টি-টোয়েন্টির বোলিংয়ের শেষ কথা লাসিথ মালিঙ্গা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক লঙ্কান ফাস্ট বোলার। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো মালিঙ্গা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২০ বিশ্বকাপ হবে তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় মালিঙ্গা কী সিদ্ধান্ত বদলাবেন?
পরের বিশ্বকাপ খেলতে খেলতে মালিঙ্গা বয়সে ৩৮ ছাড়িয়ে যাবেন। যে কোন পেসারের জন্য ৩৮ বছর পর্যন্ত টিকে থাকা কঠিন। টি-টোয়েন্টির এই যুগে তো আরও কঠিন। তবে গত এক বছরে পারফরম্যান্স থেকে সাহস নিতে পারেন মালিঙ্গা। গত আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন এই বুড়ো মালিঙ্গাই। গত বছরের শেষের দিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ বলে নিয়েছেন ৪ উইকেট। গতি কমে এলেও এখনো স্লিঙ্গি অ্যাকশনের ফুল লেংথের বলগুলো মালিঙ্গার হাত থেকে ছোটে ব্যাটসম্যানের জন্য বিষ হয়ে।
ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভো
ক্রিস গেইল ছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কল্পনা করা মুশকিল। ২০০৭ সালের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেঞ্চুরি করেছেন সর্বশেষ বিশ্বকাপেও। কিন্তু দুবার বিশ্বকাপজয়ী গেইলের বয়স ৪০ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বকাপও পিছিয়ে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে জায়গা নিয়ে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। কে জানে, হয়তো আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনকে বাদ দিয়েই হয়তো দল সাজাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ!
গেইলের সঙ্গে দুবার বিশ্বকাপ জিতেছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভোও। ৩৬ বছর বয়সী ব্রাভো কিছুদিন আগে অবসর ভেঙ্গে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন। আরেকবার বিশ্বকাপের মঞ্চ কাঁপানোর লক্ষ্য তাঁর। এক ঝাঁক তরুণ ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের ভিড়ে নিজের জায়গা নিয়ে ব্রাভো নিজেই নিশ্চিত নন। তবে তরুণদের ভিড়ে জায়গা করে নেওয়ার চ্যালেঞ্জটা উপভোগ করতে চান এই সাড়ে চার শ টি-টোয়েন্টি খেলা ব্রাভো।
কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'এই দলে জায়গা করে নেওয়া কঠিন। কিন্তু আমি আরেকবার সবার সঙ্গে বিশ্বকাপের মঞ্চে লড়তে চাই।'
জায়গা পাকা করার জন্য আইপিএল ও সিপিএলে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে যেতে হবে। কিন্তু গত কয়েক বছর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ব্রাভোর রেকর্ড ভালো নয়। বল হাতে অবশ্য ডেথ ওভারে ব্রাভো ছিলেন দুর্দান্ত। গতির বৈচিত্র্য ব্যবহার করে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানাতে তিনি সব সময়ই পটু। গত কয়েক বছরে ব্রাভোর স্বাভাবিক বলে গতি কমে আসায় স্লোয়ার বল অতটা কাজে লাগছে না। আরেক বিশ্বকাপে পড়ন্ত ফর্মের ব্রাভোকে দেখা যাবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে।

এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ফাফ ডু প্লেসি
করোনার বাধা না থাকলে ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবি ডি ভিলিয়ার্সকে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে দেখা যেত। অবসর ভেঙ্গে ডি ভিলিয়ার্স বিশ্বকাপ খেলতেন, তা নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক কুইন্টন ডি কক। দক্ষিণ আফ্রিকার থ্রি টি ক্রিকেটেও তিনি ছিলেন বাকি ক্রিকেটারদের থেকে যোজন যোজন এগিয়ে। সহজ কথা, এখনো দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা ব্যাটসম্যান ডি ভিলিয়ার্স। ৩৬ ছাড়িয়ে যাওয়া ডি ভিলিয়ার্সকে যে কোনো দলই পেতে চাইবে। মার্ক বাউচারের দক্ষিণ আফ্রিকা দলও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু বিশ্বকাপ এক বছর পিছিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার মন পাল্টে যাবে না তো?
ডি ভিলিয়ার্সের মতো অবস্থায় আছেন সাবেক অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিও। আগামী বিশ্বকাপে ৩৭ এ পা দিবেন ডু প্লেসি। বুড়িয়ে যাওয়া ডু প্লেসি টি-টোয়েন্টি দলের প্রথম পছন্দ থাকবেন কি না কে জানে।
শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজ
পাকিস্তানের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিক দুজনই বিশ্বকাপ খেলে বিদায় নিতে চেয়েছিলেন। বিশ্বকাপ পিছিয়ে গেলে অবসরও পেছানোর কথা বলেছিলেন হাফিস। মালিক তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনো কিছু পরিস্কার করেনি। চলতি বছরের অক্টোবরে ৪০ এ পা দেবেন হাফিজ। মালিক আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবেন ৩৯। গত ৬ মাসে পাকিস্তান বেশ কিছু তরুণ ক্রিকেটার পেয়েছে। এখন ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই অভিজ্ঞকে দলে রাখার পরিকল্পনা পাকিস্তানের আছে কি না কে জানে। তবে পাকিস্তানের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে হারানোর পেছনে বড় অবদান এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের।