রক্তে ব্রাজিল, হৃদয়ে ক্রোয়েশিয়া

এদুয়ার্দো
এদুয়ার্দো

স্বপ্নটা সত্যি হতে আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। রিও ডি জেনিরোর গলিতে, মাঠে সারা দিন ফুটবল নিয়ে মেতে থাকত যে কিশোর, অবশেষে সে বিশ্বকাপে!
ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া উদ্বোধনী ম্যাচেই মাঠে নামার সম্ভাবনা। চেনা পরিবেশ, হয়তো থাকবে অনেক চেনা মুখও। কল্পনার চোখে এমন অভিষেকের মঞ্চই তো সব সময় দেখে এসেছেন এদুয়ার্দো।
কিংবা দেখেননি। গায়ের জার্সিটা যে তাঁর কল্পনার সঙ্গে মিলছে না। ব্রাজিলের জার্সি গায়ে অভিষেকের স্বপ্ন ছিল, তার বদলে তিনি মাঠে নামবেন ক্রোয়েশিয়ার জার্সি পরে। যেখানে তাঁর নাড়ি পোঁতা, যার আলো-হাওয়ায় তিনি বেড়ে উঠেছেন, তাঁকে ফুটবল শিখিয়েছে যে দেশ, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই তিনি সে দেশের প্রতিপক্ষ! কল্পনার চোখে দৃশ্যটা দেখতে কেমন লাগছে ব্রাজিল বংশোদ্ভূত ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকারের?
‘ব্যাপারটা যে আমার কাছে অস্বাভাবিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একজন ব্রাজিলিয়ান হয়ে নিজের দেশে বিশ্বকাপ খেলছি কিন্তু অন্য দেশের জার্সি গায়ে! তবে আমি এটাকে দেখছি সুযোগ হিসেবে’—ফিফা ডট কমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অনুভূতিটা জানালেন এদুয়ার্দো। কাঙ্ক্ষিত সেই সুযোগটা পাচ্ছিলেন না বলেই জন্মভূমি ছেড়ে শেষ পর্যন্ত ক্রোয়েশিয়ার হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এক যুগ আগে। এদুয়ার্দোর ক্যারিয়ারের তখন সবে শুরু। ব্রাজিল দলে তখনো রোনালদো-রোনালদিনহোদের রাজত্ব। তার পরে এলেন রবিনহো, ফ্যাবিয়ানো, আদ্রিয়ানো আর নিলমাররা। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ব্যাঙ্গো অ্যাটলেটিকো থেকে ক্রোয়েশিয়ার ডায়নামো জাগরেবে গিয়ে এদুয়ার্দো নজর কাড়লেন অনেকের। কিন্তু সেটা রবিনহো-ফ্যাবিয়ানোদের পাশে জায়গা পাওয়ার মতো হলো না। এদুয়ার্দোও তখনই বুঝে গিয়েছিলেন ব্রাজিল দলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা মানে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটাকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেওয়া। তত দিনে ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পেয়ে গেছেন। সে দেশের হয়ে খেলার ইচ্ছে প্রকাশ করার পর আর বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০০৪ সালের নভেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো এদুয়ার্দোর।
পথচলাটা অবশ্য শুরুতে এত মসৃণ ছিল না। জাগরেবের হয়ে পারফর্ম করেও দুই বছর পরে ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাননি। কারণ হিসেবে তখনকার ক্রোট কোচ জ্লাতকো ক্রানিচার যুক্তি দেখান—বয়স কম, যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। চার বছর পর ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রোয়েশিয়াই থাকল দর্শক হয়ে। বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন তাই অধরাই থেকে গেল এদুয়ার্দোর। অবশেষে ৩১ বছর বয়সে সেই স্বপ্ন এবার এভাবে সত্যি হতে যাচ্ছে, যা দূরতম কল্পনাতেও ছিল না সাবেক আর্সেনাল স্ট্রাইকারের!
বিশ্বকাপের অপেক্ষাতেই তাঁর সেরা সময়টা পেছনে চলে গেছে। ৬২ ম্যাচ ২৯ গোল নিয়ে ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পরও তাই ইদানীং দলে অনিয়মিত তিনি। তবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটায় নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারবেন না ক্রোট স্ট্রাইকার মারিও মানজুকিচ। ব্রাজিলের বিপক্ষে তাই একাদশে থাকার সম্ভাবনাও বেশ উজ্জ্বল। স্বপ্নপূরণের দুয়ারে দাঁড়িয়ে তাই আবেগাপ্লুত এদুয়ার্দো, ‘আমার জন্য এটা যে কী কঠিন পরিস্থিতি! শরীরে ব্রাজিলের রক্ত, কিন্তু হৃদয়টা এখন ক্রোয়েশিয়ার। যদি দুটি দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ারই সুযোগ পেতাম!’ ওয়েবসাইট।