দেশের সবচেয়ে দামী ফুটবল তারকা হয়েই ফিরছেন তিনি

জাডন সানচো। ছবি : এএফপি
জাডন সানচো। ছবি : এএফপি

অথচ তিন বছর আগেও জাডন সানচো নিজে কি ঘুণাক্ষরে ভেবেছিলেন, যে এমন হবে?

খেলতেন ম্যানচেস্টার সিটির যুবদলে। বেশ ভালোই খেলতেন। আশা করেছিলেন, মূল দলে পেপ গার্দিওলার অধীনে সুযোগ মিলবে হয়তো। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি। রহিম স্টার্লিং, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, নোলিতো, হেসুস নাভাস, কেভিন ডি ব্রুইনিয়া, লিরয় সানের মতো আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়দের ফেলে গার্দিওলার ফুরসত হয়নি, যুবদলের কারওর দিকে চেয়ে দেখার।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপজয়ী সতীর্থরা তত দিনে অন্য ক্লাবের মূল দলে হালকা-পাতলা সুযোগ পাওয়া শুরু করেছেন, বা অন্তত নির্ভার ছিলেন, যে না সুযোগ আসবেই। যেমন - ক্যালাম হাডসন অদয়, ফিল ফডেন, এমিল স্মিথ রো, রিয়ান ব্রুস্টার প্রমুখ। অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরোর সেরা খেলোয়াড় সানচো সে আশ্বাসটুকুও পাচ্ছিলেন না গার্দিওলার কাছ থেকে। ফলে নিজের ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবেন, ভেবে নিয়েছিলেন সানচো। ক্লাব নিয়মিত খেলানোর নিশ্চয়তা দিচ্ছিল না, তাই এক রকম অভিমান করেই ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে চুক্তি বাড়াননি। সিটিতে না থেকে তরুণ খেলোয়াড়দের গড়ে তোলার ব্যাপারে সিদ্ধহস্ত জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে নিজেকে সঁপে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। মাত্র আশি লাখ পাউন্ডের বিনিময়ে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা এই প্রতিভাকে দলে নেয় ডর্টমুন্ড, সঙ্গে দেয় নিয়মিত মূল দলে খেলানোর নিশ্চয়তা।

পরের তিন বছরের গল্পটা শুধুই উত্থানের। ফডেন, হাডসন-অদয়, ব্রুস্টার, স্মিথ-রো রা যেখানে নিজেদের উন্নতির ধারাকে সেভাবে বজায় রাখতে পারেননি, জাডন সানচো ডর্টমুন্ডের সাহায্যে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠেছেন তরতর করে। বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী উইঙ্গার মানা হয় তাঁকে। সিটি ছাড়ার পরের তিন মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৯৯ ম্যাচে ৩৪ গোল করে ফেলেছেন তিনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই, তাঁর দিকে নজর পড়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা ক্লাবগুলোর। রিয়াল মাদ্রিদ থেকে শুরু করে বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, লিভারপুল, বায়ার্ন মিউনিখ, পিএসজি - বড় বড় প্রায় সবগুলো ক্লাবের নামই কখনো না কখনো যুক্ত হয়েছে সানচোর সঙ্গে।

তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ভাগ্যের শিকেই ছিঁড়তে যাচ্ছে। দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি তারকা হিসেবে 'অভিমানী সন্তান' সানচোকে দেশে ফেরাচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটির নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
করোনাভাইরাসের কারণে চাইলেও অতিরিক্ত মূল্যে সানচোকে দলে আনার ব্যাপারে শেষ মুহূর্তে আর আগ্রহ দেখায়নি অন্যান্য ক্লাবগুলো। ফলে সানচোকে পাওয়ার দৌড়ে ইউনাইটেড একরকম ফাঁকা মাঠই পেয়ে গেছে, বলা যায়। ওদিকে এই মৌসুমে বিক্রি না করলে সামনের মৌসুমে আরও অনেক কম দামে সানচোকে বিক্রি করতে হবে, কারণ ডর্টমুন্ডের সঙ্গে সানচোর চুক্তি ২০২২ সাল পর্যন্ত, নতুন করে চুক্তি বৃদ্ধিরও কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না এই তারকা। ফলে করোনাকালে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের আশায় ডর্টমুন্ডও সানচোকে বিক্রি করে দিতে চাইছে।

তবে বিক্রি করতে চাইলেও, ১২ কোটি ইউরোর এক পয়সাও কম নিতে রাজি নয় তাঁরা। আগে বেশ কয়েকবার দাম কমানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে ইউনাইটেড। এখন শোনা যাচ্ছে, শুরুতে ৭ কোটি ইউরো দিয়ে বাকি পাঁচ কোটি ইউরো কয়েক বছরের কিস্তিতে পরিশোধ করতে আগ্রহী ইউনাইটেড। অমন সমাধানে ডর্টমুন্ডেরও সমস্যা নেই বলে জানা গেছে। তবে ডর্টমুন্ডও একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে, আগামী দশ তারিখের মধ্যে এই আলোচনা শেষ করতে হবে, নাহয় জার্মান ক্লাবটা আবার বেঁকেও বসতে পারে। কেননা, আগামী মৌসুম শুরু হবে খুবই তাড়াতাড়ি। পরবর্তী মৌসুমে সানচো থাকবেন কি না, তার ওপরে নির্ভর করবে ডর্টমুন্ডের রণপরিকল্পনা।

এদিকে বেতনাদির ব্যাপারে সানচো আগে থেকেই ইউনাইটেডের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আছেন। নতুন ক্লাবের হয়ে তাঁর চুক্তি হবে পাঁচ বছরের। নতুন মৌসুমে এই উইঙ্গার ইউনাইটেডের বিখ্যাত সাত নম্বর জার্সি গায়ে চড়াবেন, এমনটাও শোনা গেছে। যে জার্সি পরে আগে ওল্ড ট্রাফোর্ড মাতিয়েছেন জর্জ বেস্ট, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ডেভিড বেকহামের মতো তারকারা। মাইকেল ওয়েন, আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়া, অ্যানহেল ডি মারিয়া ও অ্যালেক্সিস সানচেজের মতো তারকারাও এই জার্সি পরেছেন, তবে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি।

এখন দেখা যাক, সানচো কোন দলে পড়েন - রোনালদোদের, না সানচেজদের!