শেখ রাসেলের লঙ্কাজয়

সতীর্থের সঙ্গে প্যাসকেলের (ডানে) গোল উদ্যাপনটা একটু অন্যরকমই হওয়া উচিত ছিল । শেখ রাসেলকে প্রেসিডেন্টস কাপের চূড়ান্ত পর্বে তুলে বড় অবদান রেখেছেন যে হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড৷ কাল কলম্বোর সুগাথাদাসা স্টেডিয়ামে । সৌজন্য ছবি
সতীর্থের সঙ্গে প্যাসকেলের (ডানে) গোল উদ্যাপনটা একটু অন্যরকমই হওয়া উচিত ছিল । শেখ রাসেলকে প্রেসিডেন্টস কাপের চূড়ান্ত পর্বে তুলে বড় অবদান রেখেছেন যে হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড৷ কাল কলম্বোর সুগাথাদাসা স্টেডিয়ামে । সৌজন্য ছবি

শ্রীলঙ্কা বিমানবাহিনী দলকে ৫ গোলে উড়িয়েই কলম্বো জয় করে ফেলেছিল শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। ভুটানের উগেন একাডেমিকে কাল ৪ গোলে বিধ্বস্ত করে বাংলাদেশের লিগ চ্যাম্পিয়নরা গড়ে ফেলল ইতিহাস। বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে এএফসি প্রেসিডেন্টস কাপের চূড়ান্ত পর্বে শেখ রাসেল। তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই এল এই অর্জন।
কলম্বোর সুগাথাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথমার্থেই ৩ গোলে এগিয়ে যায় শেখ রাসেল৷ তাই দ্বিতীয়ার্ধে একটু দুলকি চালে খেলেছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে ‘জিতেই গেছি’ মনোভাব চলে আসায় দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় ধার ছিল না তেমন। ১৩ মিনিটে মিঠুনের পাস থেকে প্রথম গোল করেন কলম্বো মিশনে অন্যতম সফল খেলোয়াড় প্যাসকেল। এই দুজনের সমন্বয়েই ২০ মিনিটে আসে দ্বিতীয় গোল। এবার প্যাসকেলের পাসে মিঠুনের গোল। ৩৫ মিনিটে শাকিল ৩-০ করে গড়ে দেন ম্যাচের ভাগ্য৷
দ্বিতীয়ার্ধে ভুটানের দলটি বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছিল। বার তিনেক শেখ রাসেলকে বিপদমুক্ত করেন গোলরক্ষক ও অধিনায়ক বিপ্লব। পোস্টের নিচে ব্যস্ত সময় কাটিয়ে ৮৩ মিনিটে দেখলেন দলের চতুর্থ গোল, যেটি করেছেন মিঠুন। টুর্নামেন্টে ৪ গোল করে আলাদা করে নজর কেড়েছেন এই স্ট্রাইকার।
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিমানবাহিনী । শেখ রাসেলের কাছে বিধ্বস্ত হওয়া দলটি খান ল্যাবরেটরিজকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ৩-০ গোলে। ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে তারাও গেল চূড়ান্ত পর্বে।
আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় ওই পর্বেই চোখ রাখছেন শেখ রাসেল অধিনায়ক বিপ্লব, ‘চূড়ান্ত পর্বে ভালো করতে আরও ভালো প্রস্তুতি চাই।’ এমন একটা মুহূর্তে বাংলাদেশের সাবেক এক নম্বর গোলরক্ষক নিরাবেগ থাকতে পারলেন না, ‘এটা বাংলাদেশের ফুটবলেরই জয়। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের ভালোবাসা ও প্রত্যাশার মান রাখতে পারাটাই আমাদের কাছে বেশি আনন্দের।’ শ্রীলঙ্কায় অবস্থানরত শেখ রাসেলের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরীও খুব আনন্দিত, ‘এটা আমাদের আরও উদ্বুদ্ধ করবে।’ দিলেন চূড়ান্ত পর্বে ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও, ‘চূড়ান্ত পর্বের জন্য করণীয় সবই করব আমরা।’ চূড়ান্ত পর্ব ওঠার জন্যই দলকে তাৎক্ষণিকভাবে ১০ হাজার ডলার বোনাস দিয়েছেন দলের প্রধান।
তবে চূড়ান্ত পর্বে উঠেই কোচ দ্রাগান দুকানোভিচ আনন্দে গা ভাসাতে রাজি নন, ‘ছেলেদের এই পারফরম্যান্সে আমি খুশি। কিন্তু দেশে ফিরে এই খেলাটা ধরে রাখার ওপরই নির্ভর করবে আমাদের পথচলা।’ শেখ রাসেলের এই পারফরম্যান্স জাতীয় দলের কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফকেও খুশি করেছে। হল্যান্ড থেকে কোচের কণ্ঠে ধরা পড়ল উচ্ছ্বাস, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন অর্জন বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলে অবশ্যই শুভফল আনবে।’
এটা সবারই মনের কথা। কেননা, আশির দশকে এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে মোহামেডান দুবার গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে চূড়ান্ত রাউন্ডে যাওয়ায় পর এত দিন বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর এমন অর্জন ছিল না । আবাহনী প্রেসিডেন্টস কাপে পাঁচবার খেলেও গ্রুপের গেরোই খুলতে পারেনি। শেখ জামাল এই টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেয়েও নিরাপত্তাকে কারণ দেখিয়ে পাকিস্তানে খেলতে যায়নি।
সেসব ব্যর্থতার অধ্যায় শেষে নিজেদের প্রথম প্রেসিডেন্টস কাপেই বাজিমাত করল শেখ রাসেল।