ফ্রান্সে চারে চার, নেইমারদের চোখে এখন শুধুই চ্যাম্পিয়নস লিগ

শিরোপা নিয়ে পিএসজির উল্লাস। ছবি: পিএসজি টুইটার
শিরোপা নিয়ে পিএসজির উল্লাস। ছবি: পিএসজি টুইটার

ফ্রান্সের ঘরোয়া কোনো শিরোপা পিএসজি না জেতাই তো অঘটন। সেই ২০১১ সালে কাতারি মালিকানায় আসার পর থেকেই তো হাতেগোনা দু-একবার বাদ দিলে ফ্রান্সের ঘরোয়া সব ট্রফিই গেছে পিএসজির ক্যাবিনেটে। এই মৌসুমে দাপটটা একেবারে পরিপূর্ণ হলো। ঘরোয়া চার শিরোপার চারটিই জয় কাল নিশ্চিত করেছে পিএসজি।

স্তাদ দো ফ্রান্সে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় শেষে গোলশূন্য ম্যাচে অলিম্পিক লিওঁকে টাইব্রেকারে ৬-৫ ব্যবধানে হারিয়ে কাল ক্যুপ দো লা লিগ (লিগ কাপ) জিতেছে পিএসজি। করোনাভাইরাসের কারণে আগেভাগেই শেষ টেনে দেওয়া লিগে অনেক এগিয়ে থাকা পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছে ফরাসি লিগ কর্তৃপক্ষ, এর বাইরে এই মৌসুমে ত্রফি দে শাম্পিওন জিতেছে পিএসজি, গত সপ্তাহেই জিতেছে ক্যুপ দো ফ্রান্স (ফ্রেঞ্চ কাপ)। এবার চারে চার তো হলো, নেইমার-এমবাপ্পেদের চোখ এখন ফ্রান্স ছাড়িয়ে ইউরোপ জয়ের। করোনা বিরতি কাটিয়ে আর কদিন পরই যে মাঠে ফিরছে চ্যাম্পিয়নস লিগের বাকি অংশ! আর অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাই যে পিএসজির সবচেয়ে বড় স্বপ্ন, তা তো বলে দিতে হয় না!

কাতারি মালিকানায় আসার পর থেকে ফ্রান্সে দাপট প্রতিষ্ঠা করা গেলেও ইউরোপে আলো ছড়াতে পারেনি পিএসজি। ইউরোপে কূলীনদের সারিতে নাম লেখানোর স্বপ্নে ব্যাকুল পিএসজি দুই মৌসুম আগে তাই ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো দলবদলের বিশ্বরেকর্ড গড়ে নিয়ে আসে নেইমারকে, একই সঙ্গে ১৮ কোটিতে নিয়ে আসে কিলিয়ান এমবাপ্পেকেও। তাতেও এতদিন লাভ হয়নি। গত দুই মৌসুমই শেষ ষোলোতে বাদ পড়েছে পিএসজি। সেটির পেছনে অবশ্য দুই মৌসুমে চোটে পড়ে নেইমারের মাঠের বাইরে থাকা একটা বড় কারণ ছিল।

এবার নেইমার এখন পর্যন্ত সুস্থ, ফিট। যদিও গত সপ্তাহে ফ্রেঞ্চ কাপের ফাইনালে সেঁত এতিয়েনের অধিনায়ক লইক পেরিনের বাজে ট্যাকলে অ্যাঙ্কেলে মোচড় নিয়ে মাঠ ছাড়েন এমবাপ্পে। তাঁর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা-না খেলা সংশয়ে। তবে তিন মৌসুম পর চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা পিএসজি স্বপ্ন দেখে। এবার করোনার কারণে চ্যাম্পিয়নস লিগের সূচিই বদলে গেছে। দুই লেগের বদলে কোয়ার্টার ও সেমিফাইনাল হবে এক লেগের, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে টুর্নামেন্টের বাকি সব ম্যাচ হবে পর্তুগালের লিসবনে। ১২ আগস্ট কোয়ার্টার ফাইনালে পিএসজির প্রতিপক্ষ এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগে এসে দারুণ চমক দেখাতে থাকা আতালান্তা।

