রিয়ালের হয়ে খেলার সময়কে 'ঘৃণা' করতেন তিনি

অনেক কম বয়সে রিয়ালে পাড়ি জমিয়েছিলেন আনেলকা। ফাইল ছবি
অনেক কম বয়সে রিয়ালে পাড়ি জমিয়েছিলেন আনেলকা। ফাইল ছবি

তাঁকে মনে করা হতো ফ্রান্সের অন্যতম প্রতিভাবান স্ট্রাইকার। পিএসজি ও আর্সেনালের হয়ে প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে ১৯৯৯ সালে মাত্র উনিশ বছর বয়সেই প্রায় আড়াই কোটি পাউন্ডের বিনিময়ে নাম লেখান রিয়াল মাদ্রিদে।

কিন্তু হুট করে রিয়ালের মতো ক্লাবে গিয়ে খাপ খাওয়াতে পারেননি আনেলকা। চব্বিশ ঘণ্টা মিডিয়ার নজরে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। যার প্রভাব পড়েছিল ফর্মে। কোনোরকমে এক বছর টিকতে পেরেছিলেন রিয়ালে, ১৯টি লিগ ম্যাচের পাশাপাশি দশটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন মাত্র চারটা। রিয়াল-অভিজ্ঞতা তাই যথেষ্ট তিক্ত। সেটাই আবার নতুন করে প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি। বিশ্ববিখ্যাত ভিডিও স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স আনেলকাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছে, আনেলকা - মিসআন্ডারস্টুড (আনেলকা - ভুল বোঝার শিকার) নামে। সেখানেই রিয়াল নিয়ে নিজের সকল বিরক্তি উগরে দিয়েছেন এই ফরাসি তারকা। জানিয়েছেন, রিয়ালে থাকার সময়ের জীবনকে ঘৃণা করতেন তিনি।

হুট করে তারকাখ্যাতি পেয়ে যাওয়াটাই ঘৃণা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আনেলকা, ‘আমি জানতাম রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতারাতি তারকা বনে যাব। আর এই বিষয়টাই আমি ঘৃণা করতাম। প্রথম সংবাদ সম্মেলনের পর আমি ড্রেসিংরুমে গেলাম। এক জায়গায় বসলাম। কিন্তু প্রত্যেকবার একেকজন খেলোয়াড় এসে আমাকে বলছিল, আরে, এইটা তো আমার জায়গা! তখন আমি দুঃখপ্রকাশ করে আরেকজনের কাছে গিয়ে বলতাম, আমি কি এখানে বসতে পারি? তখন ওই খেলোয়াড় এসে আমাকে বল, এটা আমার জায়গা। অন্তত বিশবার এমন ঘটনা ঘটেছে মনে হয়। আমি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম, কী করছি আমি এখানে? এখানে তো ভালো যন্ত্রণা হবে! প্রথম দিন আমার যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেটাই ছিল আমার দুঃস্বপ্নের শুরু।’

রিয়ালের খেলোয়াড় হওয়ার কারণে সহ্য করতে হয়েছিল অনেক উটকো চাপ। যা তখন সামলাতে পারেননি বলে মনে করেন আনেলকা, রিয়ালে টিকতে হলে অনেক কিছু সহ্য করা লাগে, সেটা আমি তখন বুঝিনি, ছোট ছিলাম। অনেক চাপ ছিল সেখানে। প্রতিদিন মিডিয়ার মুখোমুখি হতে হতো। মাঠের মধ্যেও পরিকল্পনা মতো কিছু হচ্ছিল না। আমার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু ছিল না। আমি কিছুই করতে পারিনি। তখন আমার বয়স ছিল বিশ বছর, রাস্তায় একটু শান্তিমতো হাঁটতে পারতাম না। যা-ই করতাম, যা-ই কিনতাম - পরের দিন সংবাদপত্রের খবর হয়ে যেত।

রিয়ালে যে এক মৌসুম ছিলেন, রাউল গঞ্জালেস, স্টিভ ম্যাকম্যানামান, ফার্নান্দো মরিয়েন্তেসের কারণে তেমন সুযোগ পাননি। সুযোগ পেলেও, ঝলক দেখাতে পারেননি। এক বছর পর রিয়াল ছেড়ে আবারও পিএসজিতে যোগ দেন আনেলকা। এবার ২.২ কোটি পাউন্ডের বিনিময়ে। পরে লিভারপুলেও খেলেছেন এক বছর, ধারে। ধার চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর লিভারপুল তাঁর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি। এ নিয়েও আক্ষেপ আছে এই তারকার। ক্লাবটাকে মন থেকে ভালোবেসেছিলেন আনেলকা, ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন ক্লাবটার হয়ে। কয়েক দিন আগে এ জন্যই লিভারপুলের সাফল্যের অন্যতম দুই কান্ডারি মোহাম্মদ সালাহ ও সাদিও মানে কে ক্লাব না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

লিভারপুলের সাম্প্রতিক উত্তরণের দুই সারথি মোহাম্মদ সালাহ ও সাদিও মানেকেও দলে নেওয়ার জন্য ভাবছে রিয়াল মাদ্রিদ, এমনটাই শোনা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। কিন্তু লিভারপুলের তারকাখ্যাতি দূরে ঠেলে দিয়ে মানে বা সালাহ কেন রিয়ালে যোগ দিতে চাইবেন, তার কোনো কারণই খুঁজে পাননি আনেলকা। রিয়ালে খেলে যাওয়া আনেলকার মতে, ফুটবলে এখন ট্রফি জিততে রিয়ালে যাওয়ার দরকার নেই। মানে বা সালাহ চাইলে লিভারপুলেই জিততে পারবেন, এখন লিভারপুল চাইলেই রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে। ওদের (মানে, সালাহ) তাই ক্লাব বদল করার কোনো মানেই দেখি না। লিভারপুলের আক্রমণভাগ এখন দুর্দান্ত। আমি ওদের সবাইকে পছন্দ করি। বিশেষ করে রবার্তো ফিরমিনোকে, যার জন্য মানে ও সালাহ সাফল্য পাচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ খেলোয়াড়ের তালিকায় মানে ও সালাহ থাকবেই। রিয়াল মাদ্রিদে খেলার মতো সামর্থ্য আছে তাঁদের। তবে এটাও সত্যি কথা, ট্রফি জয়ের জন্য এখন লিভারপুলের ক্ষমতা রিয়াল মাদ্রিদের সমান। তাই খামোখা ক্লাব বদল করার দরকার নেই। লিভারপুলে থেকেই তাঁরা যেকোনো শিরোপা জিততে পারবে।