ফোন করার টাকাও ছিল না তাঁর

একটি টুর্নামেন্টের ট্রফি হাতে ১২ বছর বয়সী রদ্রিগেজ
একটি টুর্নামেন্টের ট্রফি হাতে ১২ বছর বয়সী রদ্রিগেজ

এই বিশ্বকাপের তিনি ‘পোস্টার বয়।’ কলম্বিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা বেশ কয়েক বছর ধরেই। দেশটির ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয় দামি ফুটবলার। পোর্তো থেকে গত বছর মোনাকো কিনেছে সাড়ে চার কোটি ইউরোতে। বিশ্বকাপের পরই হয়তো টাকার বস্তা নিয়ে পেছনে ছুটবে রিয়াল মাদ্রিদ। অথচ একসময় বাবা-মার কাছে ফোন করার টাকাও ছিল না হামেস রদ্রিগেজের!
গল্পটা আর বেশির ভাগ লাতিন মহাতারকার মতোই। ওই পাড়ার মাঠ, অলিগলি, রাস্তায় খেলে বেড়ে ওঠা আর শৈশবের জীবনযুদ্ধ। নিজ শহরের ক্লাব এনভিগাদোর স্কাউটদের নজরে পড়েছিলেন সেই ছেলেবেলাতেই। ফুটবলের প্রাতিষ্ঠানিক পাঠও এই ক্লাবে। আরও বড় কিছুর আশায় কৈশোরেই পাড়ি জমিয়েছিলেন আর্জেন্টিনায়। কলম্বিয়ার এক টিভি শোতে শোনাচ্ছিলেন সেই সময়ের গল্প, ‘১৫ বছর বয়সে গিয়েছিলাম বুয়েনস এইরেসে, একাই। টাকাপয়সা খুব বেশি হাতে থাকত না তখন। দেশে যখন বাবা-মাকে ফোন করতাম, এক-দু মিনিট কথা বলতে পারতাম। কথা বলতে বলতেই ফোন কেটে যেত, টাকা নেই। কী যে কষ্ট লাগত! ভীষণ মিস করেছি বাবা-মা, পরিবারকে। খুব কঠিন সময় ছিল তখন। কিন্তু সহ্য করে গিয়েছি। জীবনে বড় কিছু হতে হলে ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।’
বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন চোখে এঁকেই জিতেছেন সেই কঠিন সময়টার সঙ্গে যুদ্ধে। ফুটবলটা পায়ে পেলে ভুলে যেতেন সব, ‘ছোট্টবেলা থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার মনে করতে পারি, সব সময়ই বল নিয়ে থাকতে চাইতাম। সব সময় ফুটবল খেলা নিয়ে ভেবেছি। যা কিছুই করি, সবকিছুই ছিল ফুটবল নিয়ে।’
সেই ফুটবল পুজোর প্রতিদান পেয়েছেন সময়ে। আর্জেন্টিনায় গিয়েছিলেন বড় কোনো ক্লাবের নজর কাড়ার স্বপ্ন নিয়ে। বছর দুয়েকের মধ্যেই ছুঁয়ে ফেলেন স্বপ্ন। জায়গা হয় আর্জেন্টাইন ক্লাব ব্যানফিল্ডে। বুয়েনস এইরেসের ক্লাবটিতে খেলার সময় নাম পেয়ে যান ‘ব্যানফিল্ডের জেমস বন্ড’। দুই বছর পর পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তো কিনে নেয় ৫০ লাখ ইউরোতে। তিন বছর পর সেই রদ্রিগেজকে দিয়েই মোনাকোর কাছ থেকে পোর্তো আদায় করে নেয় ৯ গুণ বেশি অর্থ! ২০১১ সালে ডাক পান জাতীয় দলে। বছর খানেক ধরেই দেশে, দেশের বাইরে নানা সময়ে নানা প্রসঙ্গে বারবার বলেছেন বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নের কথা। সেই স্বপ্নের টুর্নামেন্টে এসে ছাড়িয়ে গেছেন স্বপ্নকেও। এখন তিনি বিশ্বতারকা। ব্যানফিল্ডে খেলার সময় তাঁর ক্ষিপ্রতা, স্কিল ও গতি দেখে অনেকে তুলনা করতেন তরুণ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে। সেই রোনালদোর সঙ্গে খেলার সুযোগ মিলতে পারে আসছে মৌসুমেই।
আজ ব্রাজিলকে হারাতে পারলে নতুন উচ্চতায়। না পারলেও খুব ক্ষতি নেই। এই বিশ্বকাপের বিস্ময় হয়েই থাকবেন রদ্রিগেজ। তথ্যসূত্র: ইয়াহু স্পোর্টস, মেইল অনলাইন।