ব্রাজিলে শিশুরা নেইমারের চেয়েও বেশি মেসিকে পছন্দ করে

ব্রাজিলে নেইমারের চেয়েও মেসি জনপ্রিয় দাবি জে রবার্তোর। ছবি: এএফপি
ব্রাজিলে নেইমারের চেয়েও মেসি জনপ্রিয় দাবি জে রবার্তোর। ছবি: এএফপি

তাঁর নিজ দেশ আর্জেন্টিনায়ই লিওনেল মেসি সবচেয়ে জনপ্রিয় নন বলে শোনা যায়। সেখানে ডিয়েগো ম্যারাডোনার সঙ্গে প্রতিনিয়ত তুলনা চলে তাঁর, আর তাতে আর্জেন্টিনার সাধারণ মানুষের চোখে ম্যারাডোনা যেখানে ঈশ্বরতুল্য, মেসি সেখানে যেন পাশের বাড়ির ছেলে। সেই মেসিরই নাকি ব্রাজিলে জনপ্রিয়তা নেইমারের চেয়েও বেশি! এমনই দাবি করছেন ব্রাজিলের সাবেক মিডফিল্ডার জে রবার্তো। মেসি বিশ্বকাপ জিতলে তাঁর ভালো লাগত বলেও জানাচ্ছেন ২০০৬ বিশ্বকাপে খেলা এই মিডফিল্ডার।

আর্জেন্টিনায় মেসির জনপ্রিয়তা অতটা না হওয়ারই কথা। বিশেষ করে তুলনাটা যখন ম্যারাডোনার সঙ্গে। ম্যারাডোনা বলতে গেলে একাই আর্জেন্টিনাকে ছিয়াশি বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন, কিন্তু মেসি? না আর্জেন্টিনার ক্লাব ফুটবলে খেলেছেন, না দেশকে বিশ্বকাপ বা মহাদেশীয় শিরোপা এনে দিতে পেরেছেন। থাকেন বার্সেলোনায়, আর্জেন্টিনায় যাওয়া শুধু ছুটিতে। ক্যারিয়ারে যা অর্জন বার্সেলোনার জার্সিতেই। আর্জেন্টিনার অনেকের চোখেই মেসি আর্জেন্টিনার মেসি নন, বার্সেলোনার মেসি। এমনকি খেলোয়াড়ি দক্ষতায় মেসির চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও বোকা জুনিয়র্সের হয়ে মাঠ মাতানো কার্লোস তেভেজও আর্জেন্টিনাতে মেসির চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ছোটবেলায় আগুনে পুড়ে যাওয়া মুখের ক্ষতটা চিরদিন বয়ে চলা তেভেজের সঙ্গে আর্জেন্টাইনরা নিজেদের মিলটা বেশি খুঁজে পান কি না!

সেই মেসিই ব্রাজিলে শিশুদের কাছে নাকি নেইমারের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়! ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার যতই চিরকালীন বৈরিতা থাকুক, মেসিকে বেশ পছন্দ জে রবার্তোর। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াসি স্পোর্টসে ৪৬ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ানের কথায় মেসির প্রতি মুগ্ধতাই ঝরেছে। সেখানে সর্বকালের সেরার বিতর্কে জে রবার্তোর রায়, ‘পেলে ও ম্যারাডোনার পাশাপাশি ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের একজন মেসি।’ এরপরই ব্রাজিলেও মেসির জনপ্রিয়তা বোঝাতে বললেন, ‘ব্রাজিলে অনেক শিশু আছে যারা নেইমারের চেয়েও মেসিকে বেশি পছন্দ করে। কারণ মেসি যেভাবে খেলে সেটা ব্রাজিলিয়ানরা খেলাটা যেভাবে খেলে, সেই ধরনের সঙ্গে বেশি যায়।’

মেসির ফুটবলের অনেক প্রশংসাই এ পর্যন্ত অনেকে অনেকবার করেছেন, কিন্তু নেইমারের চেয়েও মেসির খেলা বেশি ব্রাজিলিয়ান ঘরানার—এ কথাটা নতুনই বটে! বল পায়ে কারিকুরিতে প্রতিপক্ষকে বোকা বানানো, কখনো ইচ্ছে হলো তো প্রতিপক্ষের মাথার ওপর দিয়ে বল উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া, তো কখনো দুই পায়ে চেপে ধরে পেছন থেকে বলটাকে নিজের মাথার ওপর দিয়ে সামনে নিয়ে আসা...নেইমারের ফুটবলেই না বরং কোপাকাবানা বিচে মনের আনন্দে খেলতে থাকা কোনো ব্রাজিলিয়ান তরুণের আনন্দের ছোঁয়া পাওয়া যায়! জে রবার্তো হয়তো মেসির সাপের মতো আঁকাবাঁকা দৌড় আর চোখধাঁধানো ড্রিবলিংয়ে চার-পাঁচজনকে কাটিয়ে যাওয়াতেই ব্রাজিলিয়ান ছন্দ খুঁজে পান বেশি।

তবে মেসিকে নিয়ে একটা আক্ষেপও আছে জে রবার্তোর। একজন ব্রাজিলিয়ান হয়েও অন্তত এই আর্জেন্টাইনের বেলায় বিশ্বকাপ দিয়ে দিতে যেন রাজি তিনি! মেসি কখনো বিশ্বকাপ জেতেননি, এটিই পোড়ায় জে রবার্তোকে, ‘খুব খুশি হতাম যদি মেসি বিশ্বকাপ জিতত। কারণ সে ক্ষেত্রে ও নিজেকে ইতিহাসের সেরা দাবি করতে পারত। ওর ক্যারিয়ারে এই একটাই খুঁত।’

মেসি নিজেও হয়তো এই খুঁতটা নিয়ে প্রতিনিয়ত আক্ষেপে পোড়েন। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের মাটিতেই আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েও বিশ্বকাপ ছোঁয়া হয়নি মেসির, অতিরিক্ত সময়ের গোলে ম্যাচটা জার্মানি জেতে ১-০ গোলে। তবে আর্জেন্টিনাকে যিনি বিশ্বকাপ জিতিয়ে আর্জেন্টিনার নায়ক হয়ে আছেন, সেই ম্যারাডোনার চেয়ে মেসিকে এগিয়েই রাখেন জে রবার্তো, ‘আমি ওর বিপক্ষে খেলেছি, পাঁচবার (আসলে ছয়বার) বর্ষসেরা খেলোয়াড় হিসেবে ওর নাম উচ্চারিত হতে দেখেছি। সে কারণে (মেসি-ম্যারাডোনা বিতর্কে) আমি মেসিকেই ভোট দেব। দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ও অনেক উঁচুতে ধরে রেখেছে নিজেকে!’