টাকা থাকলে ঢালতে কী সমস্যা?

এবার মনের আনন্দে খেলোয়াড় কিনতে পারবেন গার্দিওলা। ছবি: রয়টার্স
এবার মনের আনন্দে খেলোয়াড় কিনতে পারবেন গার্দিওলা। ছবি: রয়টার্স

লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। এই গৌরী সেন বাংলায় সেই আমলে ছিলেন সুবর্ণবণিক। ইউরোপে এমন এক বণিকও হাঁটছেন গৌরী সেনের পথে। বেশ কিছু বছর ধরেই। তিনি আবার তেল ব্যবসায়ী। কিন্তু কাজে সেই গৌরী সেনের মতোই। লাগে টাকা, দেবেন সিটির মালিক শেখ মনসুর। পেপ গার্দিওলার কাজ শুধু ক্লাব মালিক ও পৃষ্ঠপোষকদের টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করা।

ভ্রুকুটি জাগছে? আবার এটুকু না বললে উল্টো অনেকেরই ভ্রুকুটি জাগত। গার্দিওলা সিটি কোচ হিসেবে যোগদানের পর ‘ইচ্ছেমতো’ টাকা-পয়সা খরচ করা যেন তাঁর গায়ের সঙ্গে লেপ্টে গেছে। এর পরিণামে প্রতি মৌসুমেই গুঞ্জন ওঠে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিষিদ্ধ হচ্ছে সিটি। আবার কী এক ভোজবাজিতে সব অভিযোগ প্রত্যাহার হয়। এবার অবশেষে শাস্তি মিলেছিল। কিন্তু ঠিকই উঠে গেছে নিষেধাজ্ঞা, কমেছে জরিমানাও। কিন্তু যে লাউ সেই কদু-ই। এবার যেমন, চ্যাম্পিয়নস লিগে নিষিদ্ধ হওয়ার ফাঁড়া গেছে সিটির ওপর দিয়ে। সেটিও উয়েফার আর্থিক খরচের সংগতি আইন না মানায়। কিন্তু এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই ইংলিশ ক্লাবটির। আগামী মৌসুমেও আলাদা সিটিকে দেখার কোনো সম্ভাবনা বোধ হয় নেই।

কাতালান সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ জানিয়েছে, ২০২০-২১ মৌসুমে স্কোয়াডের শক্তি বাড়াতে ৩৩০ মিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২৭২ কোটি টাকা) বাজেট গঠন করেছেন গার্দিওলা। সামনের দলবদলে চার ফুটবলার কিনতে এই অঙ্কটা খরচ করতে চান তিনি। সিটি ক্রীড়া পরিচালক টিক্সি বেগেরিস্তিন স্কোয়াডের দুর্বলতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছেন। লিভারপুল এবার লিগ জেতার পর তাঁদের এই নড়েচড়ে বসাও নতুন কিছু না। একেকটি মৌসুম যায় আর এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এবার যেমন দুজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার খুঁজছেন বেগেরিস্তিন-গার্দিওলা জুটি।

রক্ষণভাগে লাপোর্তেকে সঙ্গ দিতে ডান পায়ের একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার খুঁজছে সিটি। এছাড়াও একজন বাঁ পায়ের ডিফেন্ডার খোঁজা হচ্ছে যিনি লেফট ব্যাক হিসেবে খেলতে পারবেন। নাপোলির কালিদু কুলিবালি, সেভিয়ার ডিয়েগো কার্লোস ও ইন্টার মিলানের স্ক্রিনিয়ারের আছেন সিটির চাহিদাপত্রে। হাতে টাকাও আছে। এখন দুই দুইয়ে চার মেলানোর অপেক্ষা। কিন্তু এই মেলানোর খেলা খেলতে গিয়েই কয়েকবার ফেঁসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সিটি।

এর আগে গত জানুয়ারিতে বেরিয়েছিল বিস্ফোরক খবর। গার্ডিয়ান জানায়, ২০১৪ সালের আগে ১৩২১ কোটি টাকা লুকিয়েছে সিটি। উয়েফার আর্থিক সংগতি নীতি অনুযায়ী একটি ক্লাব ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ মৌসুমের জন্য সর্বোচ্চ ৪৫ মিলিয়ন ইউরো ক্ষতি দেখাতে পারে। অর্থাৎ ক্লাবের ফুটবল সংক্রান্ত আয়ের চেয়ে সর্বোচ্চ ব্যয় ৪৫ মিলিয়ন ইউরো করতে পারত। কিন্তু গার্ডিয়ান জানিয়েছে ওই সময়ে সিটির ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৮০ মিলিয়ন ইউরো। কিন্তু অ্যাকাউন্টিংয়ের হিসাবের মারপ্যাঁচে ক্লাব ১১৮.৭৫ মিলিয়ন পাউন্ড কম খরচ দেখিয়েছিল। বাংলাদেশি মূল্যমানে ১ হাজার ৩২১ কোটি টাকার এ গরমিল উয়েফা ধরে ফেলে। উইকিলিকসও ফাঁস করে দেয় সিটি যে ইচ্ছেমতো খরচ করছে তা উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখায়। প্রমাদ গুণে বসে উয়েফা।

গত ফেব্রুয়ারিতে আর্থিক তথ্য সঠিকভাবে না দেওয়ায় সিটিকে দুই মৌসুমের জন্য ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ করে উয়েফা। সে সঙ্গে ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) ইউরো জরিমানা করা হয়। কিন্তু সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালত (সিএএস) বরাবর এ শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করে সিটি। সে আপিলের রায় অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং জরিমানার অঙ্ক ১০ (১ কোটি) মিলিয়নে নামিয়ে আনা হয়। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াল?

টাকা থাকলে খরচের আবার লাগাম কী!