সানচোকে পেতে এত পাগল কেন ইউনাইটেড?

আজ এই ছবি দিয়ে ইউনাইটেডকে শঙ্কায় ফেলে দিল ডর্টমুন্ড। ছবি: টুইটার
আজ এই ছবি দিয়ে ইউনাইটেডকে শঙ্কায় ফেলে দিল ডর্টমুন্ড। ছবি: টুইটার

এত নাটক একদমই ভালো লাগছে না রিও ফার্ডিনান্ডের। সাবেক খেলোয়াড়ে অধিকার আর ভক্তের দাবি মিলেমিশে একাকার তাঁর কণ্ঠে, ‘যাও, ওকে নিয়ে এসো। এর চেয়ে পরিষ্কারভাবে আর কিছু বলার নেই।’

কাকে নেওয়ার কথা হচ্ছে সেটা তো শিরোনামেই পরিষ্কার, জেডন সানচো। নিশ্চিতভাবেই গত দুই মৌসুমে ইংল্যান্ডের সেরা তরুণ খেলোয়াড় সানচো। ২০ বছর বয়স, এর মাঝেই ইংল্যান্ডের আগামী দশকের সব আশাভরসা তাঁর কাঁধে তুলে দেওয়া হয়েছে। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে এ মৌসুমে লিগে ৩২ ম্যাচ খেলেছেন। তাতে ১৭ গোল করেছেন, সঙ্গে সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও ১৭ গোল। শুধু এ মৌসুমেই যে আলো ছড়িয়েছেন এমন নয়, গতবারও লিগে ১৭টি গোল করিয়েছেন, সে সঙ্গে করেছেন ১২ গোল। এমন এক প্রতিভাকে দলে চাইতে পারেন ফার্ডিনান্ড।

ইউনাইটেডও সানচোকে পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে। জার্মান ক্লাবের বেঁধে দেওয়া ১২০ মিলিয়ন ইউরো দেওয়ার ব্যাপারেই যা একটু আপত্তি দেখাচ্ছে রেড ডেভিলরা। ওদিকে দলবদলটা কঠিন করে তুলতে ডর্টমুন্ডও ১০ আগস্টের টাইমলাইন বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় এখনো দলবদলটা হয়নি। ইউনাইটেডের এভাবে সময় নষ্ট করা একদমই পছন্দ হচ্ছে না সাবেক ডিফেন্ডারের, আগামী দশ বছরের দেশের সেরা খেলোয়াড় হতে পারে, গত দুই বছরে বিশ্বের সেরা কিশোর ফুটবলার ছিল, এমন এক খেলোয়াড়কে কেনার সুযোগ থাকলে, ওকে নিয়ে আস। এর চেয়ে পরিষ্কারভাবে আর কিছু বলার নেই। আমরা সবাই দেখেছি সে কত ভালো এবং ইউনাইটেডের মতো বড় ক্লাবে খেললে কত দুর্দান্ত হবে সেটা শুধু আন্দাজ করতে পারি।

সানচোর প্রতিভা নিয়ে কখনো সন্দেহ ছিল না। তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও বোঝা গেছে কৈশোরেই। যেখানে তরুণ খেলোয়াড়েরা পেপ গার্দিওলার অধীনে খেলার জন্য ম্যানচেস্টার সিটিতে যাচ্ছিলেন, তখন ২০১৭ সালে সিটির একাডেমি থেকে বেড়িয়ে এসেছিলেন সানচো। ইংলিশ খেলোয়াড়েরা দেশ ছাড়তে চান না। সেখানে সিটির মূল দলে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না দেখে গার্দিওলার ক্লাব ছেড়ে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছেন ১৭ বছরের সানচো। ফলাফল গত দুই বছর ধরেই ডর্টমুন্ডের মতো ক্লাবের মূল একাদশে খেলছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগেও নেমেছেন নিয়মিত।

তাঁর সমবয়সী ফিল ফডেন প্রতিভায় তাঁর সমকক্ষ হয়েও সিটিতে বেঞ্চ বা অগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলেই পার করেছেন গত তিন বছরের অধিকাংশ সময়। এই যে ঝুঁকি নিতে জানা, পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে ভিন্ন কোনো দেশে যাওয়ার অকুতোভয় সিদ্ধান্ত নিতে পারার ক্ষমতায় সমবয়সী কিশোরদের চেয়ে সানচোকে আলাদা করে দিচ্ছে। ম্যাচের যে কোনো মুহূর্তে গতি প্রকৃতি পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা তো আছেই।

ইউনাইটেডের আক্রমণভাগ এরই মাঝে গুছিয়ে উঠেছে। মার্কাস রাশফোর্ড লিগের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড হয়ে গেছেন, অ্যান্থনি মার্শিয়ালও অবশেষে তাঁর ধার ফিরে পাচ্ছেন। পগবা-ফার্নান্দেজের মিডফিল্ডও ইউনাইটেডকে হারানো গৌরবের আশা জাগাচ্ছে। এখন শুধু আক্রমণের ডান প্রান্তে সত্যিকারের বিশ্বমানের এক খেলোয়াড় দরকার তাদের। আর এদিক থেকে সানচোই তাদের পছন্দের শীর্ষে। মাত্র ২০ বছর বয়সেই বিশ্বের সেরা উইঙ্গারদের একজন। গোল করতে জানেন, করাতে জানেন। গতি ব্যবহার করে রক্ষণ ভাঙতে পারেন, আবার নিরেট রক্ষণ ভাঙার মতো পায়ের স্কিলও আছে। আর ইংল্যান্ডের আগামী প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়কে নিজেদের স্কোয়াডে রাখার দম্ভ করার সুযোগটা তো থাকছেই।

ওদিকে ইউনাইটেডের আগ্রহ দেখে ডর্টমুন্ডও গো ধরেছে নতুন করে। তারা এখন বলছে ইংলিশ প্রতিভাকে ছাড়বেই না। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে আগামী মৌসুমেও সানচোকে তাদের কাছে রেখে দেওয়ার ইচ্ছা তাদের। এমন কথা শুনে ইউনাইটেড ভক্তরা শঙ্কায় পড়ে যাচ্ছেন । তাঁদের আবার স্বস্তি দিতে এগিয়ে এসেছেন ওয়েন হারগ্রিভস। এই সাবেক মিডফিল্ডারের দাবি, নিজেদের দাবি করা ১২০ মিলিয়ন ইউরোর পুরাটাই নিশ্চিত করার জন্যই নাটক করছে, ধাপ্পা। ওরা ধাপ্পা দিচ্ছে। আমার ধারণা কয়েক দিনের মধ্যেই সে ইউনাইটেডের খেলোয়াড় হবে। ওরা শুধু টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এটাই দলবদলের প্রকৃতি।

ইউনাইটেড সংশ্লিষ্ট সবাই চাইবে হারগ্রিভসের চাওয়াই যেন সত্যি হয়। না হলে, ইউনাইটেডের আবারও ভয় জাগানো রূপ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষাটা আরও দীর্ঘ হবে এটা নিশ্চিত।