দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা

সব সংস্করণেই বাংলাদেশ দল মানেই এ দুজন। ফাইল ছবি
সব সংস্করণেই বাংলাদেশ দল মানেই এ দুজন। ফাইল ছবি

কাজটা সহজ না। তিন সংস্করণের ক্রিকেট সমানতালে খেলে যাওয়া আধুনিক যুগের ক্রিকেটে মুখের কথা না। মুশফিকুর রহিম সেই কাজটাই করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বিশ্ব ক্রিকেটে যখন একেকজন একেক সংস্করণের বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন, বিরাট কোহলির মতো খেলোয়াড়ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের বিভিন্ন সিরিজ থেকে নাম কাটিয়ে নেন টেস্ট ক্যারিয়ার দীর্ঘ করতে চান বলে। সেখানে মুশফিক তিন সংস্করণে খেলছেন সমানতালে। তাঁর মতো তিন সংস্করণের ক্রিকেট খেলে যাওয়া ক্রিকেটার বিশ্ব ক্রিকেটে নেই বললেই চলে।

রেকর্ডও তা–ই বলে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে তিন সংস্করণ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের তালিকায় মুশফিক আছেন দুইয়ে। ১১ টেস্ট, ৩৭টি ওয়ানডে ও ২৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মুশফিক। তিন সংস্করণে দলের ৯৬ ভাগ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। মজার তথ্য হচ্ছে, এই তালিকার শীর্ষে আছেন আরেক বাংলাদেশি মাহমুদউল্লাহ। সব সংস্করণ মিলিয়ে ৯৯ ভাগ ম্যাচ খেলেছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। তবে সম্প্রতি টেস্ট ক্রিকেট থেকে বাদ পড়েছেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল থাকতে পারতেন মুশফিকদের তালিকায়। টানা তিন সংস্করণে ব্যস্ত ক্রিকেটারদের মধ্যে এই দুজনও থাকবেন তালিকার শীর্ষে। কিন্তু দুজনই গত দুই বছর চোট ও ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেননি। সাকিব তো গত অক্টোবর থেকে নিষিদ্ধই।

নিউজিল্যান্ডের রস টেলর, শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিস, ইংল্যান্ডের জো রুট, পাকিস্তানের বাবর আজম, ভারতের রোহিত শর্মাও আছেন তিন সংস্করণে টানা ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের তালিকায়। সংখ্যাটা ১০ বছর আগে আরও বেশি ছিল। গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা কমে এসেছে। ২০০৮-০৯ সালের দিকেও জাতীয় দলের তিন সংস্করণে অংশ নিতেন ৫৭ ভাগ ক্রিকেটার। ২০১৩-১৪ সালে সংখ্যাটা কমে আসে ৪৮ ভাগে। ৪৪ ভাগ ক্রিকেটার তিন সংস্করণের ক্রিকেট খেলছেন ২০১৮-১৯ মৌসুম থেকে।

অস্ট্রেলিয়ার কথাই ধরুন। ২০০৮-০৯ সালের দিকে তিন সংস্করণের ক্রিকেট খেলতেন ৫২ ভাগ ক্রিকেটার। গত বছর পর্যন্ত সংখ্যাটা কমে এসেছে ৩০ ভাগে। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজেও অস্ট্রেলিয়ার মতো অবস্থা। ভারতে খুব বেশি পার্থক্য নেই। বাংলাদেশের গল্পটা আবার ভিন্ন। ২০০৮-০৯ সালে ৫৭ ভাগ ক্রিকেটার তিন সংস্করণের ম্যাচ খেলতেন। ২০১৩-১৪ সালে সংখ্যাটা বাড়ে (৭৪ ভাগ)। গত কয়েক বছরে নেমে এসেছে ৬১ ভাগে।

বিশ্ব ক্রিকেটের চেহারা যে পাল্টে যাচ্ছে, সেটা আঁচ করা যায় ওপরের পরিসংখ্যানে। যেমন ডেভিড ওয়ার্নারের কথাই ধরুন। মাত্র ৩৩ বছর এই অস্ট্রেলীয় ওপেনারের। এখনই তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে চাইছেন। এমনিতেই দেশের হয়ে খুব বেশি ২০ ওভারের ম্যাচ খেলা হয় না তাঁর। অথচ ওয়ার্নারের উত্থান কিন্তু এই টি-টোয়েন্টি দিয়েই।

ওয়ার্নারের মতো তিন সংস্করণ খেলা ক্রিকেটারই কমে আসছে সব দেশে। টেস্ট ও সাদা বলের বিশেষজ্ঞে ভাগ হচ্ছেন ক্রিকেটাররা। আবার যাঁরা তিন সংস্করণে খেলছেন, তাঁরাও খেলছেন বেছে বেছে। বিরাট কোহলি যেমন টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে থেকে বিশ্রাম নিয়ে খেলেন। মিচেল স্টার্ক তো বিশ্বকাপ ছাড়া সাদা বলের ক্রিকেটই খেলেননি গত কিছুদিন। টেস্ট ক্রিকেটের জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে রাখেন এই অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার। বাংলাদেশ মোস্তাফিজুর রহমানকে খেলায় শুধুই সাদা বলের ক্রিকেটে। টেস্টের জন্য আছেন আবু জায়েদ, ইবাহত হোসেনরা। তাঁরা আবার নেই সাদা বলের পরিকল্পনায়। কে জানে, ক্রিকেটারদের এই মেরুকরণ হয়তো সামনে আরও দেখা যাবে। ভবিষ্যতে হয়তো তিন সংস্করণের ক্রিকেট খেলা একজন মুশফিক খুঁজে বের করাও কঠিন হবে।