সেদিকেই এখন চোখ পিএসজির। কাল লিওঁর বিপক্ষে টাইব্রেকারে দলের ষষ্ঠ শট জালে জড়িয়ে পিএসজির জয় নিশ্চিত করা পাবলো সারাবিয়াও ম্যাচের পর বললেন, 'অনেক কঠিন একটা ম্যাচ ছিল। এটা সত্যি আমরা মৌসুমে চারটি শিরোপা জিতেছি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচের আগে ভালো ছন্দে থাকা আর আত্মবিশ্বাস পেতে এই জয়গুলো জরুরি ছিল। দলের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। এখন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন আতালান্তার বিপক্ষে ম্যাচের আগে আমরা শারীরিকভাবে সেরা অবস্থায় থাকি।'

শিরোপা জয় আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারে, তবে গত দুই সপ্তাহের পারফরম্যান্স পিএসজিকে কতটা আত্মবিশ্বাস জোগাবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। আতালান্তা যেখানে করোনা বিরতির পর ফিরে ইতালিয়ান লিগে ১২ ম্যাচে ২৮ গোল করেছে, পিএসজি হাঁটছে উল্টো পথে। প্রস্তুতি ম্যাচে গোলের বান নামালেও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এসে অনেকটাই ধারহীন। গত সপ্তাহে ফ্রেঞ্চ কাপের ফাইনাল জিতেছিল ১-০ গোলে, কাল তো ১২০ মিনিট শেষেও গোলহীন।

নেইমার ও অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া গোলের সুযোগ হারিয়েছেন, নেইমারের ফ্রি-কিক একবার দারুণভাবে ফিরিয়েছেন লিওঁ গোলকিপার লোপেস। প্রথমার্ধে ইদ্রিসা গানা গেয়ের শটও দারুণভাবে ফিরিয়েছেন লোপেস, নেইমারের একটা হেডও সেভ করেছেন দারুণভাবে। দুদলের হাতেগোনা সুযোগ তৈরি করার ম্যাচে লিওঁ-ও যে একেবারেই সুযোগ পায়নি, তা নয়। লিওঁ মিডফিল্ডার হুসাম আউয়ার দারুণ সুযোগ হারিয়েছেন, প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে জ্যাসন ডেনায়েরের শট গেছে জাল ঘেঁষে। ১১৯ মিনিটে লিওঁর রাফায়েল লাল কার্ড দেখেছেন বটে, কিন্তু ততক্ষণে একজন থাকা-না থাকার প্রভাব পড়ার মতো সময় আর নেই।

শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হলো নিষ্পত্তি, তাতে পিএসজির ছয় শটের প্রতিটিই গেছে জালে, লিওঁর হয়ে ষষ্ঠ শটটি জালে জড়াতে ব্যর্থ বার্ত্রান্দ ত্রায়োরে। পিএসজির হয়ে একে একে শট জালে জড়িয়েছেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, মার্কো ভেরাত্তি, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, অ্যান্ডার হেরেরা, নেইমার ও সারাবিয়া।

পিএসজির এই গোল না পাওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগে ভোগাবে কি না, তা সময়ই বলবে। সেটির উত্তর হয়তো এমবাপ্পের খেলা-না খেলার ওপরও অনেক নির্ভর করে। আতালান্তার বিপক্ষে এমবাপ্পেকে পাওয়ার ব্যাপারে অবশ্য অল্প হলেও আশাবাদী হতেই পারেন পিএসজি সমর্থকেরা। কাল ম্যাচের পর এমবাপ্পেকে নিয়ে হেরেরা তেমন আশার গানই যে শুনিয়েছেন, 'ও সমস্যা ছাড়াই হাঁটতে পারছে। (আতালান্তার বিপক্ষে) ম্যাচটা খেলার অনেক ইচ্ছা আছে ওর। প্রতিদিন, সকালে, বিকালে কাজ করছে এ নিয়ে। তবে শেষ পর্যন্ত ওর খেলা সম্ভব না হলেও আমাদের হাতে বিকল্প আছে অনেক। কিলিয়ান দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন, আমি নিশ্চিত ও খেলার জন্য সম্ভব সব চেষ্টাই করবে।'