বিয়ের পরই তাঁদের করোনার ঈদ

গত এক মাসে বিয়ে করেছেন নাজমুল, মেহেদী, সাদমান, মোসাদ্দেকরা। ছবি: সংগৃহীত
গত এক মাসে বিয়ে করেছেন নাজমুল, মেহেদী, সাদমান, মোসাদ্দেকরা। ছবি: সংগৃহীত

করোনার মধ্যে ক্রিকেটারদের বিয়ের যেন হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। রাজশাহীতে নাজমুল ইসলাম, খুলনায় মেহেদী হাসান, ঢাকায় সাদমান ইসলাম ও ময়মনসিংহে মোসাদ্দেক হোসেন—সবাই গত এক মাসে গাঁটছড়া বেঁধেছেন চারজন। বিয়ে করতে না করতেই এসে গেল ঈদ। বিয়ের পর প্রথম ঈদ এমনিতেই বিশেষ উপলক্ষ। করোনার কারণে অবশ্য বিশেষ উপলক্ষ মন ভরে উপভোগ করা হচ্ছে না সদ্য বিবাহিত ক্রিকেটারদের।

তরুণ সম্ভাবনাময় বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল কদিন আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সাবরিন সুলতানাকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর প্রথম ঈদের আলাদা রোমাঞ্চ চাইলেও উপভোগ করতে পারছেন না তিনি, ‘করোনার কারণে তো অবস্থা ভালো না। ইদের পর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হবে না। ইচ্ছে ছিল স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যাব। এটা নিয়ে আফসোস করছি বলবা না। তবে হলে ভালো হতো। তবে এখন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইদের দিনটা কাটাব এটাও ভালো।’

ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও ভালো সময় কাটছে নাজমুলের। করোনার আগে জাতীয় দলে নিয়মিত হয়েছিলেন। পেয়েছিলেন তিন সংস্করণের ক্রিকেটের কেন্দ্রীয় চুক্তি। বিয়ে করে জীবনে আরও থিতু হতে চাইছেন নাজমুল, ‘হ্যাঁ, সব দিক থেকে ভালো যাচ্ছে। আশা করছি সামনেও ভালো যাবে।’

নাজমুল বেশ ঘটা করে বিয়ের খবর জানালেও চুপিসারে কাজটা সারতে চেয়েছিলেন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান। দেশের হয়ে ৪টি টি-টোয়েন্টি খেলা মেহেদীর বিয়ের খবর ফাঁস করে দেন তাঁরই বন্ধু আরেক স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। মেহেদী বললেন, ‘কেউ জানত না বিয়ের কথা। মিরাজ ফাঁস করে দিয়েছে। করোনার সময় চেয়েছিলাম একেবারে পারিবারিকভাবে বিয়ে করতে। শুধু পরিবারের মানুষদের নিয়ে কবুল বলা।’

অনেক দিন ধরেই অসুস্থ মেহেদীর মা ছেলের বউ দেখতে চেয়েছিলেন। অনেক দিন ধরেই মেহেদীর বিয়ের চেষ্টা করছিল মেহেদীর পরিবার। খুলনার মেয়ে ঋতুকে মায়ের পছন্দেই বিয়ে করেছেন মেহেদী, ‘বিয়েটা দরকারও ছিল। বাসার দরকার ছিল। অনেক দিন ধরেই আমার পরিবারের মানুষেরা চেষ্টা করছিল। সময়ও ভালো ছিল। মা বউ দেখতে চাইছিল। তাঁরও তো আনন্দ-খুশির ব্যাপার আছে। আর বিয়ে পুরো আম্মুর পছন্দমতো হয়েছিল।’ করোনাকালের এই ঈদে তাঁরও তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই, পরিবারের সঙ্গেই কাটবে দিনটা।

দেশের হয়ে ৬ টেস্ট খেলা ওপেনার সাদমান নতুন বিয়ে করে হয়ে পড়েছেন মহাব্যস্ত। সাদমানরা পারিবারিকভাবে গরুর খামারের ব্যবসায়ী। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাশা ওয়াহেদকে বিয়ে করতে না করতেই বলে এসেছে কোরবানির ঈদ। ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সাদমানও। তবে ঈদের দিনটা নতুন বউ ও পরিবারের সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা সাদমানের, ‘আগেই পরিচয় ছিল ওর সঙ্গে। আগেও ঘোরাফেরা হয়েছে। বিয়ের পরও ওই আগের মতোই চলছিল। কিন্তু আমি আমাদের খামার নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি বিয়ের পর। খুব একটা দেখা হয়নি। ইচ্ছে আছে ঈদের দিন একসঙ্গে কাটানোর।’

সাদমান, মেহেদীরা সবে মধ্য বিশে পা রেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের অল্প বয়সে বিয়ে নিয়ে অনেক কথা হলেও নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে অস্বস্তি নেই ক্রিকেটারদের মধ্যে। মেহেদী যেমন বলছিলেন, ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া তো বিয়ে হয় না। অনেকের ৫০ বছর বয়সে বিয়ে হয়। আবার অনেকের ২০ বছরে।’ সাদমানের আবার ভিন্ন মত, ‘করোনার এই বিরতিটা আমি সামনে পাব বলে মনে হয় না। খেলা শুরু হয়ে গেলে আর সুযোগ হবে না। বিয়ের প্রস্তুতির জন্য কিছু সময় তো লাগে। সবকিছু মিলিয়ে এখনই বিয়েটা করার সিদ্ধান্ত নিই। পরিবারও সায় দিয়েছিল।’

২৪ বছর বয়সী মোসাদ্দেক আবার গত ১২ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। ২০১২ সালে প্রথম বিয়ে করেন মোসাদ্দেক। পারিবারিক ঝামেলায় টেকেনি সেই বিয়ে। গত মাসে ময়মনসিংহের মেয়ে উম্মে তামান্নার সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি।

মজার ব্যাপার, এক মাসের ব্যবধানে যে চারজনের বিয়ে হলো, সেই মোসাদ্দেক, নাজমুল, মেহেদী ও সাদমান চারজনই বন্ধু। একই মাসে চার বন্ধুর পিঠাপিঠি বিয়ে নিয়ে মজা করে মেহেদী বলছিলেন, ‘সব কীভাবে যেন মিলে গেল! এক মাসে চার বিয়ে। সবাই আবার বন্ধু। সবার সঙ্গে কথা হয়। সাইফউদ্দিন ফোন দিয়েছিল সেদিন। ওকেও বলেছি বিয়ে করে ফেলতে (হাসি)।’