পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন মোহামেডানের বিদেশিদের অসহায় ঈদ

ক্লাবের মসজিদের ইমামের সঙ্গে মোহামেডানের দুই বিদেশি ফুটবলার সুলেমান ( ডানে) ও ওসমান ( বামে)। ছবি: সংগৃহীত
ক্লাবের মসজিদের ইমামের সঙ্গে মোহামেডানের দুই বিদেশি ফুটবলার সুলেমান ( ডানে) ও ওসমান ( বামে)। ছবি: সংগৃহীত

‘বাবা, কবে আসবে ?’

মুঠোফোনের ভিডিও কলে সুলেমান ডায়াবাতেকে দেখলেই প্রশ্নটি করে তাঁর একমাত্র মেয়ে। চার বছরের ফাতিমা জাহার দেশের ভৌগোলিক সীমানা জানা নেই। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সূচি যে বন্ধ, তা বোঝা তো অনেক দূরের ব্যাপার। মেয়ের শুধু বায়না তাঁর বাবা কবে যাবে তার কাছে, দুই হাত দিয়ে কোলে তুলে নেবে!

ঢাকায় থাকলেও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মালির ফুটবলার সুলেমানের মনটাও পড়ে আছে ভিয়েতনামে থাকা মেয়ের কাছে। কিন্তু করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় বুকে পাথর চেপে ঈদ পালন করছেন তিনি। এই প্রথমবার ঈদে পরিবার ছেড়ে এত দূরে। কষ্ট লাগছে, মেয়েটার জন্য মন খারাপ হচ্ছে,প্রিয়তমা স্ত্রীকে মিস করছেন, কিন্তু কী আর করা!

মেয়েটির বয়স চার—টুকটুক করে কথা বলে! হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারের ভিডিও কলে যখন মেয়ের চেহারা ভেসে ওঠে, তখন বাবা হিসেবে তীব্র কষ্ট অনুভব করেন। মনে হয়, সব ছেড়ে ছুড়ে মেয়েটির কাছে চলে যান। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়! সবচেয়ে কষ্টের বিষয়, কবে সুলেমান মেয়ের কাছে যেতে পারবেন, সেটিও অজানা। আপাতত, করোনাকাল পেরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই তাঁর। জানালেন নিজের কষ্টের কথা, ‘পরিবার ছাড়া এই প্রথম ঈদ করছি। আপাতত কিছুই করার নেই। মেয়েটার জন্য খুব খারাপ লাগে। একা একা ঈদ করা সহজ বিষয় নয়। ক্লাবে স্থানীয় খেলোয়াড়েরাও নেই। তাঁরা থাকলেও সময়টা কেটে যেত। ভালো লাগত।’

২০১৬ সালে সুলেমান-দম্পতির কোল জুড়ে আসে ফাতিমা। ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ভিয়েতনাম লিগে খেলার সময়ই ভিয়েতনামের মেয়ে লিনের সঙ্গে আলাপ, সেখান থেকেই প্রেম, পরিণয়। সুলেমানের চাওয়া, দ্রুতই যেন ভিয়েতনামে চলে যেতে পারেন। আবার জড়িয়ে ধরতে পারেন মেয়ে ফাতিমাকে। স্ত্রী লিনের সঙ্গে কাটাতে পারেন মধুর সময়।

সুলেমানের মতোই মোহামেডান ক্লাবে আছেন তাঁর স্বদেশি ওসমান বার্থ ও নাইজেরিয়ার ফুটবলার স্ট্যানলি আমাদি। ওসমানের পাঁচ সন্তান। ৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার গত ডিসেম্বরে যখন বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন তখন তাঁর সবচেয়ে ছোট ছেলে আয়াজের বয়স মাত্র এক মাস। করোনার কারণে বাংলাদেশে আটকে গিয়ে আয়াজের কথা মনে করেই বেশি মন কাঁদে তাঁর, ‘খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকলে পরিবারের কথা ভুলে থাকা যায়। কিন্তু ঈদের সময় খুব খারাপ লাগছে। ছেলেদের কথা ভেবে কষ্ট লাগে। ছোটটার কথা খুব মনে আবার ছেলেরাও আমার কথা ভেবে কাঁদে। সকালে স্ত্রী ও ছেলেদের বলেছি খুব দ্রুতই চলে আসব।’

বিদেশিদের কষ্টের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। কোরবানি দেওয়ার জন্য ক্লাবের পক্ষে থেকে তাঁদের দেওয়া হয়েছে একটি খাসি। সকালের নামাজ শেষে ক্লাবের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে শেষ করা হয়েছে কোরবানি পর্ব। দুপুরের শুরুতে সেই মাংস দিয়ে এরই মধ্যে এক পর্ব বারবিকিউ হয়ে গিয়েছে বিদেশি ফুটবলারদের।

ক্লাবের এই আতিথেয়তায় বেজায় খুশি সুলেমান ,‘ ক্লাব আমাদের জন্য একটি খাসি কোরবানির ব্যবস্থা করেছে। সকালে নামাজ পড়ে এসে ক্লাবের কিছু মানুষের সঙ্গে কোরবানি দিয়েছি। কিছুটা হলেও ঈদের আমেজ পাচ্ছি। এজন্য ক্লাবকে ধন্যবাদ।’