সাকিবের ক্যারিয়ারের বাঁকবদলের সেই '১৪'

ক্যারিয়ারের ১৪ বছর শেষ করলেন সাকিব আজ। ফাইল ছবি
ক্যারিয়ারের ১৪ বছর শেষ করলেন সাকিব আজ। ফাইল ছবি

২০০৬ সালের ৬ আগস্ট। ঠিক ১৪ বছর আগে সাকিব আল হাসানের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল। ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সাকিবের মাঠের পারফরম্যান্স ছিল অতুলনীয়। নিজেকে তৈরি করেছেন আধুনিক ক্রিকেট সেরা ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাস-সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে। ক্যারিয়ারজুড়ে আলোচনায় ছিলেন মাঠের বাইরের ঘটনার কারণেও। সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বাঁকবদলের ১৪টি ঘটনা দেখে নিন এখানে...

দারুণ শুরু
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা বাংলাদেশ আগেই হেরে বসেছিল। তরুণ ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়ার ধারণা থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকিব আল হাসানের। সাকিব যে নিখাদ অলরাউন্ডার, বোঝা গিয়েছিল প্রথম ম্যাচেই। ৩৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নেওয়ার পর চারে ব্যাট করতে নেমে করেন অপরাজিত ৩০ রান। প্রথম ম্যাচেই স্বাদ পান জয়ের।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই বোলিং
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সাকিব নিজের বোলিং নিয়ে খুব বেশি পরিশ্রম করেননি। কিন্তু শুরু থেকেই সাকিব ছিলেন দুর্দান্ত বোলার। যেকোনো কন্ডিশনে, যেকোনো ব্যাটিং আক্রমণ ভেদ করার দারুণ দক্ষতা ছিল তাঁর। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে যেমন নিউজিল্যান্ডকে পেয়ে ৩৬ রানে ৭ উইকেট নেন সাকিব। এখন পর্যন্ত টেস্টে এটিই সাকিবের সেরা বোলিং। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের আবির্ভাবও সাকিবের সেই ৭/৩৬–এর মধ্য দিয়ে।

প্রথমবারের মতো র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে সাকিব
২০০৯ সালে সাকিব আল হাসান ওয়ানডে ক্রিকেটে সেরা অলরাউন্ডারের র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে জায়গা করে নেন। একই বছর উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার হন সাকিব। ২০১১ সালে সেরা টেস্ট অলরাউন্ডারের র‍্যাঙ্কিংয়েও শীর্ষস্থান দখল করেন।

কাউন্টি ক্রিকেটে সাকিব
২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাকিব উস্টারশায়ার কাউন্টির হয়ে খেলার ডাক পান। কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের পর সাকিবের ব্যাটিংয়ে আমূল পরিবর্তন আসে। ভিন্ন কন্ডিশনে বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা হয় সাকিবের। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট সাকিবকে অলরাউন্ডার হিসেবে আরও ধারালো করে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ জয়
বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতা বাংলাদেশের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সাকিব ও তামিম ইকবাল মিলে বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেন। প্রথম টেস্টের তামিমের দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে টেস্ট জেতায়। দ্বিতীয় টেস্টে সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মুর্তজা চোটে পড়ায় সেই সিরিজে অপ্রত্যাশিতভাবে অধিনায়কত্ব পান সাকিব।

বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব
বিশ্বকাপে নিজ দেশের অধিনায়কত্ব করা বড় সম্মানের। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হলে তো কথাই নেই। সাকিব ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছেন।

এশিয়া কাপে সেরা
২০১২ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ফাইনাল খেলে। সাকিব আল হাসান ছিলেন পুরো টুর্নামেন্টের ধারাবাহিক পারফরমার। শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, লাসিথ মালিঙ্গাদের মতো তারকাদের পেছনে সাকিব হন টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার।

একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ১০ উইকেটের রেকর্ডের মালিক মাত্র চারজন। অ্যালেন ডেভিডসন, ইয়ান বোথাম ও ইমরান খানের পর ২০১৪ সালে সাকিব আল হাসান যোগ দেন এই এলিট তালিকায়। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাকিব করেন ১৩৭ রান। এরপর হাত ঘুরিয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ১০ উইকেট।

বিতর্ক
সাকিবের মাঠের অসাধারণ পারফরম্যান্সের সঙ্গে সমান্তরালে ছিল বিতর্ক। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে সংবাদ সম্মেলনে অপেশাদারি মন্তব্য করেছিলেন। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ চলাকালীন ড্রেসিং রুমে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে ৩ ম্যাচ নিষিদ্ধ হন সাকিব। ২০১৯ বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনে না থেকে বিতর্কের জন্ম দেন সাকিব।

আইপিএল ও বিপিএল জয়
২০১২ ও ২০১৪ কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল শিরোপা জিতেছিলেন সাকিব। ২০১৬ সালে সাকিব ছিলেন বিপিএল চ্যাম্পিয়ন দল ঢাকা ডাইনামাইটসের অধিনায়ক। চারবারের চেষ্টায় বিপিএল শিরোপা জয় সাকিবের ক্যারিয়ারের বড় অর্জন।

টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি
২০১৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পান সাকিব। ওয়েলিংটন টেস্টে ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়েগনার, টিম সাউদির বোলিং সামনে টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ২১৭ রান করেন।

একা হাতে অস্ট্রেলিয়া জয়
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে সাকিবকে এক যুগ অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০১৭ সালে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে হাতের কাছে পেয়ে একচুল ছাড় দেননি সাকিব। ব্যাটিং ও বোলিং দিয়ে একা হাতে মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন সাকিব।

২০১৯ বিশ্বকাপের স্বপ্নের পারফরম্যান্স
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব এমন কিছুই করেছেন, যা কেউ করেননি আগে। ৮ ম্যাচ, ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট—সংখ্যাগুলোই কথা বলেছে তাঁর হয়ে। বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যখন এলোমেলো, তখন সাকিব একা জাগিয়ে রেখেছিলেন বাংলাদেশের সেমিফাইনালের প্রদীপ।

নিষেধাজ্ঞা
বর্ণিল ক্যারিয়ারে সেরা ছন্দ যখন খুঁজে পেলেন, তখনই আইসিসির নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নামে সাকিবের ওপর। ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়েও আইসিসিকে না জানিয়ে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব।