ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদতেন অসহায় ইমাম

পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান ইমাম-উল হক। ফাইল ছবি
পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান ইমাম-উল হক। ফাইল ছবি
স্বজনপ্রীতির কারণেই তিনি পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়েছেন—২০১৭ সালে ইমাম-উল হক যখন পাকিস্তান দলে ডাক পেলেন এমন কথা অনেকেই বলেছিলেন!

বিখ্যাত বাবার সন্তানদের ভবিষ্যৎটা একটু অন্যরকমই হয়। সব সময়ে তাঁকে তুলনা করা হয় তাঁর বাবার সঙ্গে। চাচা বিখ্যাত হলেও কিন্তু কম সমস্যা না। পাকিস্তানের ক্রিকেটার ইমাম-উল হকের কথাই ধরুন। চাচা পাকিস্তানের বিখ্যাত ব্যাটসম্যান ও সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম-উল হক। সব সময়ই তাই ইমামকে তুলনা করা হয় ইনজামামের সঙ্গে। কিন্তু ওই পর্যায়ে যেতে তাঁকে সময় দিতে হবে। অথচ ইমামকে দলে ঢুকেই শুনতে হয়েছে অপবাদ। স্বজনপ্রীতির কারণেই তিনি পাকিস্তান দলে সুযোগ পেয়েছেন—২০১৭ সালে ইমাম যখন পাকিস্তান দলে ডাক পেলেন এমন কথা বলেছিলেন অনেকেই।

সেই সময়টা যে কত কষ্টে কেটেছে তা অনেকবারই বলেছেন ইমাম। সম্প্রতি আবার সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন ইএসপিএনক্রিকইনফোর চ্যাট শো ক্রিকেটবাজিতে, ভারতের সাবেক ক্রিকেটার দ্বীপ দাসগুপ্তের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। ২০১৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে দলে ঢোকেন ইমাম। তাঁর দলে ঢোকার খবর আসতেই শুরু হয় নানা ধরনের সমালোচনা। কেউ প্রশ্ন তোলেন, ইমাম কী এমন করেছে যে পাকিস্তান দলে জায়গা পাবেন। কেউ আবার বলতে থাকেন, প্রধান নির্বাচক ইনজামামের ভাইয়ের ছেলে বলেই পাকিস্তান দলে এসেছেন ইমাম। সবকিছু মিলিয়ে পাকিস্তানের হয়ে অভিষেকের আগেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন ইমাম।

সম্প্রতি দ্বীপ দাসগুপ্তকে তিনি বলেছেন সেই কষ্টের কথা, ‌‌‘সত্যি বলতে কী আমি যখন দলে জায়গা পাই তখন শুধু একজনই বন্ধু ছিল আমার—বাবর আজম। কিন্তু আমাদের দুজনেরও তেমন একটা যোগাযোগ হতো না। কারণ বাবর তখন জাতীয় দলে নিয়মিত আর আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতাম। আমাদের মধ্যে খুব বেশি কথাও হতো না।’

জাতীয় দলে ঢোকার পরও শুরুর দিকে বাবরের সঙ্গে তেমন কথা হতো না, এমনটাই বলেছেন ইমাম, ‌‌‘সে ক্রিকেটেই মনোযোগ বেশি দিচ্ছিল। সেই সময় সে ভালো ছন্দেও ছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুটি সেঞ্চুরি করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে সময়টা তার ভালো যাচ্ছিল না। তাই ওয়ানডে ভালো করতে চাইছিল। এ কারণে কারও সঙ্গেই খুব একটা কথা বলত না।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুটি ওয়ানডেতে একাদশে জায়গা পাননি ইমাম। তবু মানুষ সমালোচনা করে যাচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ঠাট্টা-তামাশাও করছিল অনেকেই। এ কারণে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন ইমাম, ‌‌‌‘এসব যখন ঘটছিল, আমি খাবার খেতেও একা একাই যেতাম। এটা ছিল আমার প্রথম সফর। একজন খেলোয়াড়ের প্রথম সফরে কী হতে পারে সেটা তো আপনি জানেনই।’

মোবাইল ফোনেও সময় কাটাতে পারছিলেন না ইমাম। কারণ ফোন খুললেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা চোখে পড়ত। ওই সময়টাতে বড় একা হয়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান, ‌‘আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী করব। পরিবারের লোকেদের সঙ্গেও কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমার সমস্যা নিয়ে ওদের আমি চাপে ফেলতে চাইনি। পরে আমি মোবাইল বন্ধ করে ম্যানেজারের কাছে জমা দিয়েছি।’

বিদেশ-বিভুঁইয়ে একা হয়ে পড়া ইমাম খুব অসহায় বোধ করছিলেন। দ্বীপ দাসগুপ্তের কাছে বলেছেন, ‌‘আমার মনে আছে। সে সময় আমি ঝরনার নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদতাম। তখনো পাকিস্তানের হয়ে খেলিনি। অথচ সব আত্মবিশ্বাস উবে যেতে লাগল। তখন শুধু একটা কথাই ভাবতাম—আমি না খেলতেই এই অবস্থা! আমি যদি খেলতে নামি আর ভালো করতে না পারি তাহলে কী হবে!’

ওই সিরিজেরই তৃতীয় ম্যাচে অভিষেক হয়েছে ইমামের। তাঁর দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলে পাকিস্তান। সেটি নিয়ে পাকিস্তানের হয়ে ৩৭টি ওয়ানডে, ১১টি টেস্ট ও ২টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ইমাম। টেস্টে এখনো সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও ওয়ানডেতে করেছেন ৭টি সেঞ্চুরি।