নেইমার এক মুহূর্তের জন্যও বাদ পড়ার কথা ভাবেননি

চৌপো মোটিংয়ের গোলের পর আনন্দে তাঁর কোলে চড়লেন নেইমার। ছবি: এএফপি
চৌপো মোটিংয়ের গোলের পর আনন্দে তাঁর কোলে চড়লেন নেইমার। ছবি: এএফপি

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সতীর্থ এরিক ম্যাক্সিম চৌপো মোটিং। ম্যাচসেরার পুরস্কারটা জয়সূচক গোলদাতার হাতে তুলে দিয়ে হাসি ফুটল নেইমারের মুখে। মাঠে তিনি অবিশ্বাস্যভাবে গোল মিস করেছেন। তবে শুধু ওটুকুই। ম্যাচসেরার পুরস্কার তো এমনি এমনি পাননি। আর দলও উঠেছে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে। সেটি চ্যাম্পিয়নস লিগে গত ২৫ বছরের মধ্যে পিএসজির প্রথম সেমিফাইনাল, পেট্রো ডলার আসার পর প্রথম আর তা দেখা গেল ক্লাব প্রতিষ্ঠার ৫০তম বছরে। নেইমারের মুখে তাই হাসি লেগে থাকাই স্বাভাবিক।

প্রথমার্ধেই কয়েকটি গোল করতে পারতেন নেইমার। বিরতির পরও খুলতে পারতেন খাতা। এই অর্ধে গোল না পেলেও পিএসজির খেলার কলকাঠি নড়েছে তাঁর পায়েই। দুটি গোলেই ছিল দারুণ অবদান। এর মধ্যে মার্কুইনহোসকে দিয়ে করানো গোলটি সরাসরি ‘অ্যাসিস্ট’। অথচ প্রথমার্ধে নেইমারের খেলা দেখে মনে হয়েছিল, আতালান্তার বক্স থেকে মাঝমাঠ চষে ডিফেন্ডারদের চরকির মতো পাক খাইয়ে শুধু গোলটাই পেলেন না! রাগও উঠতে পারে। অমন মিস কেউ করে! প্রথমার্ধে তাঁর নেওয়া চারটি শটের মধ্যে পোস্টে ছিল একটি। বাকি তিনটি ছিল গোলের অপূর্ব সুযোগ। ধারাভাষ্যকার পিটার ড্রুরের মতে, ‘মিসের হ্যাটট্রিক!’।

এর মধ্যে প্রথম পাঁচ মিনিটের ভেতর গোলরক্ষককে একা পেয়েও বাইরে মেরেছেন বল। বেঞ্চে বসে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পের যেন তা বিশ্বাস হয়নি। অবিশ্বাস্য চোখে মাথায় হাত দিয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ান। কিন্তু পিএসজিকে সেমিফাইনালে তুলতে নেইমার কতটা মরিয়া ছিলেন সে কথাও বলছে পরিসংখ্যান। এ ম্যাচে একাই ১৬টি সফল ড্রিবল করেন নেইমার। চ্যাম্পিয়নস লিগের এ মৌসুমে এক ম্যাচে যা সর্বোচ্চ ড্রিবলিংয়ের রেকর্ড। আর চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এক ম্যাচে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ। লিওনেল মেসি আর হাভিয়ের জানেত্তিও সমানসংখ্যক ড্রিবল করেছেন এক ম্যাচে। সর্বশেষ লিওনেল মেসি, ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। তার ৬ বছর আগে ডায়নামো কিয়েভের বিপক্ষে জানেত্তি।

আতালান্তার ডিফেন্ডাররা নেইমারকে ঠেকাতেও মরিয়া ছিল। তাতে সেভাবে পেরে না ওঠায় করতে হয়েছে ফাউল। নেইমার একাই আদায় করেছেন ৯টি ফাউল। চ্যাম্পিয়নস লিগের এ মৌসুমে এক ম্যাচে এত বেশিসংখ্যক ফাউল আদায় করতে পারেননি আর কোনো খেলোয়াড়। মজার বিষয় হলো নেইমার এমন খেলার পরও নির্ধারিত সময়ে শেষ মিনিটের আগ পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল পিএসজি। মাত্র ৩ মিনিটের ভেলকিতে ২টি গোল আদায় করেছে ফরাসি ক্লাবটি। এর মধ্যে এমবাপ্পের পাস থেকে চৌপো মোটিংয়ের করা গোলের শুরুটা হয়েছিল নেইমারের দুর্দান্ত পাস থেকে। এমন চাপের ম্যাচে শেষ মুহূর্তে এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যায় না। কীভাবে সম্ভব হলো!

নেইমার বোঝালেন আত্মবিশ্বাস ও চেষ্টা থাকলেই সম্ভব, ‘আমরা কখনো বাদ পড়ার কথা ভাবিনি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, এমনকি গা গরমের সময়ও। এক মুহূর্তের জন্যও ভাবিনি ফিরতে হবে। ফাইনালে ওঠার ইচ্ছেটা কেউ আমার মন থেকে সরাতে পারেনি। তবে বিশ্রাম নিতে হবে কারণ মানসিকভাবে ভীষণ চাপ গেছে। অসাধারণ একটা ম্যাচ ছিল। কঠিন তবে দেরিতে ফল পেয়েছি।’

১৯৯৫ সালে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল খেলেছে পিএসজি। সেমির ম্যাচও কঠিন হবে বলে মনে করেন নেইমার, ‘আমাদের দলটা দুর্দান্ত। একটা পরিবারের মতো। আমরা জানতাম এমন মানসিক অবস্থায় কেউ আমাদের ছিটকে ফেলতে পারবে না। আরেকটি কঠিন ম্যাচের জন্য কিছু বিষয় ঠিক করতে হবে।’