স্কুপ না করে মিসবাহ সেদিন সোজা ছক্কা মারতে পারতেন, বলছেন আজহার মেহমুদ

জোহানেসবার্গে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে মিসবাহর সেই শট। ছবি: এএফপি
জোহানেসবার্গে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে মিসবাহর সেই শট। ছবি: এএফপি

সেদিন ভারত জিতেছিল বলেই হয়তো বিশ্বে টি-টোয়েন্টির এমন জাগরণ এসেছে। ভারতে এরপর টি-টোয়েন্টির কদর বেড়েছে, যেটির প্রেক্ষিতে আইপিএল এসেছে। আইপিএলের এমনই দাপট যে, অর্থের ঝনঝনানিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার অবস্থা! এরপর তো সেই আদলে প্রায় সব দেশই এখন নিজেদের মতো করে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ চালু করেছে।

কিন্তু একটা শট এদিক-ওদিক হলেই এত কিছু তো না-ও হতে পারত। ভারতের বদলে পাকিস্তান সেদিন হাসিমুখে মাঠ ছাড়ত, শুধু চাপের মুহূর্তে মিসবাহ-উল-হকের যদি অমন স্কুপ শট না খেলতেন। এতদিন পর এসে সাবেক পাকিস্তান পেসার আজহার মেহমুদেরও তেমনই মনে হচ্ছে। মেহমুদ বলছেন, ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে সেদিন জোগিন্দর শর্মার বলটা স্কুপ না করে সোজা শটে ছক্কা মারতে পারতেন মিসবাহ।

ভারতের ১৫৭ রানের জবাবে শেষ ওভারে সেদিন পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৩ রান। হাতে ১ উইকেট। ক্রিজে একদিকে মোহাম্মদ আসিফ, তবে স্ট্রাইকে ছিলেন দারুণ খেলতে থাকা মিসবাহ। ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি কী ভেবে বল তুলে দিলেন মিডিয়াম পেসার জোগিন্দর শর্মার হাতে। প্রথম বলটাই শর্মা করলেন ওয়াইড, পরের বলেই ডট দিয়ে অবশ্য ভারতের স্নায়ুচাপ একটু কমিয়ে আনলেন। কিন্তু পরের বলেই বিশাল ছক্কা মিসবাহর! ভারতের স্নায়ুচাপ তখন পারদ চড়েছে, পাকিস্তান প্রস্তুতি নিচ্ছে উৎসবের। একে তো প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা, তা-ও আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারিয়ে...পাকিস্তান তখন যেন আগাম আনন্দে মাতোয়ারা। ক্রিজে মিসবাজে জেঁকে বসেছেন, ৪ বলে দরকার মাত্র ৬ রান।

কিন্তু সে সময়ই মিসবাহর কী যেন হলো! চাপ বুঝি একেই বলে! শর্ট ফাইন লেগে ফিল্ডার দেখে জোগিন্দর শর্মার নিরীহ দর্শন বলে স্কুপ করতে গেলেন, কিন্তু ব্যাটে-বলে হলো না। শর্ট ফাইন লেগে শ্রীশান্থের হাতে ক্যাচ জমা হতেই ব্যাটে ভর দিয়ে বসে পড়লেন মিসবাহ। ভারতের তখন উল্লাস, পাকিস্তান নির্বাক।

ক্রিকেটের বাইবেলখ্যাত সাময়িকী উইজডেনের পডকাস্ট বা অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠান ‘দ্য গ্রেটেস্ট রাইভালরি’তে এত দিন পর সেই শট নিয়ে আজহার মেহমুদের বিশ্লেষণ, ‘মিসবাহ এত ভালো খেলছিল। কিন্তু শেষে এসে ও ওই স্কুপ শটটা খেলার চেষ্টা করল। জোগিন্দর শর্মার বলটাতে ও সোজা ছক্কা মারতে পারত। কিন্তু ও দেখনদারি ওই স্কুপ শটটা খেলতে গেল! প্রথমে দেখে (ছক্কা হবে ভেবে) আমি সোফায় লাফিয়ে উঠেছিলাম, কিন্তু পরে যখন ক্যাচ হলো আমার অবস্থা ছিল—কী হলো এটা!’

মিসবাহর ওই শট, ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রসঙ্গ এসেছে ওই বিশ্বকাপের পর থেকে ক্রিকেটের মানচিত্রে বদলের আলোচনা থেকেই। ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির এত জনপ্রিয়তার মূলে ভারতের তরুণ এই দলকে ওই বিশ্বকাপ জয়কেই দেখেন মেহমুদ, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ভারত টি-টোয়েন্টি খেলতে অত বেশি আগ্রহী ছিল না। টেস্ট আর ওয়ানডে ম্যাচেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছিল। ভারতের ক্রিকেটের জন্য বড় প্রণোদনা হয়ে এসেছে ওই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়। যেটা শেষ পর্যন্ত আইপিএলের জন্ম দিল।’

ওই ফাইনাল থেকে ভারতের ক্রিকেটে একজন বড় কুশীলবের জন্মও দেখেন মেহমুদ, ‘ক্রিকেটের দারুণ বিজ্ঞাপন ছিল ম্যাচটা। বিশেষ করে ভারতের ক্রিকেটের। একই সঙ্গে এই ম্যাচটা ভারতের ক্রিকেটের দারুণ একজন নেতা এমএস ধোনিরও জন্ম দিয়েছে। ভারতের ক্রিকেটের মানসিকতা এবং আরও অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে, যেটার জন্য ওর প্রশংসা প্রাপ্য।’