বাংলাদেশের স্লিপ ক্যাচিংয়ের এই হালের কারণ কী?

স্লিপে ক্যাচ ধরাটা এখনো আয়ত্ত হলো না বাংলাদেশের। ফাইল ছবি
স্লিপে ক্যাচ ধরাটা এখনো আয়ত্ত হলো না বাংলাদেশের। ফাইল ছবি
>স্লিপ ক্যাচিংয়ে বাংলাদেশের দুর্দশার কারণ জানালেন ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক।

স্লিপ ক্যাচিংয়ে বাংলাদেশের রেকর্ড দেখলে মাথা উঁচু রাখা কঠিন। ২০১৮ সাল থেকে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে স্লিপে ক্যাচ ফেলার রেকর্ডে বাংলাদেশ তলানিতে। স্লিপ ক্যাচিংয়ে বাংলাদেশের সাফল্যের হার মাত্র ৬৯ শতাংশ! এ কাজে গত আড়াই বছরে সবচেয়ে এগিয়ে পাকিস্তান (৮৯%)। স্লিপে ক্যাচ ধরায় সেরা তিনের বাকি দুই নিউজিল্যান্ড (৮৮%) ও দক্ষিণ আফ্রিকা (৮৭%)।

বাংলাদেশের করুণ দশা অবশ্য নতুন না। অধারাবাহিকতার কারণে বাংলাদেশে কখনই স্লিপ কর্ডন তৈরি হয়নি। টেস্টের প্রথম সকালে প্রথম স্লিপ, দ্বিতীয় স্লিপে কে দাঁড়াবেন, কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। আবার সকালে একজন দাঁড়ালে দেখা যায় বিকেলে আরেকজন। মেহেদী হাসান মিরাজ যেমন গালিতে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেন। ওপেনার সাঈফ হাসানের অভিষেক হওয়ায় মিরাজের জায়গায় ফিল্ডিং করতে দেখা যায় সাঈফকে। শর্ট লেগে মুমিনুল হক ছিলেন দারুণ ফিল্ডার। টেস্ট ওপেনার সাদমান ইসলামের অভিষেকের পর শর্ট লেগের জায়গাটা ছেড়ে দেন মুমিনুল।

এমন অধারবাহিকতার কারণেই কী বাংলাদেশে স্লিপ ফিল্ডিংয়ের এই হাল? বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকের ব্যাখ্যা, ‘ফিল্ডারের সেরা সামর্থ্য হিসেবে তাঁকে ফিল্ডিং করতে দেওয়া হয়। কে কোথায় ভালো সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু বিশেষজ্ঞ জায়গা তো আছেই। স্লিপ, শর্ট লেগ আছে। যাদের হাতে শক্তি ভালো তাঁরা বাউন্ডারিতে।’

কুকের কোচিং বইয়ে বিশেষজ্ঞ ফিল্ডারের জায়গা নেই। মার্ক ওয়াহ যেমন দ্বিতীয় স্লিপে ছিলেন অবিশ্বাস্য। স্লিপে ক্যাচিংয়ে সেরাদের ছোট্ট তালিকা করলে ওয়াহ থাকবেন শীর্ষে। শেন ওয়ার্ন ওয়াহর স্লিপ ক্যাচিং নিয়ে সব সময় বলতেন, ‘মার্ক ক্যাচ বানাত। যেটা ক্যাচ না সেটাও ক্যাচ বানিয়ে ফেলত সে। সে ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য।’ ভারতের রাহুল দ্রাবিড়, শ্রীলঙ্কায় মাহেলা জয়াবর্ধনে, দক্ষিণ আফ্রিকায় জ্যাক ক্যালিস, পাকিস্তানে ইউনিস খান—প্রত্যেকেই স্লিপ ক্যাচিংয়ে অবিশ্বাস্য। কোন টেস্ট ম্যাচে মার্ক ওয়াহকে স্লিপ ছেড়ে বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে দেখা যেত না। ইউনিসের নিরাপদ হাত দুটি বাউন্ডারি লাইনে বল থামানোর জন্য নয়। স্লিপে বোলারের সৃষ্টি করা সুযোগটা লুফে নেওয়ার জন্য।

কিন্তু কুক চান সব জায়গার ফিল্ডার তৈরি করতে। যেমন স্লিপ ফিল্ডারকে মাঠের অন্যান্য জায়গায় ফিল্ডিং করতে হবে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেই লক্ষ্যেই কাজ করছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ, ‘দলের জন্য আপনাকে সব জায়গায় ফিল্ডিং করার জন্য তৈরি থাকতে হবে। আমরা একটা অলরাউন্ড ফিল্ডিং দল তৈরির চেষ্টা করছি।’

স্লিপ ফিল্ডিংয়ের রেকর্ডে বাংলাদেশ তলানিতে থাকলেও কুক মনে করেছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব ক্রিকেটে মাঝারি মানের ফিল্ডিং দল। তবে আরও উন্নতি করার সুযোগ দেখেন তিনি। সে জন্য ক্রিকেটারদের ফিল্ডিং ভালোবাসতে বলছেন কুক, ‘ভালো ফিল্ডাররা চায় তাঁর কাছে বলটা আসুক। তাঁরা চায় যে ক্যাচটা তাঁর কাছেই আসুক, রান আউট করার সুযোগটা তাঁর নাগালেই থাকুক।’