ফেবারিট-তত্ত্বের বিপর্যয়েও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা

ব্রাজিল বিশ্বকাপ যেন ফেবারিট–তত্ত্বকে প্রায় বিদায় করে দিয়েছে। ফেবারিটদের পক্ষে এবার বাজি ধরা ঝুঁকিপূর্ণ। কে কখন কার কাছে হারবে, তা অনুমান করা একেবারেই কঠিন।
কে ভেবেছিল হল্যান্ডের কাছে স্পেন পাঁচ গোলে উড়ে যাবে! কোস্টারিকা হারিয়ে দেবে ইতালিকে! জার্মানি-ঘানা ২-২, চিলির কাছে স্পেনের হার ২-০, কলম্বিয়া ২-০ গোলে হারাল উরুগুয়েকে—কেউই এসব ভাবেনি নিশ্চয়ই। সব দিক দেখে মনে হচ্ছে, অনিশ্চয়তার পাখাই মেলে ধরেছে পেলের দেশের বিশ্বকাপ। সাধারণ হিসাব যদিও বলছে, ফুটবল ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ দেশগুলোই শেষ আটের লড়াইয়ে ফেবারিট। তার পরও ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি এবং হল্যান্ড চিন্তার চোরাস্রোতেই হাবুডুবু খাচ্ছে।
কলম্বিয়া-বাধা পার হওয়া ব্রাজিলের জন্য কঠিন বলছেন অনেকে। আমিও একমত। কলম্বিয়া দুরন্ত একটা দল। হামেস রদ্রিগেজ যেকোনো কিছু করতে পারেন। যেভাবে গতি আর স্কিলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে খেলে এসেছে কলম্বিয়া, সবারই শ্রদ্ধা কুড়িয়েছে। এটা মনে রেখেও ব্রাজিলকে এগিয়ে না রেখে উপায় নেই। ব্রাজিল যদি ব্রাজিলের মতো খেলতে পারে, কলম্বিয়া পারবে না। কিন্তু নিজেদের সামর্থ্যের ষোলো আনা মাঠে এখনো অনুবাদ করতে পারেনি স্কলারির দল। এ জন্যই যত ভয়। তবে আশা করছি, ব্রাজিল জ্বলে উঠবে আজ এবং সেমিফাইনালে যাবে।
সেটা না হলে রং হারাবে বিশ্বকাপ। ঘরের দল না থাকা মানে বিশ্বকাপের মজা অনেকটাই শেষ। এটা ঠিক, ব্রাজিল বিশ্বকাপে একের পর এক চমক দেখিয়ে এসেছে। তাই আগাম মন্তব্য করতে সতর্ক থাকতে হয়। দলগুলোর শক্তি যেহেতু উনিশ-বিশ, নির্দিষ্ট দিনে হিসাব পাল্টে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কলম্বিয়ার অঘটন ঘটানোর সামর্থ্য আছে। এই বিশ্বকাপের যা গতি-প্রকৃতি, দুরন্ত কলম্বিয়া জিতে গেলে হয়তো অনেকে অবাক হবেন না। তার পরও আমি বলব, কলম্বিয়ার বিপক্ষে কাগজ-কলমের হিসাব ব্রাজিলের পক্ষেই কথা বলছে। ব্রাজিল হারলে সেটাকে অঘটনই বলব।
ফেবারিট তত্ত্বের বিদায়ের এই বিশ্বকাপ ফ্রান্স-জার্মানির দুর্ধর্ষ একটা লড়াই-ই দেখবে মনে হচ্ছে। জার্মানির পাল্লা একটু ভারী। তবে ফ্রান্স কঠিন লড়াই দেবে সন্দেহ নেই। ম্যাচটা তাই খুবই আকর্ষণীয় হওয়ার কথা। এমন ম্যাচে কী ঘটে, বলা মুশকিল। আমরা কেবল ফুটবলীয় অঙ্ক কষে একটা ধারণা করতে পারি। তাতে দেখা যাচ্ছে, আগের সেই যান্ত্রিক ফুটবল খেলার অপবাদ থেকে জার্মানি বেরিয়ে এসেছে। বল পায়ে রাখছে, প্রচুর পাস খেলছে, যা তাদের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক।
আর্জেন্টিনাকে আটকাতে নিজেদের সেরা ফুটবলের চেয়েও আরও ভালো খেলতে হবে বেলজিয়ামকে। সেটা পারবে কি না তারা, দেখার অপেক্ষায় রইলাম। বেলজিয়াম সে অর্থে বড় দল নয়। তবে চমক দেখানোর যোগ্যতা রাখে। সেটা মনে রাখার পরও বলব, মেসি যেমন ছন্দে আছে, সঙ্গে ডি মারিয়াও—এই আর্জেন্টিনাকে থামানো বেলজিয়ামের পক্ষে বেশ কঠিন। ডি মারিয়া চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ভালো খেলেছেন। সেই ফর্মটা আস্তে আস্তে ফিরে পেয়েছেন বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনার জন্য যা সুখবর।
কোস্টারিকার বিপক্ষে হল্যান্ড পরিষ্কার ফেবারিট। সমস্যা একটাই, কমলা জার্সিধারীদের ‘চোক’ করার অভ্যাস আছে। শেষ মুহূর্তে গিয়ে আর পারে না। তিন-তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে শিরোপার স্বাদ না পাওয়ার হতাশা এবার ঘোচাতে পারে ওরা, যদি চোক না করে। সেই অভিযানে কোস্টারিকা-বাধা পেরোনো লুই ফন গালের দলের জন্য তুলনামূলক সহজ। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির তুলনায় তাদের জয়টা তাই একটু বেশিই প্রত্যাশিত।
ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, হল্যান্ড—শেষ আটের লড়াইয়ে আমার ফেবারিটের তালিকাটা দাঁড়াল এমন। কিন্তু ফেবারিট তকমার মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া দেখে উচ্চস্বরে নামগুলো উচ্চারণ করতে পারছি না, পার্থক্য এই!