ওয়াহাবকে স্লেজিং করেই সেদিন ভুলটা করেছিলেন ওয়াটসন

২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়াহাব রিয়াজ ও শেন ওয়াটসনের সেই মুহূর্ত। ছবি: এএফপি
২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়াহাব রিয়াজ ও শেন ওয়াটসনের সেই মুহূর্ত। ছবি: এএফপি

সম্ভবত ওয়াহাব রিয়াজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে প্রশংসিত মুহূর্ত সেটি। শেন ওয়াটসনের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তগুলোর একটি। কোন মুহূর্তের কথা বলা হচ্ছে, তা বুঝে নিতে ক্রিকেটপ্রেমীদের মোটেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়াটসনকে একের পর এক বাউন্সারে ওয়াহাবের অসহায় করে রাখা ওই বিধ্বংসী স্পেল!

এত দিন পর এসেও সেই স্পেলের কথা ভুলতে পারছেন না শেন ওয়াটসন। ইনস্টাগ্রামে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার বললেন, ওই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময় ওয়াহাবকে স্লেজিং করেই ভুলটা করেছিলেন তিনি। ওয়াহাব যে এত জোরে বল করতে পারেন, সেটিও নাকি এর আগে বুঝতে পারেননি।

পাকিস্তানের ২১৩ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে সেদিন অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা বেশ নড়বড়েই হয়েছিল। ৫৯ রানের মধ্যে ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ ও অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ককে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার ও ক্লার্ক দুজনকেই আউট করেন ওয়াহাব। ১১তম ওভারে ওয়াহাবের সে রাতের বোলিংয়ের বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা বাউন্সারে ক্লার্ক ফিরতেই ক্রিজে আসেন ওয়াটসন। এসেই সামনে পড়েন ওয়াহাবের বাউন্সার-বানের সামনে।

ওয়াহাবের এরপরের চারটি ওভার যেন ওয়াটসনের জন্য ছিল বিষময়। এর মধ্যে একবার ফাইন লেগে ওয়াটসনের ক্যাচও পড়েছে। এত দিন পর ইনস্টাগ্রাম লাইভে প্রশ্নোত্তর পর্বে ওয়াটসন স্বীকার করলেন, ওই চার ওভার তাঁর জন্য ‘অনেক অস্বস্তির’ হলেও পেছন ফিরে দেখলে ওই মুহূর্তটা তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম প্রিয় মুহূর্তই মনে হয়।

‘আমার ক্যারিয়ারের অনেক বিশেষ মুহূর্তগুলোর একটি ছিল সেটি। যদিও সে সময়ে অতটা উপভোগ্য মনে হচ্ছিল না। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই কোয়ার্টার ফাইনালটাতে ফিরে দেখলে ভালোই লাগে...ওয়াহাব যেভাবে খ্যাপাটে হয়ে উঠেছিল, বাউন্সারে বাউন্সারে আমার জান শেষ করে দিচ্ছিল। দারুণ নিখুঁত বোলিং করছিল ও। আমাকে টানা বাউন্সার দিয়ে যাচ্ছিল’—ইনস্টাগ্রাম লাইভে বলেছেন ওয়াটসন।

ওয়াহাবের অমন খ্যাপাটে হয়ে ওঠার পেছনে নিজের একটা স্লেজিংয়ের দায়ও দেখেন ওয়াটসন, ‘ওয়াহাব যে এত জোরে বল করতে পারে, সেটা আমি ভাবিইনি। আমার বোকামি বা সরলতা বলতে পারেন সেটিকে। (পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের সময়) ওকে আমি কিছু একটা বলেছিলাম। ও মিচেল স্টার্কের একের পর বলে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু একটাও ব্যাটে লাগাতে পারছিল না। আমি তখন ওর পাশ দিয়ে দৌড়ে যাওয়ার সময় বললাম, ‘‘তোমার ব্যাটে কি ছিদ্র আছে? একটা বলও তো ব্যাটে লাগাতে পারছ না!’’ আমি তখন বুঝতেই পারিনি ও এত জোরে বল করতে পারে, এরপর আমি যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলাম, ও আমার জান খেয়ে ফেলেছে!’

সে সময় অসহায় অবস্থায় থাকলেও এখন মুহূর্তটার স্মৃতি ওয়াটসনকে আনন্দই দেয়, ‘মুহূর্তটায় পেছন ফিরে দেখলে, এমন বিশেষ মুহূর্তটার যে অংশ হতে পেরেছি, তাতেই ভালো লাগে। তখন যদিও অনেক অস্বস্তিতে ছিলাম। ও আমার ওপর চেপে বসেছিল। ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবই ভালো হয়েছে।’

ওয়াটসনের স্মৃতিতে ঘটনাটা বিশেষ হয়ে আছে হয়তো সেটির সমাপ্তির জন্যই। অমন চাপ সয়ে নিয়েও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ৬৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন ওয়াটসন, অস্ট্রেলিয়াকে ৬ উইকেটে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। শেষ পর্যন্ত তো ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপও জেতে অস্ট্রেলিয়া।