শিরোপা জিতে গার্দিওলাকে গুরুদক্ষিণা আর্তেতার

>
মিকেল আর্তেতা ও পেপ গার্দিওলা, তখন ম্যানচেস্টার সিটিতে দুজন গুরু-শিষ্য। ছবি: সংগৃহীত।
মিকেল আর্তেতা ও পেপ গার্দিওলা, তখন ম্যানচেস্টার সিটিতে দুজন গুরু-শিষ্য। ছবি: সংগৃহীত।

কোচ হিসেবে নিজের প্রথম শিরোপাটা জয়ের দিনে মিকেল আর্তেতা সবার আগে স্মরণ করেছেন নিজের কোচিং ক্যারিয়ারে পেপ গার্দিওলার অবদানের কথা।

গুরু-শিষ্য তাঁরা পরে হয়েছেন। আগে হয়েছেন বন্ধু। যদিও পেপ গার্দিওলা ও মিকেল আর্তেতার বয়সের ব্যবধান ১১ বছরের, কিন্তু সেই বন্ধুত্ব জমতে সময় নেয়নি। সেই বন্ধু পরে সরাসরি শাগরেদ হয়েছেন, তারপর হয়েছেন প্রতিপক্ষ। কিন্তু গার্দিওলার প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ ছিল আর্তেতার সেটা কমেনি একটুও। তাই তো কোচ হিসেবে নিজের প্রথম শিরোপাটা জয়ের দিনে আর্তেতা সবার আগে স্মরণ করেছেন নিজের কোচিং ক্যারিয়ারে গার্দিওলার অবদানের কথা, নিজের মতো করে দিয়েছেন গুরুদক্ষিণাও।

কাল রাতে এফএ কাপের ফাইনালে দর্শকশূন্য ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে চেলসিকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আর্সেনাল। আর এতেই ১৪তম বারের মতো এফএ কাপের ট্রফি গেছে আর্সেনালের ঘরে, প্রধান কোচ হিসেবে আর্তেতাও পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রফি জয়ের স্বাদ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফাইনালে ওঠার আগে সেমিফাইনালে আর্তেতার আর্সেনাল হারিয়েছে তাঁর গুরু পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিকে। ওই হারে কাপের লড়াই থেকে ছিটকে গেলেও হয়তো খুব একটা মন খারাপ হয়নি গার্দিওলার। ছাত্রের কাছে হার যে শিক্ষকের জন্য কখনো কখনো আনন্দেরও।

দুজনের প্রথম দেখা অবশ্য বেশ আগে। আর্তেতা তখন বার্সেলোনা একাডেমির ছাত্র, গার্দিওলা মূল দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে বয়সে ঢের বড় হলেও আর্তেতা বরাবরই স্নেহ পেয়ে এসেছেন গার্দিওলার। বিভিন্ন সময় পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন তাঁর ক্যারিয়ারে। বন্ধুত্বটা গাঢ় হয়েছে সেই সময়। পিএসজি, রেঞ্জার্স, সোসিয়েদাদ, এভারটন ও আর্সেনালের হয়ে প্রায় ১৬ বছরের ক্যারিয়ার শেষে আর্তেতা সিদ্ধান্ত নিলেন কোচিংয়ে আসার।

ওই সময় তিনটা সুযোগ এসেছিল সাবেক এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের সামনে। আর্সেন ওয়েঙ্গার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আর্সেনালের একাডেমির দায়িত্ব নেওয়ার। আরেকটা প্রস্তাব ছিল টটেনহামের তখনকার কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর সহকারী হওয়ার। অথবা গার্দিওলার প্রধান সহকারী হয়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার। শেষ পর্যন্ত বন্ধুত্বের ডাকেই সাড়া দিলেন আর্তেতা। ২০১৬ জুলাইয়ে যোগ দেন গার্দিওলার সহকারী হয়ে সিটিতে। আর্তেতার মধ্যে কোচিং গুন অবশ্য এর অনেক আগেই দেখেছিলেন গার্দিওলা। শোনা যায়, ২০১২ চ্যাম্পিয়নস লিগে চেলসির বিপক্ষে সেমিফাইনালের আগে পরামর্শ নিতে আর্তেতাকেই ফোন করেছিলেন গার্দিওলা। বায়ার্নের দায়িত্ব ছেড়ে সিটির কোচ হওয়ার সিদ্ধান্ত যখন নিলেন গার্দিওলা, তখনই নাকি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলেন সহকারী হিসেবে আর্তেতাকে নেবেন।

দুজনের জুটি বেশ জমে গিয়েছিল সিটিকে। ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগে লিওঁর বিপক্ষে একটা ম্যাচে গার্দিওলা নিষিদ্ধ থাকায় সিটির ডাগআউটেও ছিলেন আর্তেতা। আর্সেন ওয়েঙ্গারের বিদায়ের পর আর্সেনাল কোচ হিসেবে ২০১৮ সালে একবার আর্তেতার নাম শোনা যাচ্ছিল। পরে অবশ্য সেই গুঞ্জনটা সত্যি হয়নি, উনাই এমেরি দায়িত্ব নেন গানারদের। তবে এমিরেটসে সময়টা দীর্ঘ হয়নি এমেরির, বিদায় নিতে হয় এক বছর পরেই। এবার আর গুঞ্জন নয়, সত্যি সত্যি আর্সেনাল কোচ হিসেবে ২০১৯ ডিসেম্বরে যোগ দেন আর্তেতা।

প্রিমিয়ার লিগে সময়টা খুব একটা ভালো কাটেনি আর্তেতার আর্সেনালের। মৌসুম শেষ করেছে ৮ নম্বরে থেকে। তবে এফএ কাপ জিতে সেই আর্সেনালই এবার সুযোগ পেয়েছে আগামী মৌসুমে ইউরোপা লিগের গ্রুপ পর্বে খেলার। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে জর্জ গ্রাহামের পর প্রথম আর্সেনাল কোচ হিসেবে নিজের প্রথম মৌসুমেই বড় কোনো ট্রফি জিতলেন আর্তেতা। এই অর্জনের দিনে সবার আগে গুরুকেই স্মরণ করেছেন সাবেক স্প্যানিশ মিডফিল্ডার, ‘কোচ হিসেবে আমার বেড়ে ওঠায় সবচেয়ে বড় অবদান তাঁর (গার্দিওলা)। আমার কৃতজ্ঞতা তাঁর প্রতি। তাঁর সাহায্য না পেলে আজ আমি এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। তাঁকে বড়সড় ধন্যবাদ দিতেই হবে।’

নিজের অর্জন নিয়ে আর্তেতার কথা, ‘এটা এখন পর্যন্ত আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দারুণ মুহূর্ত। আমার একটাই মিশন ছিল, খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশ্বাস ছড়িয়ে দেওয়া যে আমরা জিততে পারি। আমি সেটা পেরেছি।’

শিষ্যের এই অর্জনে নিশ্চয়ই দারুণ খুশি গার্দিওলাও।