জবাবটা মাঠেই দেবেন মুশফিক

মুশফিকুর রহিম
মুশফিকুর রহিম

মুশফিকুর রহিম এবার আইপিএলের খেলা মোটামুটি নিয়মিত দেখেছেন৷ অক্ষর প্যাটেল, কেদার যাদব, পারভেজ রসুলদের তাই চেনেন৷ খানিক ধারণাও আছে এঁদের নিয়ে৷ কিন্তু বাংলাদেশ দলের আর প্রায় সবার কাছেই নামগুলো খুব পরিচিত নয়৷ ভারতীয় দল দেখে মুশফিকের দলের বেশির ভাগেরই প্রথম প্রতিক্রিয়া—এ কোন ভারত!
গত বছরই জিম্বাবুয়েতে কথা রাখতে সিরিজ খেলতে গিয়েছিল ভারত৷ মহেন্দ্র সিং ধোনি যাননি, ছিলেন না রবিচন্দ্রন অশ্বিন৷ তার পরও দলটিকে দ্বিতীয় সারির বলা যায়নি৷ বিরাট কোহলির নেতৃত্বে দলটিতে ওই দুজন ছাড়া নিয়মিত আর সবাই ছিলেন৷ ২০১০ সালেও এমন একটা জিম্বাবুয়ে সফরে যেতে ‘বাধ্য’ হয়েছিল ভারত৷ সেবার যাননি ধোনি-টেন্ডুলকার-শেবাগ-গম্ভীররা৷ তবে সুরেশ রায়নার নেতৃত্বে সেই দলে কোহলি-জাদেজা-রোহিত-অশ্বিনরা ছিলেন৷ কিন্তু এবার রায়নার নেতৃত্বে যে দলটি আসছে বাংলাদেশে, সেটিকে বাড়িয়ে বললেই দ্বিতীয় সারির দল বলা যায়!
ব্যক্তিগত ছুটি কাটিয়ে কালই অনুশীলনে যোগ দিয়েছেন মুশফিক৷ এর আগে প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন দিন কয়েক৷ শরীর এখনো খানিকটা দুর্বল৷ তার পরও কাল ঘণ্টা খানেক ব্যাটিং করেছেন৷ প্রচণ্ড গরমে ঘেমেনেয়ে একাকার৷ ভারতীয় দলের প্রসঙ্গ পাড়তেই ঘাম মুছতে মুছতে শক্ত করলেন চোয়াল, ‘ভাবিনি ওরা আমাদের এত হালকাভাবে নেবে৷ যা-ই হোক, আশা করি জবাবটা মাঠেই দেব৷ মাঠের চেয়ে ভালো জবাব তো আর হতে পারে না৷’
সন্দীপ পাতিলের নির্বাচক বাহিনী তাহলে ভালোই আহত করেছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে! আর নির্বাচকেরা আসলে বিসিসিআই কর্তাদেরই নির্দেশ মেনেছেন৷ এফটিপিতে থাকলেও তিন ম্যাচের এই সিরিজটি নিশ্চিত ছিল না৷ আনুষ্ঠানিকভাবে না বলা হলেও বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্ব ক্রিকেটের সাম্প্রতিক পালাবদলে তিন মোড়লকে সমর্থনের একটি বিনিময়মূল্য এই সিরিজ৷ পুরস্কারটা দায়সারা, আর তাতে খুশি হওয়ার কারণ নেই৷ সেই চাপা অসন্তোষের হাওয়া বইছে টিভি সম্প্রচারকারী সংস্থা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গোটা ক্রিকেট মহলেই৷ অধিনায়কের কথায় সেই বারুদের ঝাঁজ, ‘কোন দলের বিপক্ষে খেলছি, সেটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা নিজেদের সেরাটা কতটা দিতে পারছি। গত ২-৩ মাস আমাদের ভালো কাটেনি৷ যদি সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়ে একটা দল হিসেবে খেলতে পারি, আমার ধারণা ধোনি বা কোহলি যে-ই আসত, আমরা জিততে পারতাম। ওদের সেরা দলকেও তো আমরা বেশ কবারই হারিয়েছি৷’
অসন্তোষ বা ক্ষোভ যতই থাকুক, বলার অপেক্ষা রাখে না চাপ এখন বাংলাদেশের ওপর৷ অনেকটা দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের মতো অবস্থা, পাওয়ার চেয়ে যেখানে হারানোর ভয় বেশি৷ বাস্তবতা স্বীকার করে মুশফিক চাপের কিছুটা ফিরিয়ে দিতে চাইলেন প্রতিপক্ষের ওপরও, ‘নামের কথা বললে ওদের বড় ক্রিকেটাররা আসছে না। তার মানে এই নয় যে দল একেবারে খারাপ। ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্মে থাকাদের নিয়েই গড়া হয়েছে৷ বেশ ব্যালান্সড দল৷ তবে এটাও সত্যি যে আইপিএল আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এক নয়৷ যে দলই ওরা পাঠাক, হারলে কিন্তু ভারতই হারবে, ভারত ‘এ’ দল হারবে না। ওদের ওপরও তাই চাপ থাকবে৷’
প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ চাপটাকেই অনুপ্রেরণা করে নিতে বলছেন মুশফিকদের, ‘চাপের চেয়ে আত্মবিশ্বাসই বেশি থাকা উচিত ছেলেদের৷ ওয়ানডেটাই আমরা সবচেয়ে ভালো খেলি৷ সেরাটা খেললে এই দলকে হারাতে সমস্যা হবে না, এই বিশ্বাসটা সবার থাকা উচিত৷’
মুশফিক অবশ্য সঙ্গে বাড়তি একটা অনুপ্রেরণাও খুঁজে নিয়েছেন, ‘ওরা এখনো আমাদের ওদের দেশে ডাকেনি৷ আমরা যদি এই সিরিজটা খুব ভালো করি, একটা বার্তা অন্তত দেওয়া হবে৷’
এবার কণ্ঠের এই ঝাঁজ আর প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন মাঠে দেখার অপেক্ষা!