বাংলাদেশ ও পাকিস্তান যেখানে এক কাতারে

মাশরাফি বিন মুর্তজা, শাহাদত হোসেন ও রুবেল হোসেন। ছবি: প্রথম আলো
মাশরাফি বিন মুর্তজা, শাহাদত হোসেন ও রুবেল হোসেন। ছবি: প্রথম আলো

টেস্ট ক্রিকেটে গত ২০ বছরে বাংলাদেশের বোলিংয়ের চিত্রটা কেমন?

এক কথায় স্পিনবান্ধব কৌশল। ঘরে খেলা হলে উইকেট বানানো হয় মূলত স্পিনারদের কথা মাথায় রেখেই। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী উদাহরণ খুঁজতেও গলদঘর্ম হতে হয়। পেসারবান্ধব কোনোকিছু এতটাই বিরল। এবার পাকিস্তানের কথায় আসা যাক। তাদের বোলিংয়ের চিত্রটা কেমন?

এটাও সহজ প্রশ্ন। ক্রিকেটপ্রেমী মাত্রই জানেন পাকিস্তান পেসার–প্রসবা দেশ। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার, মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমির...আরও কত নাম! রসিকতা করে অনেকে বলেন, অন্য দেশের জাতীয় দলে খেলা কিছু পেসার পাকিস্তানে পাড়ার ক্রিকেটেও দেখা যায়! অবশ্যই অন্য দেশগুলোর বোলারদের ছোট করতে এমন কথা বলা হয় না। পাকিস্তানে পেসারদের প্রাচুর্য বোঝাতেই এমন রসিকতা।

আর পাকিস্তানি কিংবদন্তি পেসারদের অর্জনও চোখ রগড়ে দেওয়ার মতো। কিন্তু পরিসংখ্যানে ভালো করে তাকালে একটা ফোঁকর চোখে পড়বেই। গত ২০ বছরে ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানি পেসারদের অর্জন কী কী? হ্যাটট্রিক কিংবা ম্যাচ জেতানো বোলিংয়ের কথা বলা হয়নি। এমনকি টুর্নামেন্ট জেতানো বোলিংও না। বলা হচ্ছে মাইলফলকের কথা। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেমার রোচ যেমন টেস্টে ২০০ উইকেটের দেখা পেলেন। তেমনি পাকিস্তানের কোনো পেসার কি গত দুই দশকে টেস্টে ২০০ উইকেটের দেখা পেয়েছেন?

রোচ এই শতাব্দীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম পেসার হিসেবে আজ ২০০ উইকেটের দেখা পেলেন। এ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে দারুণ এক তথ্যই জানিয়েছেন পাকিস্তানের ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ মাজহার আরশাদ। তাঁর টুইট, 'পাকিস্তান ও বাংলাদেশই দুটো দল, যাদের কোনো পেসার গত ২০ বছরে টেস্টে ২০০ উইকেটের দেখা পায়নি।' বাংলাদেশের কথা না হয় মানা গেল কিন্তু পাকিস্তানের! বিশ্বাস করা কঠিন।

পরিসংখ্যান মাঝে–মধ্যে আস্ত ‌'গাধা' হলেও ‌'মিথ্যাবাদী' নয়। ঠিক আজকের দিন থেকে গত ২০ বছরের পরিসংখ্যান চষে পাকিস্তানের এমন কোনো পেসার বের করা যায়নি। এই দুই দশকে দেশটির মাত্র দুজন বোলার টেস্টে ন্যূনতম ২০০ উইকেটের দেখা পেয়েছেন। দুজনেই স্পিনার, দানিশ কানেরিয়া (৬১ ম্যাচে ২৬১ উইকেট) ও ইয়াসির শাহ (৩৯ ম্যাচে ২১৩ উইকেট)। এমনকি তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীও একজন স্পিনার! সাঈদ আজমল (৩৫ ম্যাচে ১৭৮ উইকেট)। সাবেক পেসার উমর গুল ৪৭ টেস্টে ১৬৩ উইকেট নিয়ে চারে। এরপর শোয়েব আখতার, ৩১ টেস্টে ১৩৩ উইকেট। শীর্ষ দশে পেসার মাত্র চারজন! বাকি দুজন সেই কলঙ্কিত জুটি—আসিফ ও আমির।

বাংলাদেশ টেস্টে বিশেষ করে ঘরের মাঠে অনেকটা ঘোষণা দিয়েই দলে স্পিনারদের আধিক্য রেখে নেমে থাকে। তাই পেসারদের এ তালিকায় না থাকাটা এক অর্থে অস্বাভাবিক কিছু নয়। যদিও টেস্ট ক্রিকেটে বোলিংয়ের সৌন্দর্য বিবেচনায় পেসারদের এগিয়ে রাখেন অনেকে। ম্যাচ জেতানোর ক্ষেত্রেও। তবু পরিসংখ্যানটা দেখে নেওয়া যাক। গত ২০ বছরে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে ন্যূনতম ২০০ উইকেট একজনই নিয়েছেন। ঠিকই ধরেছেন। সাকিব আল হাসান (৫৬ ম্যাচে ২১০ উইকেট)।

শীর্ষ পাঁচে পেসার একজনই। মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেট নিয়ে পাঁচে আছেন সাবেক এ অধিনায়ক। শীর্ষ দশে বাকি দুজন শাহাদত হোসেন (৩৮ টেস্টে ৭২ উইকেট) ও রুবেল হোসেন (২৭ ম্যাচে ৩৬ উইকেট)। সাকিব ছাড়া এ সময় অন্তত ১০০ উইকেট পাওয়া বাকি দুই বোলার তাইজুল ইসলাম (২৯ টেস্টে ১১৪ উইকেট) ও মোহাম্মদ রফিক (৩৩ টেস্টে ১০০ উইকেট)।

তাহলে চিত্রটা কী দাঁড়াল? পাকিস্তান পেস প্রসবা হলেও গত ২০ বছর বিবেচনায় দাঁড়িয়ে স্পিনবান্ধব বাংলাদেশের কাতারে। আর সে কাতারে এ দুটি দল ছাড়া আর কেউ নেই!