আইপিএল আয়োজনে এবার কেবল ক্ষতিই
অবশেষে অনেক সমালোচনা আর বিতর্কের পর আইপিএল থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে চীনা মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান—ভিভো। গালোয়ান সংঘর্ষের পর ভারত-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের যে অবনতি আর তার ফলশ্রুতিতে গোটা ভারতজুড়ে যে চীনবিরোধী মনোভাব, তারই জেরে সরে যেতে হচ্ছে ভিভোকে। আপাতত চীনের এই প্রতিষ্ঠান সরে যাওয়ায় ভারতজুড়ে স্বস্তির হাওয়া থাকলেও এটি আইপিএলকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলছে।
২০১৮ সালে ভিভোর সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) চুক্তি হয়। সে চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও অর্থকরী ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের টাইটেল স্পনসর হয় তারা। পাঁচ বছরের চুক্তিটি ছিল ২ হাজার ১৯৯ কোটি রুপির। করোনার এ সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় আইপিএল থেকে ভিভো সরে দাঁড়ানোয় এ বছরের জন্য নির্দিষ্ট অর্থটা পাচ্ছে না বিসিসিআই, ফলে এতে কেবল বিসিসিআইয়ের কোষাগারেই টান পড়ছে না, ক্ষতির মুখে পড়ছে আইপিএলে অংশগ্রহণকারী ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোও। ভিভো চলে যাওয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোও যে লাভের ভাগ পাচ্ছে না।
ভিভোর সঙ্গে যে চুক্তি ছিল সে অনুযায়ী এ বছর ৪৪০ কোটি রুপি পাওয়ার কথা বিসিসিআইয়ের। এ টাকার অর্ধেক যেত বোর্ডের কোষাগারে, বাকি ২২০ কোটি রুপি ভাগ করে দেওয়া হতো প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে। ৮টি দলের মধ্যে ২২০ কোটি রুপি ভাগ করে দিলে প্রতিটি দল পেত প্রায় ২৮ কোটি রুপি। এবার সে অর্থটা পাচ্ছে না তারা।
কেবল ভিভো চলে যাওয়াতেই নয়, বিসিসিআইকে এবার আরেকটি কারণেও বড় ধরনের ক্ষতি স্বীকার করে আমিরাতের তিন শহরে (দুবাই, শারজা ও আবুধাবি) আইপিএলের ম্যাচগুলো আয়োজন করতে হচ্ছে। করোনায় জর্জরিত ভারতে স্বাভাবিক কারণেই এবার আইপিএল আয়োজন সম্ভব নয়। কিন্তু আমিরাতে আয়োজনটাও করতে হচ্ছে নানা বিধি মেনে, বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে। এতে খরচের ধাক্কাটাও ভালোই সামলাতে হচ্ছে বিসিসিআইকে। প্রতিটি দলের আরব আমিরাতে যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার ব্যাপারটি তো আছেই, করোনার কারণে দর্শকশূন্য মাঠে আয়োজিত আইপিএলে এবার ‘গেটমানি’ (টিকিট বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ) পাচ্ছে না বিসিসিআই। আয়োজন ফি বাবদ আরব আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডকেও বড় অঙ্কের অর্থ দিতে হচ্ছে। ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী কেবল গেটমানি না থাকার কারণেই ২১ থেকে ২৪ কোটি রুপি ক্ষতির শিকার হতে হবে বিসিসিআইকে।
বিসিসিআইয়ের সূত্রমতে, এবারের আইপিএলে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মোট ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি রুপি। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব যদি এখনই সৌরভ গাঙ্গুলীরা ভিভোর বিকল্প কোনো পৃষ্ঠপোষক খুঁজে বের করতে পারেন। করোনার এই সময় সারা দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য যখন স্তব্ধ হয়ে আছে তখন বিসিসিআই নতুন কোনো বড় চুক্তি করতে পারে কি না, দেখার বিষয় এখন সেটিই।