সুখস্মৃতিও উজ্জীবিত করতে পারছে না বাংলাদেশকে!

২০১২ এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়। অথচ বাংলাদেশের কাছে মনে হচ্ছে সেসব কত আগের স্মৃতি! ফাইল ছবি
২০১২ এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়। অথচ বাংলাদেশের কাছে মনে হচ্ছে সেসব কত আগের স্মৃতি! ফাইল ছবি

অতীতের সুখস্মৃতিও এই মুহূর্তে দলকে উজ্জীবিত করতে পারছে না। দুঃখজনক হলেও বাংলাদেশের দলের অবস্থা এখন এমনই। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে অনেকভাবেই পুরোনো স্মৃতি নিয়ে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। কিন্তু মাশরাফি সে সবের ধারকাছ দিয়েও গেলেন না। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিনটি জয়ের দুটোর সেরা খেলোয়াড় মাশরাফির কাছে ওসব ব্যাপার কেবলই ‘অতীত’ হয়ে থাকল। ভবিষ্যত্ নির্মাণের কোনো প্ররোচনা হিসেবে কাজ করল না। ব্যাপারটা বোধগম্য। এতটা বাজে ক্রিকেট যে বাংলাদেশ অনেক দিন খেলে না!

২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ‘ভারত-বধের’ স্মৃতি মাশরাফিকে এতটুকু আন্দোলিত করল না, ‘দেখুন ওটা সাত বছর আগের ব্যাপার। কাল একটা নতুন দিন। কালকের ম্যাচে মাঠে গিয়ে আমাদের যতটা সম্ভব ভালো খেলতে হবে। ভালো না খেললে অতীতের কথা তুলে লাভ নেই।’

গত দুই ম্যাচে দলের ব্যাটিংয়ের যে অবস্থা, তাতে কাল দারুণ ফর্মে থাকা ভারতীয় স্পিনারদের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংটা কেমন হবে, এ নিয়ে শঙ্কাটা বেড়াচ্ছে চারদিকে। মাশরাফির মধ্যে শঙ্কাটা থাকলেও সেটা প্রকাশ করলেন অন্যভাবে, ‘গত দুটো ম্যাচে আমাদের ব্যাটসম্যানরা উইকেটে গিয়ে থিতু হতে হতেই আউট হয়ে গেছে। ভারতীয় বোলাররা দারুণ ফর্মে আছে। আসলে এসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। আমাদের ব্যাটসম্যানদের মাঠে গিয়ে থিতু হয়েই খেলতে হবে। ওদের স্পিনাররা কেমন ফর্মে আছে, দারুণ বোলিং করছে কি করছে না, এসব নিয়ে ভেবে কোনো ফায়দা নেই। মাঠে গিয়ে ভালো খেলতে হবে—মূলমন্ত্র হতে হবে এটাই।’

সংবাদ সম্মেলনে উঠেছে বিসিবি সভাপতির সাম্প্রতিক হুমকিও। বিশেষত দলের এমন পারফরম্যান্সে খেলোয়াড়দের ‘বকাবকি’ করার প্রসঙ্গটি। কোড অব কন্ডাক্টের নিগড়ে বাঁধা মাশরাফি অবশ্য স্বভাবতই ওসব নিয়ে কোনো মন্তব্যে যাননি। বিশ্বকাপের মতো আসর চলাকালীন বিসিবি সভাপতির এমন মন্তব্য ঠিক না বেঠিক, সেই বিতর্কে না গিয়ে মাশরাফি বরং উল্লেখ করেছেন এর প্রাসঙ্গিকতাই, ‘দল যে ধরনের খেলা খেলছে, তাতে এমন কিছুই স্বাভাবিক। বোর্ড সভাপতি আমাদের ডেকে সে বিষয়েই বলেছেন। বকাবকি হয়তো করেননি। কিন্তু আমাদের বুঝিয়েছেন। তিনি এটা করতেই পারেন।’

এই তো কিছু দিন আগেও বাংলাদেশ দল যেকোনো ম্যাচের আগেই ‘জয়ের কথা’ বলত। উজ্জীবিত ক্রিকেটাররা থাকতেন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ, এশিয়া কাপ আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুটো ম্যাচই বদলে দিয়েছে সব দৃশ্যপট। ব্যাপারটা নিয়ে মাশরাফির ভাবনা অবশ্য তেমনটি নয়। ‘আমরা এখনো জয়ের জন্যই খেলব। মূল ব্যাপারটা হলো লড়াই। আগে আপনাকে লড়াই করতে হবে। লড়াই করলেই জয়ের ব্যাপারটি আসবে। আমরা সর্বশেষ দুটো ম্যাচ খুব বাজেভাবে হেরেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি নিজেদের খেলাটা খেলতে পারি, তাহলে জেতাটা অসম্ভব কিছু নয়। তবে আমরা যেভাবে শেষ দুটো ম্যাচ খেলেছি, সেভাবে খেললে জয়ের কথা ভাবাও উচিত নয়।’

এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ভালো ব্যাটিংয়ের ব্যাপারটি এই মুহূর্তে চর্বিত-চর্বন করে লাভ নেই বলেই মনে করেন মাশরাফি, ‘এশিয়া কাপ ছিল ৫০ ওভারের খেলা। এটা টি-টোয়েন্টি। ব্যাটসম্যানরা ভালো ফর্মে নেই। তবে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে নেমেই শট খেলতে হয়। ব্যাটসম্যানরা সময় পায় না। আমাদের যেটা দরকার সেটা হলো ভালো শুরু। শুরুটাই তো আমাদের ভালো হচ্ছে না।’

দলের এই বিপর্যস্ত অবস্থা উত্তরণের জন্য দলের খেলোয়াড়দের করণীয় কেবলই ‘চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া’ বলে মনে করেন মাশরাফি। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মনে করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলাগুলো এত দ্রুত একটার পর একটা চলে আসে, সেখানে নতুন কিছু চেষ্টা করার সুযোগ খুব কম, ‘খেলোয়াড়েরা বেশি বেশি করে অনুশীলন করছে। ভুলগুলো নিয়ে ভাবছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি হারানো আত্মবিশ্বাসটা ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য। একটা দল তখনই বাজেভাবে হারে, যখন তাদের আত্মবিশ্বাস থাকে না। আমাদের অবস্থাটা এখন তেমনই। এই অবস্থায় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কী ই বা করার আছে! কারণ, এই মুহূর্তে ব্যাটিং বা বোলিংয়ে নতুন কিছু শেখার যথেষ্ট সময় আমাদের হাতে নেই।’